বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মধ্যেও সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে ফিফার নতুন সংস্করণের ক্লাব বিশ্বকাপ, আর এই আয়োজনের পেছনের কারিগর হিসেবে বিজয়ী হিসেবে উঠে এসেছেন ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো।
এই টুর্নামেন্টকে অনেকেই বলছেন ইনফান্তিনোর ‘আত্মমুগ্ধতার প্রজেক্ট’ বা ব্যক্তিগত প্রদর্শনী।
২০০০ সালে ব্রাজিলে প্রথম ক্লাব বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। এরপর ২০১৯ সালে ২৪ দলের একটি সংস্করণ পাস হয়, কিন্তু কোভিড মহামারির কারণে ২০২১-এর সংস্করণ আর সম্ভব হয়নি। শেষমেশ ২০২৫ সালে ৩২ দলের বিশ্বকাপ আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
অনেক বড় ক্লাব এবং খেলোয়াড়ের সংগঠন শুরুতে আপত্তি জানিয়েছিল। রিয়াল মাদ্রিদের কোচ কার্লো আনচেলত্তি বলেছিলেন, তারা অংশ নেবেন না। খেলোয়াড়দের সংগঠন ফিফপ্রো আইনি চ্যালেঞ্জও জানায়। তবু সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে টুর্নামেন্টটি অনুষ্ঠিত হয়।
টেলিভিশন সম্প্রচারের অধিকার, আয়োজনের অর্থায়ন—সবকিছুই শেষ মুহূর্তে নিশ্চিত হয়। সৌদি আরবভিত্তিক বিনিয়োগ সংস্থা ‘সার্জ স্পোর্টস’ ডিএজেডএন (DAZN)-এ এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে, যা কার্যত ছিল টুর্নামেন্টের পুরস্কার অর্থ। এতে ইউরোপ ও অন্যান্য অঞ্চলের বড় ক্লাবগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়।
টুর্নামেন্টের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজে এসে ম্যাচ উপভোগ করেন এবং ইনফান্তিনোর সঙ্গে প্রকাশ্যে হাসিমুখে ছবি তোলেন। ট্রাম্পের উপস্থিতি এবং মিডিয়ার মনোযোগের কারণে এই আয়োজন অন্য অনেক আন্তর্জাতিক ঘটনার চেয়েও বেশি গুরুত্ব পায়।
বিশেষ করে ট্রাম্পের ‘খবরদারি’ ও ‘হাস্যকর আচরণ’ নিয়ে সারা বিশ্বে ট্রলের বন্যা বয়ে যায়। কিন্তু দিনশেষে সেটি ‘ভাইরাল’ ইস্যুতে পরিণত হয় এবং ‘লাভ’ হয় ফিফা প্রেসিডেন্টের।
ইনফান্তিনোর দাবি, গড়ে ৪০ হাজার দর্শক, মোট ২৫ লাখ উপস্থিতি এবং ২.১ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব অর্জন করেছে ক্লাব বিশ্বকাপ—যা তার সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে।
রিয়াল মাদ্রিদের সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ এটিকে "দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের ফল" হিসেবে আখ্যা দেন। এটি এক অর্থে ইউরোপীয় সুপার লিগের মতোই—তবে ফিফার ছায়াতলে, বিশ্বজুড়ে।
যেখানে চেলসির সমর্থকেরা একসময় সুপার লিগের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছিল, তারাই এবার এই ক্লাব বিশ্বকাপ জিতে আনন্দে ভাসে। ইউরোপীয় ফুটবল সংস্থা উয়েফার সভাপতি আলেকসান্ডার চেফারিন এই টুর্নামেন্টকে ব্যঙ্গ করে বলছেন “তথাকথিত ক্লাব বিশ্বকাপ”। কিন্তু বাস্তবে তিনি ইনফান্তিনোর হাতে পরাজিত।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে—এই টুর্নামেন্ট যদি প্রতি চার বছর বাদে না হয়ে প্রতি দুই বছর পরপর হয়, তাহলে তরুণ প্রজন্মের চোখে এটি ধীরে ধীরে চ্যাম্পিয়নস লিগের চেয়েও বড় হয়ে উঠবে কি না।
এমএইচএম