ঢাকা, সোমবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২, ১২ মে ২০২৫, ১৪ জিলকদ ১৪৪৬

জাতীয়

কাপ্তাই লেকে কার্পজাতীয় মাছের নতুন প্রজননক্ষেত্র চিহ্নিত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১:৩১, মে ১২, ২০২৫
কাপ্তাই লেকে কার্পজাতীয় মাছের নতুন প্রজননক্ষেত্র চিহ্নিত

ঢাকা: কাপ্তাই লেকে কার্পজাতীয় মাছের পঞ্চম প্রজনন ক্ষেত্রের সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি লংগদু উপজেলার কাসালং চ্যানেলের মালাদ্বীপ মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় একটি নতুন প্রজননক্ষেত্র চিহ্নিত হয়।

এর আগে এ লেকে কার্পজাতীয় মাছের চারটি প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র চিহ্নিত ছিল। এগুলো হলো- কাসালং চ্যানেলে মাইনীমুখ মাস্তানের টিলা সংলগ্ন এলাকা, কর্ণফুলী চ্যানেলে জগন্নাথছড়ি এলাকা, চেংগী চ্যানেলের নানিয়ারচর এলাকা ও রীংকন চ্যানেলের বিলাইছড়ি এলাকা।

মূলত বিএফআরআই এর রাঙ্গামাটিস্থ নদী উপকেন্দ্র কাপ্তাই লেকে মাছের উৎপাদন, সংরক্ষণ, কার্পজাতীয় মাছের পরিপক্বতা ও প্রাকৃতিক প্রজননের সময় নিরূপণ; ডিম বা রেণু সংগ্রহের মাধ্যমে প্রজননক্ষেত্র ও প্রজনন অভিপ্রয়াণ পথসমূহ চিহ্নিতকরণ; প্রাকৃতিক প্রজনন থেকে হ্রদে সংযোজিত রেণুর পরিমাণ ও প্রজাতি বিন্যাস নিরূপণ এবং মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবন বিষয়ক গবেষণা পরিচালনা করে আসছে। প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ কাপ্তাই লেক দেশের অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত জলাশয়ের মধ্যে সবচেয়ে বড়। উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রাকৃতিক প্রজনন অন্যতম উৎস হিসেবে বিবেচিত। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কাপ্তাই হ্রদে মাছের উৎপাদন ছিলো ১৭,০৫৬ মে. টন। প্রায় ২৬,৬৮৮ জন মৎস্যজীবী ও তাদের পরিবার জীবিকার জন্য সরাসরি কাপ্তাই হ্রদের ওপর নির্ভরশীল।

 মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ইসতিয়াক হায়দার জানান, কাপ্তাই হ্রদে বর্ষাকালে (সাধারণত জুন-জুলাই মাস) উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে বজ্রসহ ভারী বৃষ্টিপাত, ঝড়ো বাতাস, প্রবল স্রোত এবং পানিতে ঘূর্ণণ তৈরি হলে কার্পজাতীয় মাছ প্রজনন করে থাকে। কাপ্তাই হ্রদে প্রাকৃতিক প্রজনন বিষয়ে সর্বপ্রথম গবেষণা পরিচালিত হয় ১৯৮৬ সালে ও পরবর্তীতে ২০০৩-০৪ সালে। এরপর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রাকৃতিক প্রজনন বিষয়ে গবেষণায় বিএফআরআই এর রাঙ্গামাটিস্থ নদী উপকেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা কাসালং চ্যানেলের মাস্তানের টিলা সংলগ্ন এলাকায় কার্পজাতীয় মাছের ডিমের সন্ধান পায়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উপকেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা পূর্বের চিহ্নিত প্রজননকেন্দ্র হতে প্রায় ছয় কিলোমিটার উপরের দিকে কাসালং চ্যানেলের মালাদ্বীপ মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় নতুন প্রজননক্ষেত্র চিহ্নিত হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, সংগ্রহকৃত ডিম থেকে রেণু উৎপাদনের হার ছিল প্রায় ৯০-৯৫ শতাংশ। গবেষণায় হ্রদের কাসালং চ্যানেলে চলতি বছরের প্রজনন মৌসুমে (মে-জুলাই) পানির গভীরতা ছিল মাত্র ১ দশমিক ৮ থেকে ২ দশমিক ৪ মিটার। তাছাড়া পানির অন্যান্য ভৌত-রাসায়নিক গুণাবলী যেমন দ্রবীভূত অক্সিজেন (৫ দশমিক ২-৬ দশমিক ৬ মিগ্রা./লি.), লবণাক্ততা (০ দশমিক ০১-০ দশমিক ২ পিপিএম), পি এইচ (৭ দশমিক ২৮-৭ দশমিক ৪০) এবং পানির তাপমাত্রা (২৬ দশমিক ৬২-২৭ দশমিক ১ ডিগ্রি সে.) অনুকূল থাকায় কার্পজাতীয় মা মাছ ডিম ছেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিলম্বে বৃষ্টিপাত এবং পলিমাটি ভরাট হয়ে প্রজননক্ষেত্রের পানির গভীরতা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। এছাড়াও কার্পজাতীয় মা মাছের অভিপ্রয়াণ পথও সংকীর্ণ হয়ে আসছে। ফলে প্রজননক্ষেত্রের আয়তন দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।  

গবেষক দলে ছিলেন ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ইশতিয়াক হায়দার ও বি. এম. শাহিনুর রহমান এবং বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. খালেদ রহমান ও  মো. লিপন মিয়া।

এমআইএইচ/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