ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৭ কার্তিক ১৪৩২, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

নির্বাচন ও ইসি

ইসলামী ব্যাংক ও সমমনা প্রতিষ্ঠান থেকে ভোট কর্মকর্তা নয়, ইসিকে বিএনপি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:২৪, অক্টোবর ২৩, ২০২৫
ইসলামী ব্যাংক ও সমমনা প্রতিষ্ঠান থেকে ভোট কর্মকর্তা নয়, ইসিকে বিএনপি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামী ব্যাংক ও সমমনা প্রতিষ্ঠানের কাউকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার দায়িত্ব না দিতে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) লিখিত দাবি জানিয়েছে বিএনপি।

জানা গেছে, ৩৬ দফার একটি প্রস্তাবনা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের কাছে দিয়েছে দলটি।

সেখানে বলা হয়েছে- নির্বাচনের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা বা পোলিং পার্সোনাল তথা প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে সর্বমহলের কাছে চিহ্নিত এমন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের নিয়োগ দেওয়া যাবে না। যেমন- ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, ইবনে সিনা ইত্যাদি। উল্লেখযোগ্য যে, ইতোমধ্যে ইসলামী ব্যাংকে সারাদেশে প্রায় পাঁচ হাজার কর্মকর্তা/কর্মচারীদের নিয়োগ বাতিল করেছে এবং এসব শূন্য পদে তড়িঘড়ি করে দলীয় লোকজন নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে মর্মে জনশ্রুতি রয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সিইসির কাছে ওই প্রস্তাব তুলে ধরেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কোনো প্রস্তাব দিইনি।

এদিকে বৈঠকের পর মঈন খান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিতর্কিত কাউকে যেন ভোটের দায়িত্বে নিয়োগ দেওয়া না হয়। এ সময় তার হাতে ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে করণীয় প্রস্তাবসমূহ নির্বাচন কমিশনের সহিত সভার জন্য প্রস্তাবিত কার্যপত্র’ শীর্ষক একটি দলিল লক্ষ্য করা গেছে।

অন্য প্রস্তাবগুলো হলো- প্রশাসনের শতভাগ নিরপেক্ষতা নিশ্চিতের জন্য এখনই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে এই অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশনের দৃঢ় ভূমিকা পালন করতে হবে; ডিসি, এসপিসহ মাঠ প্রশাসনকে সম্পূর্ণ ঢেলে সাজাতে হবে; ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের অবৈধ নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট সব বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে আসন্ন নির্বাচনে কোনোরূপ দায়িত্ব প্রদান করা যাবে না; রিটার্নিং অফিসার হিসেবে প্রশাসনের অফিসারদের পাশাপাশি ইসি কর্মকর্তাদেরও নিয়োগ দিতে হবে; নির্বাচনকালীন নির্বাচনের সমগ্র প্রক্রিয়ায় জড়িত বেসামরিক প্রশাসন ও সামরিক বাহিনীসহ সব বাহিনীর কর্মকর্তার বদলি, পদায়ন, অবস্থান, দায়িত্ব ও তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ ইসির অধীন নিতে হবে; ভোটের কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে সামরিক বাহিনী, বিজিবি, র‍্যাব, পুলিশসহ সব বাহিনীর ভোটকেন্দ্রে কঠোর অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে;  নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালনে ইসির কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিতে হবে; গোপনকক্ষ ব্যতীত ভোটকেন্দ্রের দৃশ্য বাইরে থেকে পর্যবেক্ষণের জন্য স্থাপন করতে হবে সিসি ক্যামেরা; ভোটের সময়সূচি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেক মাঠ নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে অভিযোগ কেন্দ্র স্থাপন ও অভিযোগ প্রাপ্তির ১২ ঘণ্টার মধ্যে নিষ্পত্তি করে অভিযোগকারীদের অবহিত করতে হবে; ভোটের আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডির নির্বাচন স্থগিত করতে হবে; বিগত সরকারের আমলে মিথ্যা, বানোয়াট ও গায়েবি মামলা নির্বাচনী সময়সূচি জারির আগেই প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করতে হবে; তফসিল ঘোষণার আগেই ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে দলীয় বিবেচনায় প্রদত্ত সব অস্ত্র সরকারের কাছে জমা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে; অগণিত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের আশু ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; সীমান্ত পথে আসা অবৈধ অস্ত্র, নকল টাকা, কালো টাকার অনুপ্রবেশ বন্ধের ব্যবস্থা করতে হবে; বাতিল করতে হবে সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানে এবং দূতাবাসগুলোতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ; নির্বাচন অবাধ, বিশ্বাসযোগ্য, শান্তিপূর্ণ ও পক্ষপাতহীন হতে হবে; নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগের অনুকূল পরিবেশ ও সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

