ঢাকা, রবিবার, ২৯ চৈত্র ১৪৩১, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বৈশাখে তিন কর্মসূচি পালন করবে জাতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২৫
বৈশাখে তিন কর্মসূচি পালন করবে জাতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন অতিথিরা।

ঢাকা: পহেলা বৈশাখ ১৪৩২ উপলক্ষে ১৪ এপ্রিল দিনব্যাপী তিন কর্মসূচি পালন করবে জাতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। তাদের কর্মসূচিতে থাকছে র‍্যালি, বাঙালি মেজবান ও বাংলা সাংস্কৃতিক উৎসব।

শুক্রবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি কবি মুহিব খান এ তথ্য জানান।  

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কবি মুহিব খান বলেন, আগামী ১৪ এপ্রিল ২০২৫ মোতাবেক পহেলা বৈশাখ ১৪৩২ সোমবার সারা দেশে তথা গোটা বাঙালি সমাজে বাংলা নববর্ষ উদযাপিত হতে যাচ্ছে। আমরা বাঙালি, বাংলা সন ও বর্ষ গণনা আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য এবং গৌরবজনক সংস্কৃতি। এই বাংলা সন আমাদের আলো বাতাস প্রকৃতি, কৃষি বাণিজ্য এবং সমাজ সংস্কৃতির অনুকূলে উদ্ভাবিত হয়েছে। বাংলা সনের প্রথম মাস বৈশাখ। এই বৈশাখে সারা বাংলার কৃষক সমাজ তাদের কষ্টার্জিত ক্ষেতের ফসল নিজেদের গোলায় তুলে নেন এবং বাংলার ব্যবসায়ী ও বণিক সমাজ তাদের ব্যবসার বার্ষিক হিসাবনিকাশ ও লেনদেন গুছিয়ে নেন। একইসঙ্গে বাঙালি সমাজের হাতে নিজেদের সারা বছরের কষ্টার্জিত টাকাকড়ি এ মাসেই সঞ্চিত হয় বলে বাংলার গ্রামে-গঞ্জে ঘরে ঘরে কৃষাণ-কৃষাণী ও ব্যবসায়ীদের পরিবারের সদস্যদের গায়ে নতুন কাপড় ওঠে। গ্রাম বাংলার হেঁশেলে ভালো-মন্দ খাবারের আয়োজন চলে। শিশু-কিশোর ও তরুণ-তরুণীদের জন্য পাড়ায় পাড়ায় বসে বৈশাখী মেলা। সেসব মেলায় নানা উপদেয় দেশীয় খাবার পিঠাপুলি-মিষ্টান্নের সমাবেশ ঘটে। সেই সঙ্গে বসে দেশীয় কাপড়চোপড় ও পোশাকের হাট। সন্নিবেশিত হয় নানা রকম দেশীয় খেলাধুলা ও বিনোদনের আয়োজন।

উল্লেখ্য যে ধর্ম-বর্ণ-জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সমস্ত বাঙালি এসব আনন্দ আয়োজনে অংশগ্রহণ করে আসছেন আবহমানকাল থেকে। আর এজন্যই বাংলা নববর্ষ উৎসবকে সর্বজনীন জাতীয় উৎসব বলা হয়ে থাকে। তবে দুঃখজনক বাস্তবতা হলো এই যে ৯০ দশকের গোড়ার দিক থেকে বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক বিজাতীয় রীতি-রেওয়াজ ও কুসংস্কারের অনুপ্রবেশ ঘটানোর মাধ্যমে আবহমানকাল থেকে বাঙালি সমাজে চলে আসা এই উৎসব আয়োজনের সর্বজনীনতাকে লঙ্ঘিত-কলুষিত এবং প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়, যা প্রকৃত বাঙালি সমাজের কাছে মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।

