ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ ভাদ্র ১৪৩২, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

নির্বাচন ও ইসি

বিদেশে নির্বাচনী প্রচার চালানো যাবে না

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:২০, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৫
বিদেশে নির্বাচনী প্রচার চালানো যাবে না

বিদেশে নির্বাচনী প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আনছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ছাড়া পোস্টারে নিষেধাজ্ঞা আসলেও ফিরছে বিলবোর্ড।

রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর নির্বাচনী আচরণবিধি সংশোধন করে এমন বিধান আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এরইমধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য একগুচ্ছ সংশোধনী প্রস্তাব পাঠিয়েছে সংস্থাটি। মন্ত্রণালয় থেকে ভেটিং হয়ে এলেই গেজেট প্রকাশ করা হতে পারে।

ইসি সচিব আখতার আহমেদ এ নিয়ে জানান, এমন সংশোধনী প্রস্তাব ইতিমধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ভেটিং হয়ে এলেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচন এলেই দলগুলোর নেতা-কর্মী বা সমর্থকরা বিদেশে ভোটের প্রচার করেন। এতে অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সৃষ্টি হয়, যাতে দেশের ভাবমূর্তি বিদেশের মাটিতে নষ্ট হয়।  

অন্যদিকে নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাবও বেড়ে যায়। এসব বিবেচনায় করেই বিদেশের মাটিতে দেশের নির্বাচনী প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এদিকে নির্বাচনী প্রচারে পোস্টারের প্রচার নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। তবে বিলবোর্ড আনা হচ্ছে। এক্ষেত্রে একজন প্রার্থী তার নির্বাচনী আসনে সর্বোচ্চ ২০টি বিলবোর্ডে প্রচার চালাতে পারবেন।

প্রচারের জন্য জনসভা, পথসভার কথা বলা হলেও এক্ষেত্রে কোনো যন্ত্রচালিত যানবাহন ব্যবহার বা মশাল ব্যবহার করা যাবে না। জনসভার জন্য কমপক্ষে ৭২ ঘণ্টা পূর্বে নিতে হবে পুলিশের অনুমতি, আর ৪৮ ঘণ্টা আগে স্থান ও সময় পুলিশকে জানাতে হবে।

পোস্টারের ব্যবহার তুলে দিয়ে ব্যানারে প্রচার চালানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে খসড়ায়। এক্ষেত্রে কাপড়ের তৈরি সাদা কালো ব্যানার টানানো যাবে, যেখানে প্রার্থী ও দলীয় প্রধান ছাড়া কারো ছবি ব্যবহার করা যাবে না।

অনলাইনে প্রচার ও জনসংযোগ 

প্রথমবারের মতো অনলাইনে প্রচারের জন্য আইনি কাঠামো আনছে কমিশন। এছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের আগে সব ধরনের প্রচারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও জনসংযোগ করার পাশাপাশি অনলাইনে প্রতীক বরাদ্দের পূর্বেও প্রার্থী ও তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি ভিডিও কনটেন্ট, বিজ্ঞাপন বা বিভিন্ন প্রকার প্রচার চালাতে পারবেন ভোটগ্রহণ শুরুর ৪৮ ঘণ্টা আগ পর্যন্ত।  

সেজন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে কোন মাধ্যমে প্রচার চালাবেন তার সুনির্দিষ্ট তথ্য ও কবে থেকে প্রচার চালাবেন সে তথ্যও দিতে হবে। এ ছাড়া অনলাইনে প্রচারের ব্যয়ের হিসাবও প্রতি সাতদিন পরপর রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হবে। তবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের অপব্যবহারের ক্ষেত্রে থাকছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা।

মাইকে প্রচারের সময়

নির্বাচনী প্রচারের মাইকের ব্যবহার তথা শব্দ দূষণ কমাতে পরিবেশ আইন প্রতিপালনের উদ্যোগ নিচ্ছে কমিশন। এক্ষেত্রে দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। আগে যা রাত আটটা পর্যন্ত ছিল। মাইকের শব্দ অবশ্যই ৬০ ডেসিবলের মধ্যে রাখতে হবে।

পলিথিনের ব্যবহার রোধ

নির্বাচনী প্রচারে পলিথিন বা প্লাস্টিকের ব্যবহারে ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে বিধিমালায় সংশোধন আনা হচ্ছে। এক্ষেত্রে লিফলেট, হ্যান্ডবিল, ব্যানারের পলিথিন বা প্লাস্টিক ব্যবহার করা যাবে না। আগে এ নিয়ে ইসির নির্দেশনা থাকলেও বিধিমালায় কোনো বিধান ছিল না।