এ ছাড়া নির্বাচনে সম্ভাব্য সব কারচুপির সুযোগ প্রতিরোধ করে নিখুঁত ও ত্রুটিমুক্ত ফলাফল নিশ্চিতকরণ; ভোটকেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগে অর্থশক্তি, পেশিশক্তি ব্যবহার ও প্রভাব প্রতিরোধ; নির্বাচনী এলাকায় বহিরাগত বহিষ্কার; নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে সংবিধান ও আইনের প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগে নির্ভীক হতে হবে; নির্বাচন যে অবাধ, নিরপেক্ষ ও কারচুপিমুক্ত হচ্ছে তা দেশ ও জাতির কাছে দৃশ্যমানের ব্যবস্থাগ্রহণ; ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত বিধান; কোনো রাজনৈতিক দল, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কর্তৃক বিতর্ক তৈরি করে এমন কোনো বক্তব্য যাতে না দেয় তার প্রাক ব্যবস্থা গ্রহণ; ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ায়- এমন সব অপপ্রচার রোধ; ভোটারদের প্রভাবিত করে এমন ধর্মীয় প্রলোভন বা ধর্মীয় দণ্ড প্রদানের ভীতি প্রদর্শন রোধ; অর্থ, দুর্নীতি ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচনের ব্যবস্থা; ভোটকেন্দ্র ভোটারদের কাছাকাছি নেওয়া অর্থাৎ কম সংখ্যক ভোটারের জন্য কেন্দ্র স্থাপন; ভোটের নিয়ন-কানুন সম্পর্কে পত্র-পত্রিকা, রেডিও-টেলিভিশন, লিফলেট ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার; ভোটের দায়িত্বে নিয়োজিতদের কোনো গাফিলতি পরিলক্ষিত হলে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ; ভোটকেন্দ্র ও তার বাইরে সন্ত্রাসী তৎপরতা তাৎক্ষণিকভাবে দমন; স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের তাদের নিজস্ব জেলায় দায়িত্ব প্রদান নয় ও দলের মতাদর্শধারীদের পর্যবেক্ষক হিসেবে অনুমতি নয়;  আনসার ও ভিডিপি মোতায়েনের কোনোক্রমেই নিজ জেলায় নয়; কমিউনিটি পুলিশকে কোনোভাবেই ভোটকেন্দ্রে মোতায়েন নয়; ছবিসহ ভোটার তালিকা পোলিং পার্সোনালসহ সব পোলিং এজেন্টদেরও যথাসময়ে সরবরাহকরণ; ভোট গণনা শেষ হবার পরপরই ফলাফল কেন্দ্র থেকে সরাসরি ঘোষণা; প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগ আইনানুগ স্বচ্ছতার সঙ্গে করা ও প্রবাসী ভোটারদের তালিকা রাজনৈতিক দলকে যৌক্তিক সময়ের আগেই সরবরাহ করার প্রস্তাবও করেছে বিএনপি।