তিনি বলেন, বলা বাহুল্য যে কোনো বিশেষ ধর্মীয় প্রভাব ও আনুকূল্যমুক্ত সর্বজনীন এই উৎসবের ভেতর দেশের প্রায় ৯৫ শতাংশ নাগরিকের ধর্মীয় মূল্যবোধকে আঘাত ও অস্বীকার করে কিছু আপত্তিকর ও উসকানিমূলক বিজাতীয় আচার-অনুষ্ঠানের অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে গোটা জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়ার ঘৃণ্য অপচেষ্টা চালানো হয় বিগত প্রায় চার দশক ধরে। একটি স্বার্থান্বেষী সাম্প্রদায়িক কুচক্রী মহল বাঙালির এই সর্বজনীন উৎসবের নামকে ব্যবহার করে জাতি ও সমাজে নানা রকম কুসংস্কারের চর্চা ও প্রচার-প্রসার চালাতে থাকে, যা রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য এবং প্রচলিত জাতীয় গণমাধ্যমসমূহের অযাচিত সমর্থন ও অসচেতন পৃষ্ঠপোষকতায় দিনে দিনে ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। সাধারণের সামান্য কিছু অংশ এতে অসচেতনভাবে অংশগ্রহণ করলেও সারা দেশের বিপুল জনসাধারণ তাদের মৌন প্রতিবাদ জানিয়ে এসব থেকে নিজেদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে রাখেন এবং দেশের সচেতন সমাজ তাদের বক্তব্যে লেখনিতে এসবের যৌক্তিক প্রতিবাদও জ্ঞাপন করে আসছেন।

তিনি আরও বলেন, এমতাবস্থায় আগস্ট ২০২৪ এ প্রতিষ্ঠিত 'জাতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র' আগামী পহেলা বৈশাখ নববর্ষে গোটা জাতির চিন্তা-চেতনা ও ইতিহাস ঐতিহ্যের আলোকে প্রকৃত দেশীয় সংস্কৃতির আদলে নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন আয়োজনের প্রয়োজন গভীরভাবে অনুভব করেছে এবং দেশের জননন্দিত লেখক কবি শিল্পী সাহিত্যিক চিন্তাবিদ সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের চিন্তা পরামর্শের সমন্বয়ে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপনের জন্য একটি রূপকল্প ও সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। পহেলা বৈশাখ ১৪৩২ মোতাবেক ১৪ এপ্রিল ২০২৫ সোমবার দিনব্যাপী 'জাতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে'র উদ্যোগে মোট ৩টি কর্মসূচি পালিত হবে।

কর্মসূচিগুলো হলো-
১. সকাল ৯টায় রাজধানীর পল্টনস্থ মুক্তাঙ্গন থেকে 'বাংলা নবযাত্রা ১৪৩২' নামে একটি র‌্যালি বা গণমিছিল পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব, জাতীয় ঈদগাহ, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের সামনের রাজপথ হয়ে শিল্পকলা একাডেমি সংলগ্ন জাতীয় মৎস্য ভবন সড়ক প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হবে এবং পরবর্তী কর্মসূচি পালনের জন্য শান্তিপূর্ণ অবস্থান গ্রহণ করবে।

২. দুপুর ১২টা থেকে শিল্পকলা একাডেমি সংলগ্ন জাতীয় মৎস্য ভবন সড়ক প্রাঙ্গণে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ও সামাজিক আয়োজন 'বাঙালি মেজবান' অনুষ্ঠিত হবে। যাতে দেশি চালের সাদা ভাত, দেশি গরুর তরকারি ও নানা রকম দেশীয় মিষ্টান্ন পরিবেশন করা হবে এবং নির্ধারিত শৃঙ্খলা ও নিয়ম অনুযায়ী এতে অংশগ্রহণের সুযোগ উন্মুক্ত থাকবে।

৩. বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা-রাত পর্যন্ত শিল্পকলা একাডেমি সংলগ্ন জাতীয় মৎস্য ভবন সড়ক প্রাঙ্গণে 'বাংলা সাংস্কৃতিক উৎসব' নামে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। এতে মঞ্চায়িত হবে দেশীয় সঙ্গীত, কবিতা ও ইতিহাস ঐতিহ্যভিত্তিক আলোচনা।

বাংলা নববর্ষ উৎসবে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে মুহিব খান বলেন, 'জাতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র' ঘোষিত 'বাংলা নববর্ষ উৎসব ১৪৩২' উদযাপনের জন্য আগামী পহেলা বৈশাখে দিনব্যাপী আয়োজিত এই অনুষ্ঠানসমূহে দেশের সব নাগরিককে সানন্দ চিত্তে, প্রফুল্ল মনে, পরিশীলিত পোশাক-পরিচ্ছদে নিজ নিজ পরিবার ও বন্ধুবান্ধবসহ সদলবলে অংশগ্রহণ করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। আসুন আমরা সবাই মিলে আমাদের প্রাণের বাংলা নববর্ষকে সব বিজাতীয় সংস্কৃতি, অন্ধকারাচ্ছন্ন কুসংস্কার এবং সাম্প্রদায়িক রীতি-আচার থেকে মুক্ত করে সর্বজনীন স্বদেশি আবহে পালন করি। আমাদের নববর্ষ সুন্দর হোক, সফল হোক।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২৫
এমএমআই/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।