বাংলা সিনেমার ইতিহাসে এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় জুটি রাজ্জাক ও ববিতা। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে কালজয়ী এই জুটি একসঙ্গে অভিনয় করেছেন ৪০টি সিনেমাতে।
তবে রাজ্জাকের সঙ্গে করা প্রথম সিনেমাতে মেয়ের চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পান ববিতা। যদিও শেষ পর্যন্ত তার নায়িকা হয়েই অভিনয় করেন। রাজ্জাকের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকীতে সেই স্মৃতিচারণাই করলেন এ বর্ষীয়াণ চিত্রনায়িকা। '
গণমাধ্যমে প্রকাশিত রাজ্জাককে নিয়ে ববিতার একটি স্মৃতিচারণায় রাজ্জাকের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা ও দীর্ঘ সময়ের গল্প তুলে ধরেন ববিতা। তিনি লেখেন, নায়করাজ রাজ্জাক ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের এক অনন্য নাম। আমার অভিনয় জীবনের শুরুতে তার হাত ধরেই সিনেমায় আসার সুযোগ হয়েছিল। রাজ্জাক ভাই ছিলেন আমার অভিভাবক, আমার শিক্ষক, আমার সহশিল্পী। আজ তার অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাকে স্মরণ করতে গিয়ে হৃদয় ভরে যায় স্মৃতি আর শ্রদ্ধায়।
পর্দায় বাবার চরিত্র থেকে ববিতার নায়ক হয়ে যান রাজ্জাক। সেই ঘটনা প্রসঙ্গে ববিতা বলেন, তিনি যেমন এসেছিলেন কিংবদন্তি নির্মাতা জহির রায়হানের হাত ধরে, আমিও এসেছিলাম জহির ভাইয়ের সিনেমার মাধ্যমে। আমরা সতীর্থ। আমাদের প্রথম সিনেমা ‘সংসার’-এ তিনি ছিলেন আমার বাবার চরিত্রে, আর সুচন্দা আপু ছিলেন মা। এরপর শেষ পর্যন্ত সিনেমায় আমি হলাম তার নায়িকা। প্রথম ছিলেন পর্দার বাবা, আবার তার সঙ্গেই নায়িকা! এই ভেবে বেশ লজ্জাই পেয়েছিলাম। শুটিং শুরুর পর রাজ্জাক ভাই আমাকে সহজ করে নিয়েছিলেন। সেই থেকে শুরু আমাদের দীর্ঘ পথচলা।
অভিনয় জীবনে রাজ্জাকের সঙ্গে অসংখ্য স্মৃতি জড়িয়ে আছে ববিতার। স্মৃতিচারণা করে ববিতা বলেন, ‘অনন্ত প্রেম’ সিনেমার শুটিংয়ের স্মৃতি আজও চোখে ভাসে। সিনেমার গান ‘ও চোখে চোখ পড়েছে যখনি...’ গেয়েছিলেন খুরশীদ আলম ও সাবিনা ইয়াসমিন; কথা লিখেছিলেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার; সুর করেছিলেন আজাদ রহমান। সেই গানটির শুটিং হয়েছিল কাপ্তাইয়ে; জঙ্গল ও পাহাড় পেরিয়ে তিন দিন ধরে। আশ্চর্যের বিষয়, গানের দৃশ্যের জন্য কোনো নৃত্য পরিচালক ছিলেন না। রাজ্জাক ভাই নিজেই আমাকে সাহস দিয়ে দৃশ্যটির পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি রসিকতার সুরে বলেছিলেন, নৃত্য পরিচালক হিসেবে কিন্তু আমার নাম যাবে পর্দায়।
ববিতার মতে, রাজ্জাক ভাই শুধু পর্দার নায়ক ছিলেন না; বাস্তব জীবনেও তিনি ছিলেন সত্যিকারের নায়ক। পরিবারের সবার সঙ্গে আমার ছিল আপন সম্পর্ক। যে কোনো পারিবারিক অনুষ্ঠানে তিনি আমাকে নিমন্ত্রণ করতেন। আড্ডা, হাসি-আনন্দে কাটত সেই সব মুহূর্ত। তিনি সব সময় শিল্পী আর চলচ্চিত্র নিয়ে ভাবতেন। তার ধ্যান-জ্ঞান ছিল ঢাকাই সিনেমা।
উল্লেখ্য, রাজ্জাক-ববিতা জুটির উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘আলোর মিছিল’, ‘অনন্ত প্রেম’, ‘বিরহ ব্যথা’, ‘সোহাগ’, ‘পীচ ঢালা পথ’, ‘টাকা আনা পাই’, ‘মানুষের মন’, ‘বাঁদী থেকে বেগম’, ‘আকাংখা’, ‘স্বরলিপি’, ‘আনারকলি’, ‘রাগী, ‘তওবা’, ‘নাতবৌ’, ‘আগমন’, ‘রাজবন্দী, ‘ভুল যখন ভাঙ্গলো’, ‘অসাধারণ, ‘প্রিয়তমা’, ‘ফুলশয্যা’, ‘লাইলী মজনু’, ‘প্রফেসর’ ইত্যাদি।
এনএটি
