ফিফার সাবেক সভাপতি সেপ ব্ল্যাটার মনে করেন, আন্তর্জাতিক ফুটবল এখন কার্যত সৌদি আরবের দখলে চলে গেছে।
জার্মান টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমরা ফুটবলটা তাদের (সৌদি আরবের) হাতে তুলে দিয়েছি, আর ওরা সেটি নিয়ে নিয়েছে।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ২০৩৪ সালের পুরুষ বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য সৌদি আরবকে একক প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে ফিফা, কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই। সেই সিদ্ধান্ত থেকেই মূলত ব্ল্যাটারের এই ক্ষোভের শুরু।
সৌদি আরব গত কয়েক বছরে বিশ্ব ফুটবলে বিপুল বিনিয়োগ করেছে। ২০২৩ সালে দেশটির সরকারি বিনিয়োগ তহবিল ‘পিআইএফ’ নিয়ন্ত্রণ নেয় চারটি বড় ক্লাব—আল হিলাল, আল নাসর, আল ইত্তিহাদ ও আল আহলি’র। তার আগেই, ২০২২ সালে, ‘পিআইএফ’ কিনে নেয় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ক্লাব নিউক্যাসল ইউনাইটেডের ৮৫ শতাংশ মালিকানা।
এছাড়া সম্প্রতি সৌদির স্পোর্টস ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি ‘এসইউআরজে’ আংশিক মালিকানা নিয়েছে ‘ডিএজেডএন’-এর, যাদের সঙ্গে ফিফা ১ বিলিয়ন ডলারের সম্প্রচার চুক্তি করেছে নতুন করে সম্প্রসারিত ক্লাব বিশ্বকাপের জন্য। এই নতুন ৩২-দলীয় টুর্নামেন্টটির প্রথম সংস্করণ এবারের গ্রীষ্মে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ফিফার বিভিন্ন টুর্নামেন্টেও সৌদি ব্র্যান্ডগুলোর সরব উপস্থিতি লক্ষণীয়—আরামকো, রিয়াদ এয়ার, ভিজিট সৌদি প্রমুখ প্রতিষ্ঠান নিয়মিত স্পনসর হয়ে উঠছে ক্লাব ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন ম্যাচে।
নতুন ক্লাব বিশ্বকাপ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ৮৯ বছর বয়সী ব্ল্যাটার। তার ভাষায়, ‘ফুটবল এখন অনেক বেশি হচ্ছে। একই খেলোয়াড় ও ক্লাব বারবার মাঠে নামছে, বিশ্রাম না নিয়েই। ’
এই গ্রীষ্মে যুক্তরাষ্ট্রের গরম নিয়েও কথা বলেছেন তিনি, ‘এই তাপমাত্রায় খেলা অনিবার্যভাবেই খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ’
ফুটবলারদের সংগঠন ‘ফিফপ্রো’-ও ফিফার সমালোচনা করেছে দুপুরের গরমে ম্যাচ শুরুর সময়সূচি রাখার কারণে। যদিও ফিফা জানিয়েছে, ভবিষ্যতে গরমের সময় ‘ছাদঢাকা স্টেডিয়াম’ ব্যবহারের চিন্তাভাবনা করছে, তবুও তা এখনো কার্যকর হয়নি।
ফিফার বর্তমান সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো-র নেতৃত্বকেও তীব্রভাবে সমালোচনা করেছেন ব্ল্যাটার। ‘সব কিছু এখন ইলেকট্রনিকভাবে চলে। কেউ কিছু বলে না। এমনকি ছয় ঘণ্টা দেরিতে এলেও কংগ্রেস শুরু করা যায়!’—বলেন তিনি।
চলতি বছরের মে মাসে প্যারাগুয়ের আসুনসিওনে অনুষ্ঠিত ফিফা কংগ্রেস বিলম্বিত হয়েছিল ইনফান্তিনোর জন্য, কারণ তিনি তখন সৌদি আরব ও কাতারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফরসঙ্গী ছিলেন। এর আগে ফিফা কাউন্সিলের সভাও ইনফান্তিনোর কারণে সরাসরি নয়, ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়।
নিজেও বিতর্কের বাইরে ছিলেন না ব্ল্যাটার। ২০১৫ সালে মিশেল প্লাতিনিকে দুই মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দু’জনকেই আট বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে ফিফা (পরে ছয় বছরে কমানো হয়)। অভিযোগ ছিল, প্লাতিনিকে ভোট পাওয়ার বিনিময়ে অর্থ দেওয়া হয়েছিল, যাতে ব্ল্যাটার ২০১১ সালে পুনরায় ফিফা সভাপতি নির্বাচিত হতে পারেন।
তবে ব্ল্যাটার ও প্লাতিনি দু’জনই বরাবর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, এটি ছিল পুরোনো একটি পরামর্শমূলক কাজের জন্য বিলম্বিত পারিশ্রমিক।
২০২৪ সালের মার্চে সুইজারল্যান্ডের একটি আপিল আদালত ব্ল্যাটার ও প্লাতিনিকে আর্থিক অপরাধের অভিযোগ থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি দেয়।
এমএইচএম