এ ছাড়া প্রস্তাবিত বিধিমালায় সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সংজ্ঞা সংশোধন করে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদেরও চিহ্নিত করা হচ্ছে, যারা কোনোভাবেই নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার হলে কেবল ভোট দিতে যেতে পারবেন। সরকারি, বেসরকারি স্থাপনায় ব্যানার লিফলেট সাঁটিয়ে দেওয়া যাবে না। টানিয়ে প্রচার করতে হবে। আগের মতোই নিষিদ্ধ থাকবে দেয়াল লিখন।

প্রস্তাবিত বিধিমালায় ‘নির্বাচন-পূর্ব সময়’-এর সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বিদ্যমান আইনে নির্বাচন পূর্ব সময় বলছে তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ করা সময় পর্যন্ত বোঝায়।  

কিন্তু এখন পুরো সময়টিতে তিনটি ভাগে ভাগ করা হচ্ছে। নির্বাচন পূর্ব সময় বলতে-জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হতে সংসদের সাধারণ নির্বাচন কিংবা কোনো শূন্য আসনের নির্বাচনের ক্ষেত্রে কমিশনের তফসিল ঘোষণার আগের সময় পর্যন্ত বোঝানো হচ্ছে।  

আর নির্বাচনকালীন সময় বলতে-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দিন থেকে ফল গেজেট আকারে প্রকাশ পর্যন্ত সময়কে বোঝানো হচ্ছে। আর নির্বাচন পরবর্তী সময় বলতে গেজেট আকারে ফল প্রকাশের পরবর্তী ৪৫দিন পর্যন্ত সময়কে বোঝানো হচ্ছে।  

এক্ষেত্রে নির্বাচন-পূর্ব সময়ে কোনো প্রকল্প অনুমোদন, ফলক উন্মোচন ইত্যাদি নিষিদ্ধ না হলেও নির্বাচনকালীন নিষিদ্ধ থাকবে। ভোটারকে ভোটার স্লিপ সরবরাহ করতে কোনো বাধা না থাকলেও প্রার্থীর নাম, ছবি ও প্রতীক ছাড়া অন্য কিছু উল্লেখ করা যাবে না।  

উল্লেখ থাকতে হবে মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা, সংখ্যা ও তারিখ। গেট, তোরণ নির্মাণের ক্ষেত্রে আগের মতো নিষেধাজ্ঞা থাকছে। জীবন্ত প্রাণী প্রতীক হিসেবে ব্যবহার না করার বিধানও বহাল থাকছে। প্রচারে ব্যবহার করা যাবে না ড্রোন বা কোয়াডকপ্টার।

শাস্তি 

নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য ব্যক্তি লঙ্ঘন করলে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা ও ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান ছিল। এবার তা বাড়ানো হচ্ছে।  

আবার অনলাইন প্রচারে বিধান ভাঙলে ডিজিটাল অথবা সাইবার সুরক্ষা আইনের আওতায় শাস্তি হবে। এ ছাড়া ক্ষেত্রবিশেষে কমিশন তদন্ত সাপেক্ষে কোনো প্রার্থীর প্রার্থিতাও বাতিল করতে পারবেন।  

এক্ষেত্রে প্রার্থী ও দলকে বিধিমালা মেনে চলার প্রত্যায়ন ইসির কাছে জমা দিতে হবে একইসঙ্গে বিধান লঙ্ঘনের কারণে শাস্তি মেনে নেওয়ার অঙ্গীকারও করতে হবে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ড্রোন বা কোয়াডকপ্টার, এ ধরনের কোনো কিছু কোনো প্রার্থী বা তার এজেন্ট বা কোনো কেউ ব্যবহার করতে পারবেন না। আমরা এআই মিসইউজের বিষয়ে আমরা কঠোরভাবে এখানে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছি।  

তিনি বলেন, প্রবলেমটা হলো মিসইনফরমেশন, ডিসইনফরমেশন, ম্যাল ইনফরমেশন। এটা হচ্ছে প্রবলেম, যে মিসইনফরমেশন বলতে মিথ্যা কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। যেটা আমাদের ক্যাজুয়াল বিহেভিয়ারের জন্য হয়ে থাকে। আমি একটা উপাত্ত পেলাম। আমি ভেরিফাই করলাম না সত্য না মিথ্যা। আমি শেয়ার করা শুরু করলাম। এটা হচ্ছে মিসইনফরমেশন।  

তিনি আরও বলেন, ডিসইনফরমেশন সুপরিকল্পিতভাবে করা। অর্থাৎ একটা মিথ্যা কথা অসৎ উদ্দেশ্যে আমি ছড়িয়ে দিচ্ছি। আর ম্যালইনফরমেশন হলো আমার ছড়ানোর কথা না, কিন্তু আমি ছড়িয়ে দিচ্ছি। এই তিনটার মধ্যে এখন বিশেষ করে ডিসইনফরমেশন, যেটায় ইউজ অব এআইটা বেশি হয়।

ইইউডি/আরএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।