ভিক্টোরিয়া রোশচিনা, ইউক্রেনের এক নারী সাংবাদিক, নিখোঁজ হন সংবাদ সংগ্রহের কাজে গিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
ইউক্রেনের অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরের যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক বিভাগের প্রধান ইউরি বেলোসোভ জানান, ফরেনসিক পরীক্ষায় ভিক্টোরিয়া রোশচিনার দেহের নানা অংশে আঘাত ও রক্তক্ষরণের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তার পাঁজর ছিল ভাঙা। তাকে বৈদ্যুতিক শক দেওয়াসহ নানা নির্যাতনের প্রমাণ মিলেছে। তিনি বলেন, ভিক্টোরিয়া রোশচিনা এসব আঘাত পেয়েছিলেন জীবিত অবস্থায়, বিশেষজ্ঞরা এমনটি নিশ্চিত করেছেন।
যুদ্ধে আটক ইউক্রেনীয়দের ওপর নির্যাতনের পদ্ধতি হিসেবে রাশিয়া বৈদ্যুতিক শক দেওয়ার কৌশল ব্যবহার করে— এটি পরিচিত একটি বিষয়। এই পদ্ধতির ব্যাপক ব্যবহার আগেও সিএনএনের প্রতিবেদনে উঠে এসেছিল।
বেলোসোভ জানান, মরদেহটি রাশিয়া থেকে একজন অজ্ঞাতনামা পুরুষ হিসেবে পাঠানো হয়। তবে একাধিকবার ডিএনএ পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া যায়, মরদেহটি ভিক্টোরিয়া রোশচিনারই। তিনি বলেন, মরদেহের অবস্থা এমন ছিল যে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা সম্ভব হয়নি। তবে বিষয়টি পরিষ্কার করতে ইউক্রেন এখন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কাজ করছে।
ভিক্টোরিয়া রোশচিনা কাজ করতেন ইউক্রেনস্কা প্রাভদা নামে একটি গণমাধ্যমে। তার সহকর্মীরা জানান, রাশিয়া থেকে ফেরত পাওয়া তার মরদেহে কিছু অঙ্গ অনুপস্থিত ছিল। তদন্তকারী দলের সদস্যদের উদ্ধৃতি দিয়ে তারা জানান, রোশচিনার মস্তিষ্ক, চোখের গোলক এবং শ্বাসনালির একটি অংশ ছিল না। তাদের ধারণা, মৃত্যুর সঠিক কারণ গোপন করতেই রাশিয়া এসব অঙ্গ সরিয়ে ফেলতে পারে।
ভিক্টোরিয়া রোশচিনা আগস্ট ২০২৩ সালে নিখোঁজ হন। তার সহকর্মীরা জানান, তিনি রুশ নিয়ন্ত্রিত একটি এলাকায় গিয়েছিলেন, যা ছিল খুবই বিপজ্জনক। তিনি সেখানকার মানুষের জীবনযাপন নিয়ে সংবাদ সংগ্রহের কাজে গিয়েছিলেন। রোশচিনার সাবেক সহকর্মী এভজেনিয়া মোটোরেভস্কায়া বলেন, রোশচিনা ভালোভাবে কাজের জন্য বেশ চেষ্টা করতেন। তার জন্য সাংবাদিকতা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিনি সবসময় দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর মধ্যে থাকতেন। অনেক বছর ধরে এই কাজ করতেন তিনি। কিন্তু রাশিয়া তাকে হত্যা করেছে।
রোশচিনার তার কাজে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেন। এ নিয়ে তার বাবা পড়েছিলেন চিন্তায়। নিখোঁজ হওয়ার নয় মাস পর মস্কো রোশচিনাকে আটক করার কথা স্বীকার করে। রুশ কর্তৃপক্ষ রোশচিনাকে ইউক্রেনের দখলকৃত এলাকা থেকে তুলে রাশিয়ায় নিয়ে যায়, যেখানে তাকে কোনো অভিযোগ বা বিচার ছাড়াই আটকে রাখা হয়।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে মারা যান ২৭ বছর বয়সী রোশচিনা। তবে তখনও পরিবার তার মৃত্যুর খবর জানত না। তারা প্রায় এক মাস পর রাশিয়া থেকে মেয়ের মৃত্যুর খবর জানতে পারে।
ইউক্রেনের যুদ্ধবন্দিদের চিকিৎসা সমন্বয় কেন্দ্রের মুখপাত্র পেত্রো ইয়াতসেঙ্কো গত বছরের অক্টোবরে জানান, রোশচিনা দক্ষিণ রাশিয়ার ট্যাগানরগ শহরের একটি বন্দিশালা থেকে মস্কো নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান। বন্দি বিনিময়ের অংশ হিসেবে তাকে মুক্তি দেওয়ার আলোচনা ছিল। সেই মুক্তি দেওয়ার প্রস্তুতি হিসেবেই তাকে মস্কো নেওয়া হচ্ছিল।
ট্যাগানরগের ওই বন্দিশালাটি নিষ্ঠুর নির্যাতনের জন্য পরিচিত। সিএনএন এর আগেও সেখানে বন্দি থাকা লোকদের সঙ্গে কথা বলেছে, যারা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, অপ্রতুল খাবার এবং মৌলিক স্বাস্থ্যসেবার অভাবের কথা জানিয়েছেন।