মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার উপদেষ্টারা আমদানির ওপর ব্যাপক শুল্ক আরোপের পক্ষেই কথা বলে যাচ্ছেন। বাজারের অস্থিরতা এবং বাণিজ্যযুদ্ধ এড়াতে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানানো সত্ত্বেও তারা এই নীতি বজায় রাখার বিষয়ে অনড় মনোভাব দেখিয়েছেন।
এদিকে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ নিয়ে বিভিন্ন দেশে চলছে টানাপোড়েন। বিভিন্ন দেশের শেয়ারবাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিভিন্ন দেশ এরইমধ্যে শুল্ক নিয়ে আলোচনায় বসতে চাইছে বলে দাবি ট্রাম্প প্রশাসনের।
টেলিভিশনে একাধিক সাক্ষাৎকারে, ট্রেজারিমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট সাম্প্রতিক শেয়ারবাজারের পতনকে গুরুত্বহীনভাবে উল্লেখ করেছেন। আর বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক জোর দিয়ে বলেছেন যে পরিকল্পনা অনুযায়ী পারস্পরিক শুল্ক কার্যকর করা হবে।
বেসেন্ট বলেন, অস্থিরতার ফলে মন্দা আসবে এমন কোনো কারণ নেই। ‘এটি একটি সমন্বয় প্রক্রিয়া’, বলেন তিনি। এদিকে আরেক শীর্ষ উপদেষ্টা কেভিন হ্যাসেট বলছেন, ৫০টিরও বেশি দেশ একটি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করার জন্য ট্রাম্পের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি প্রধান শেয়ারের সূচক ৫ শতাংশেরও বেশি কমেছে, যেখানে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক প্রায় ৬ শতাংশ কমেছে। ২০২০ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজার সবচেয়ে বাজে সপ্তাহ পার করল। এই নাজুক অবস্থা চলতি সপ্তাহেও অব্যাহত থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্র এবং বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা ৬০ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকিং জায়ান্ট জেপি মরগান ভবিষ্যৎবাণীতে এমনটিই বলেছে।
রোববার সন্ধ্যায় এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প জানান, ইউরোপ ও এশিয়ার দেশগুলো ‘একটি চুক্তি করার জন্য মরিয়া হয়ে আছে। ’
পণ্যের দাম দ্রুত বেড়ে যাওয়া এবং বাজারে মন্দার আশঙ্কার প্রেক্ষাপটে আমেরিকান ভোক্তাদের ‘সহনসীমা’ নিয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নে নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দেখান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
অস্থিরতার বিষয়ে প্রশ্ন করলে বাণিজ্য মন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক রোববার সিবিএস নিউজকে জানান, সব ধরনের আমদানির ওপর ১০ শতাংশ ‘বেসলাইন’ শুল্ক আগামী দিনগুলোতে অবশ্যই বহাল থাকবে।
তালিকায় থাকা প্রায় ৬০টি দেশের ওপর উচ্চতর শুল্ক ৯ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। শুল্ক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে লুটনিক বলেন, ‘সবকিছুই কার্যকর হবে। তিনি (ট্রাম্প) যা ঘোষণা করেছেন, সবই বাস্তবায়ন হবে এবং তিনি রসিকতা করে কিছু করেননি। ’
ট্রাম্পের শীর্ষ অর্থনৈতিক উপদেষ্টার দাবি, ৫০টিরও বেশি দেশ আলোচনা শুরু করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। তবে কোন কোন দেশ তালিকায় রয়েছে, সেই সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি।
সৌদি আরবের শেয়ার বাজারে প্রায় সাত শতাংশ দরপতন হয়েছে –যা মহামারির পর থেকে এ পর্যন্ত একদিনে সবচেয়ে বড় ক্ষতি বলে জানিয়েছেন দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম।
ইন্দোনেশিয়া ও তাইওয়ান জানিয়েছে, তাদের পণ্যের ওপর ৩২ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার বিপরীতে প্রতিশোধমূলক পাল্টা শুল্ক আরোপ করবে না তারা।
ভিয়েতনাম ট্রাম্পকে অনুরোধ করেছে, তাদের ওপর আরোপ করা ৪৬ শতাংশ শুল্ক যেন অন্তত ৪৫ দিন পর কার্যকর করা হয়। আর চীন তো মার্কিন পণ্যে পাল্টা ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে।
ট্রাম্পের শুল্ক নিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার সতর্ক করে বলেন, পৃথিবীকে আমরা আগে যেভাবে চিনতাম এখন তা বদলে গেছে। ট্রাম্পের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে আলোচনায় ওয়াশিংটনে পৌঁছেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
বিবিসি অবলম্বনে
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০২৫
আরএইচ