তেহরান: ইরানের নৌবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার ওমান সাগরে মার্কিন গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার ইউএসএস ফিটজেরাল্ড (ডিডিজি-৬২)-কে বাধা দিয়ে সতর্ক সংকেত পাঠায় এবং শেষমেশ জাহাজটিকে দক্ষিণ দিকে সরে যেতে বাধ্য করে।
ইরানের সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, মার্কিন ডেস্ট্রয়ারটি ইরানের পর্যবেক্ষণে থাকা জলসীমার কাছাকাছি চলে এসেছিল।
কিন্তু পালটা প্রতিক্রিয়ায়,USS Fitzgerald (DDG-62)-এর ক্যাপ্টেন হুমকি দেন, হেলিকপ্টারটি যদি তাদের সীমানার কাছাকাছি থাকে, তাহলে সেটিকে গুলি করে ভূপাতিত করা হবে।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে, ইরানের সেনা বিমান প্রতিরক্ষা ইউনিট ঘোষণা দেয় হেলিকপ্টারটি এখন ইরানের পূর্ণ আকাশ প্রতিরক্ষা চাদরের আওতায় রয়েছে। ইরানি পাইলট ফের মার্কিন জাহাজটিকে দিক পরিবর্তনের নির্দেশ দেন। অবশেষে উত্তেজনা প্রশমিত করতে ইউএসএস ফিটজেরাল্ড ওই এলাকাটি থেকে দক্ষিণ দিকে সরে যায়।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখনো পর্যন্ত মার্কিন সেনাবাহিনী কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
মার্কিন-ইরান নৌ উত্তেজনার পটভূমি
পারস্য উপসাগর, হরমুজ প্রণালী এবং ওমান সাগরে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর মধ্যে মুখোমুখি অবস্থান ও উত্তেজনা নতুন কিছু নয়। ১৯৮০-এর দশক থেকে এই জলসীমাগুলোতে দুই পক্ষের মধ্যে নিয়মিতভাবে সংঘর্ষ ও টহল-বিরোধ চলে আসছে।
২০১৯ সালের ২০ জুন, এমনই এক উত্তেজনার মধ্যে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) যুক্তরাষ্ট্রের একটি আরকিউ-৪এ গ্লোবাল হক (RQ-4A Global Hawk) ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করে। ইরানের দাবি ছিল, ড্রোনটি হরমুজ প্রণালীর কাছে তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছিল, ড্রোনটি আন্তর্জাতিক আকাশসীমায় ছিল। ইরান পরে ভূপাতিত ড্রোনটির ধ্বংসাবশেষও প্রকাশ করে।
এ বিষয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছিল, ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ড্রোনটি ধ্বংস হওয়ার ঘটনায় পেন্টাগনের কর্মকর্তারা হতচকিত হয়ে যান। কারণ, ড্রোনটি এমন প্রযুক্তিতে তৈরি, যা শত্রুর রাডার ও ক্ষেপণাস্ত্র থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম বলে দাবি করা হয়।
প্রতিটি আরকিউ-৪এ গ্লোবাল হক ড্রোনের মূল্য আনুমানিক ১২ কোটি ৩০ লাখ ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্রের এফ-৩৫এ "লাইটেনিং-২" স্টেলথ যুদ্ধবিমানের চেয়েও ৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার বেশি। প্রায় ১৩০ ফুট ডানার বিস্তারসহ ৪৭ ফুট লম্বা এ জেটচালিত ড্রোন ৬৫ হাজার ফুট উচ্চতা দিয়ে একটানা ৩০ ঘণ্টার বেশি সময় আকাশে থাকতে পারে এবং এতে বসানো থাকে অত্যাধুনিক গোয়েন্দা ও নজরদারি প্রযুক্তি।
এমএম