ঢাকা, শনিবার, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৪ জুন ২০২৫, ১৭ জিলহজ ১৪৪৬

জাতীয়

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অংশগ্রহণে বাধ্য করার চক্রের হোতা গ্রেপ্তার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩:৩৭, জুন ১৩, ২০২৫
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অংশগ্রহণে বাধ্য করার চক্রের হোতা গ্রেপ্তার গ্রেপ্তার মুহাম্মদ আলমগীর হোছাইন

ঢাকা: আকর্ষণীয় বেতনের কাজের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ না দিয়ে, সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য বাধ্য করতো এমন চক্রের হোতাকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডির টিএইচবি (মানব পাচার প্রতিরোধ) শাখা।  

অভিযুক্ত মুহাম্মদ আলমগীর হোছাইনকে (৪০) গত ১২ জুন চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

শুক্রবার (১৩ জুন) আদালতে সোপর্দ করা হলে অভিযুক্ত মুহাম্মদ আলমগীর হোছাইন আদালতে ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

সিআইডি প্রাথমিকভাবে জানতে পারে যে, এ চক্রের সদস্যরা রাশিয়ায় মাসে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা বেতনে চকলেট ফ্যাক্টরি, ক্লিনার অথবা বাবুর্চির কাজের প্রলোভন দেখিয়ে ১০ জনকে প্রথমে ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরব পাঠায়। সেখানে তাদেরকে ওমরাহ হজ করানোর পর রাশিয়ায় নিয়ে গিয়ে এক সুলতানের কাছে বিক্রি করে দেয়। সুলতান তাদেরকে দাস হিসেবে রাশিয়ান সেনাদের কাছে হস্তান্তর করে।  

সেখানে তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য বাধ্য করে। এতে অনিচ্ছা প্রকাশ করলে তাদেরকে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করা হয়। খাবার বন্ধ করে দেওয়ার মাধ্যমে তাদের মানসিক শক্তি ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। পরবর্তীতে তারা বাধ্য হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।

যুদ্ধে নাটোর সিংড়া থানার হুমায়ুন কবির নামে এক ব্যক্তি নিহত এবং ঢাকা কেরানীগঞ্জের আমিনুল নামে একজন গুরুতর আহত হয়।  

আগের ১০ জনের মধ্যে একজন নরসিংদীর পলাশ থানার বাসিন্দা মো. আকরাম হোসেন (২৪) প্রশিক্ষণ শেষে ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যান। পরবর্তীতে তিনি নিজ ব্যবস্থাপনায় গত ২৬ জানুয়ারি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। ফিরে এসে তিনি ভুক্তভোগী অন্যদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার কাছ থেকে তথ্য পেয়ে যুদ্ধাহত আমিনুলের স্ত্রী (ঝুমু আক্তার) বনানী থানায় মামলা করেন।  

তদন্তকালীন সিআইডি আরও জানতে পারে যে, একইভাবে ১০ জনের আরেকটি দল সৌদি আরবে অবস্থান করছে। রাশিয়া নিয়ে গিয়ে জোর করে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করানোর বিষয়ে জানাজানি হওয়ায়, তারা রাশিয়া যেতে অস্বীকার করেছে এবং তাদের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাই তারা সৌদি আরবে কোনো কাজ করতে পারছে না এবং দেশে ফিরতেও পারছে না।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে নেপালে পালিয়ে যাওয়ার সময় মানব পাচারকারী চক্রের অন্যতম সদস্য ফাবিহা জেরিন তামান্নাকে সিআইডির টিএইচবি শাখার একটি টিম শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার ফাবিহা জেরিন তামান্না ড্রিম হোম ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেডের অংশীদার।
 
সিআইডি ভুক্তভোগীদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করছে। একই সঙ্গে মানব পাচারের এ নেটওয়ার্ক পুরোপুরি ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি নিবিড় তদন্ত এবং গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা হয়েছে।

শুক্রবার (১৩ জুন) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন গণমাধ্যমকে বিষয়গুলো নিশ্চিত করেন।

এজেডএস/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।