ঢাকা, শুক্রবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৬ মে ২০২৫, ১৮ জিলকদ ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

৭৭ বছর আগের ‘নাকবা’র যন্ত্রণা কাটেনি ফিলিস্তিনিদের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:৩২, মে ১৫, ২০২৫
৭৭ বছর আগের ‘নাকবা’র যন্ত্রণা কাটেনি ফিলিস্তিনিদের পশ্চিম তীরের রামাল্লায় ফিলিস্তিনি শিশুরা

ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার সময় নিজেদের ভূমি থেকে ফিলিস্তিনিদের গণহারে উচ্ছেদ করা হয়েছিল। সেই ঘটনা স্মরণে ‘নাকবা দিবস’ পালন করেন ফিলিস্তিনিরা।

প্রতি বছর ১৫ মে দিবসটি পালিত হয়।

এ বছর ‘নাকবা’র ৭৭তম বার্ষিকী। ইসরায়েল ১৯৪৮ সালে নিজেকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর আনুমানিক সাড়ে সাত লাখ ফিলিস্তিনি তাদের ভূমি থেকে পালিয়ে কিংবা জোরপূর্বক উৎখাত হতে বাধ্য হয়েছিলেন।

ফিলিস্তিনিদের ওপর এখনো আগ্রাসন চালিয়েই যাচ্ছে ইসরায়েল। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে। সেখানে ইসরায়েলের অবরোধের কারণে দুর্ভিক্ষের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ইসরায়েল সরকারে থাকা নেতারা গাজা ভূখণ্ড থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে দেওয়ার কথা বলেই যাচ্ছেন। অন্যদিকে ১৯৬৭ সাল থেকে অধিকৃত পশ্চিম তীরেও বিভিন্ন সময়ে সামরিক অভিযান চালিয়ে আসছে ইসরায়েলি বাহিনী। সেখানকার শরণার্থী শিবির থেকে হাজার হাজার মানুষকে জোরপূর্বক সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

নাকবা স্মরণে বুধবার পশ্চিম তীরের রামাল্লা শহরের বিভিন্ন সড়ক ও মোড়ে ফিলিস্তিনি পতাকা ও ‘প্রত্যাবর্তন’ লেখা কালো পতাকা উড়তে দেখা যায়। শহরের কেন্দ্রস্থলে আয়োজিত কর্মসূচিতে অংশ নিতে স্কুলশিক্ষার্থীদের বাসে করে আনা হয়। সপ্তাহব্যাপী চলবে কর্মসূচি।  

কর্মসূচিতে ছোট শিশুরা অংশ নেয়। তাদের হাতে ছিল পতাকা ও চাবির প্রতিরূপ। এই চাবি তাদের সেই হারানো ঘরবাড়ির প্রতীক, যেগুলো এখন ইসরায়েলের অংশে পড়ে আছে। সেখান থেকেই তাদের পরিবারের সদস্যদের উৎখাত হয়েছিল। পরিবারগুলো এখনো তাদের ভূমিতে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় কোনো কর্মসূচির আয়োজন করা হয়নি। প্রায় ১৯ মাসের যুদ্ধ ও ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে সেখানকার বাসিন্দারা চরম দারিদ্র্য ও বাস্তুচ্যুতির মধ্যে পড়েছেন।  

দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহরের বাসিন্দা মোয়ামেন আল-শারবিনি ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, তিনি মনে করছেন ইতিহাস যেন আবারও নিজেকে পুনরাবৃত্তি করছে।

ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধে গাজার প্রায় ২৪ লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় সবাই অন্তত একবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। শারবিনি বলছিলেন, আমাদের জীবন গাজায় এক দীর্ঘ নাকবায় পরিণত হয়েছে। আমরা প্রিয়জনদের হারিয়েছি, ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে, জীবিকা শেষ হয়ে গেছে।

চলতি মে মাসের শুরুতে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা গাজায় এক বিস্তৃত সামরিক অভিযান চালানোর পরিকল্পনা অনুমোদন করে। এর লক্ষ্য হলো এই অঞ্চলে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা এবং বাসিন্দাদের ব্যাপকভাবে সরিয়ে দেওয়া। ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপকভাবে সমালোচিত।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, তার সরকার গাজার মানুষদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য তৃতীয় কোনো দেশ খুঁজছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও কয়েক মাস আগে গাজার লোকদের বের করে দেওয়ার কথা বলেছিলেন।

গাজার নুসাইরাত থেকে ৩৬ বছর বয়সী মালাক রাদওয়ান বলছিলেন, নাকবা দিবস এখন আর শুধু স্মৃতি নয়। এটি গাজায় আমাদের দৈনন্দিন বাস্তবতা।

রামাল্লা থেকে ৫২ বছর বয়সী নায়েল নাখলেহ বলেন, দিনটি ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জীবনের এক দুঃখজনক দিন। তার পরিবারের বসবাস ছিল ইসরায়েলের জাফ্ফা অঞ্চলের আল-মজদাল গ্রামে।

আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।