ব্রিফিয়ে আবদুল মঈন খান বলেন, বিগত ১৫ বছর দেশে যেভাবে প্রশাসনিক বিভাগকে তৈরি করা হয়েছিল, মোটিভেট করা হয়েছিল রাজনৈতিকভাবে। বিগত তিনটি নির্বাচনে নির্বাচনের নামে কী হয়েছে। এটা কিন্তু আমার কথা নয় ইকোনমিস্ট থেকে শুরু করে নিউইয়র্ক টাইমস থেকে শুরু করে বিশ্বের যত নামিদামি পত্রপত্রিকা সবাই বলেছে এই তিনটি নির্বাচন হয়েছিল প্রহসনের নির্বাচন। কাদের দ্বারা হয়েছিল? এই যে যারা নির্বাচনের দিন সরকারি কর্মকর্তা হয়েও নির্বাচন কমিশনের পক্ষে নির্বাচন পরিচালনা করেছিল তাদের কারণে হয়েছিল। এই কথাটি আমরা গুরুত্ব দিয়ে বলেছি।  

তিনি আরও বলেন, বিশেষ করে ১৫ বছরে যাদের চরিত্র হনন করেছিল আওয়ামী লীগ, ১৫ মাসে তাদের সবকিছু শোধিত হয়ে যাবে এতটা আশা করা আসলে বাস্তবতা নয়। কাজেই নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক থাকতে হবে এবং এটাও বাস্তবতা। নির্বাচন কমিশনের তো নিজস্ব লোকবল বা জনবল ১০ লাখ নেই, যে তাদের দিয়ে নির্বাচন করবে। কাজে এই যে একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সেই বিষয়টি সম্বন্ধে তাদের সচেতন করা।  

আবদুল মঈন খান বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে বলেছি অনেকেই যে ভয়টা পাচ্ছি নির্বাচনের দিনে বিশৃঙ্খলা হবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্ষতি হবে। তবে আমি বিশ্বাস করি দেশের মানুষ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ভোটদানের মাধ্যমে সঠিকভাবে তারা তাদের অধিকার প্রয়োগ করবে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আমরা যে আশঙ্কা করছি সে আশঙ্কা থাকবে না।

বিগত নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত সবাইকে বাদ দেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের সব ছুড়ে ফেলে দিয়ে আমি সব শূন্য করে দিয়ে আবার নতুন করে একজন একজন একজন করে চাকরি দিয়ে স্কুলশিক্ষক এ পয়েন্ট করে এই দেশ চালাব, এটা কিন্তু বাস্তবতা নয়। কঠিন বাস্তবতাগুলো আমাদের মনে রাখতে হবে। তারা পরিবেশ পরিস্থিতির চাপে এ ধরনের আচরণ করেছিল। অনেক ক্ষেত্রে তাদের বাধ্য করা হয়েছিল। এই নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছি যে, তাদের সেই কনফিডেন্স বাংলাদেশের মানুষের মনে জাগিয়ে তুলতে হবে যে, আমরা ভুল পথে যাব না। আমরা অন্যায়ের পথে যাব না।

জোট নিয়ে আবদুল মঈন খান বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জোট বা কোয়ালিশন একটি স্বীকৃত পন্থা। আমরা যে পদ্ধতিতে বিশ্বাস করি, গণতান্ত্রিক পদ্ধতি। সেই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কোয়ালিশন কিন্তু একটি স্বীকৃত পন্থা। ২০০১ সালের উদাহরণে ফিরে যাই। সে সময় কিন্তু আমরা প্রাক নির্বাচনী কোয়ালিশন করেছিলাম। সেটা জামায়াতের সঙ্গে হয়েছিল। আমাদের মন্ত্রিসভায় জামায়াত থেকে দুজন মন্ত্রী ছিলেন। কাজেই এটা এমন কোনো আশ্চর্য বিষয় নয়। এটা নির্বাচনে প্রাক নির্বাচনী সমঝোতা হয়। কোয়ালিশন হয়।  

ইইউডি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।