ঢাকা, রবিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩২, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ২১ শাওয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ঢাকা কলেজ-সিটি কলেজ: আট মাসে ১০ সংঘর্ষ, নেপথ্যে কী?

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২৫
ঢাকা কলেজ-সিটি কলেজ: আট মাসে ১০ সংঘর্ষ, নেপথ্যে কী?

ঢাকা: তুচ্ছ ঘটনায় বার বার সংঘর্ষে জড়াচ্ছে ঢাকা কলেজ ও ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব থেকে।

পরে তাতে জড়িয়ে পড়ে পুরো কলেজ।

বাংলানিউজের বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় অবস্থিত এই দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা শেষ আট মাসে অন্তত ১০টি ছোটবড় সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। এসব ঘটনার প্রায় প্রত্যেকটির সূত্রপাত একই ধাঁচে।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, শুরুতে কলেজের কোনো একজন শিক্ষার্থীকে অপর কলেজের শিক্ষার্থীরা মারধর করেন। পরে তার প্রতিশোধ নিতে যান অপর কলেজের একদল। এভাবে দুটি কলেজের শিক্ষার্থীরাই পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এসব সংঘর্ষে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা একে অপরের দিকে ইটপাটকেল ছুঁড়ে মারেন। এতে একাধিকজন আহন হন।

এসব ঘটনায় প্রায় সবই প্রথমে শিক্ষার্থীকে মারধরের কোনো নির্ভরযোগ্য কারণ জানা যায় না। ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, নারীঘটিত বিবাদ এবং আধিপত্য বিস্তার থেকে এসব মারামারি ঘটে ও পরে তা ছড়িয়ে পড়ে বলে অনেকে মনে করছেন।

অনলাইনে কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রায়শই পরস্পরকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন। তবে বিবাদ-দ্বন্দ্ব থেকে রাস্তায় নেমে পড়লেই দুটি পক্ষকে নিয়ন্ত্রণে বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। খুব কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ার শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি হন বারংবার।

সর্বশেষ গত ১৫ এপ্রিল সংঘর্ষে জড়িয়েছে কলেজ দুটি। শিক্ষার্থীরা জানান, সোমবার সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের দুই শিক্ষার্থীকে মারধর করলে ঢাকা কলেজের একদল শিক্ষার্থী সায়েন্সল্যাব এলাকায় যায়। এসময় দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। দু’পক্ষ ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে একজন আহত হন।

সংঘর্ষের বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম জানান, কী কারণে সংঘর্ষ হয়েছে তা শিক্ষার্থী এবং আল্লাহ ছাড়া আর কেউ বলতে পারবেন না। ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে পরে তদন্ত করে দেখব আমরা। তবে তারা (শিক্ষার্থীরা) মাঝে মধ্যেই এই কাজ (সংঘর্ষ) করে থাকে।

এর আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের সংঘর্ষে ৭ জন আহত হন। এখানেও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের ২ জনের ওপর হামলা করেন বলে রমনা বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার (ধানমন্ডি জোন) শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান জানান। যদিও হামলার কারণ জানাতে পারেননি তিনি।

এর আগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষে জড়ান ঢাকা সিটি কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা। আজিমপুর এলাকায় সিটি কলেজের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগে দ ‘পক্ষ পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরস্পর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় আহত হন ৫ জন। এর আগে ৫ ফেব্রুয়ারি দু’পক্ষের মধ্যে প্রায় ঘণ্টাখানেক উত্তেজনা চলে।

এ বছরের ২৫ জানুয়ারি সংঘর্ষে জড়ান ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থীকে একা পেয়ে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা মারধর করে কলেজে আটকে রাখেন। এমন অভিযোগ ঢাকা কলেজে ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনা তৈরি হয়। এরপর ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।

১৯ জানুয়ারি এক শিক্ষার্থীর ওপর হামলা করেন ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় দু’পক্ষ পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তবে তার কারণ জানা যায়নি।

২০২৪ সালের ১৯ নভেম্বর বাসে ওঠাকে কেন্দ্র করে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুরের কথা ছড়িয়ে পড়লে পরদিন ২০ নভেম্বর দু’পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত এই সংঘর্ষ চলে। প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে জলে এই সংঘর্ষ। এতে অন্তত ৩৭ জন আহত হন। ঢাকা কলেজ একদিন এবং সিটি কলেজ তিনদিন বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

এর আগে ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকা কলেজ এবং আইডিয়াল কলেজের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। কথা কাটাকাটির জের ধরে সংঘর্ষ শুরু হলে পরে তা বড় আকার ধারণ করে। এই সংঘর্ষে ১৮ জন আহত হয়। পরে ১৫ সেপ্টেম্বর ফের আইডিয়াল কলেজ ঢাকা কলেজের বাসে হামলা করে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এসব ঘটনায় বার বার সতর্ক করেও কোনো অংশকে ক্ষান্ত করা যায়নি। সর্বশেষ ১৫ এপ্রিলের ঘটনায় ঢাকা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ এফ এম মোবারক হোসেন শিক্ষার্থীদের সতর্ক করেছেন। হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তবে আগেও একাধিকবার সতর্ক করলে কোনো কাজ হয়নি।  

ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম ইলিয়াস বলেন, মারধরের ক্ষেত্রে প্রথমে কাজ করে ইগো। এক ধরনের সুপেরিয়রিটি কমপ্লেক্স আছে। ছোট ঘটনা বড় আকার ধারণ করে। এদিকে সিটি কলেজ এবং আইডিয়াল কলেজে সহশিক্ষা আছে, ঢাকা কলেজে নেই। জুলাই অভ্যুত্থানের সময় এই তিন কলেজ একসাথে কাজ করেছে। তবে এরপর বন্যায় ত্রাণ বিতরণের সময় তাদের সঙ্গে কিছু কথাকাটাকাটি হয়েছে।

তিনি বলেন, এখানে একটি কোচিং সেন্টার রয়েছে, সেখানেও নানা ব্যাপারে কথা কাটাকাটি হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, একই মহল্লায় থেকে তিনজন আগে একই স্কুলে পড়েছে। এখন তিনজন তিন স্কুলে পড়ছে। এদের মধ্যে সুপেরিয়রিটি কমপ্লেক্স থাকে। একেবারে এসব ব্যক্তিগত পর্যায় ও মহল্লার ঘটনাগুলো এরা কলেজে নিয়ে আসে। তখন এটা ছড়িয়ে গিয়ে বড় আকার ধারণ করে।

এসব ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক ইন্ধন থাকতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, তবে এগুলো কখনো সামনে আসে না। তাই আমরা বলতে পারি না। এই তিনটি কলেজসহ ৫টি কলেজ নিয়ে আমাদের একটি টিম রয়েছে। তারা প্রতিদিন সবকয়টি পথ ঘোরে। তখন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া যায়। ঈদের পর এটি কিছুটা নিষ্ক্রিয় রয়েছে। সচল করা গেলে এসব ঘটনা কমে আসবে।

তিনি আরও বলেন, গত কয়েকটি ঘটনার অভিজ্ঞতায় মনে হয়েছে, একবার মাঠে নেমে পড়লে এদের নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কঠিন। কেউ কাউকে ছাড় দিতে চায় না। সবসময় পুলিশের অত বড় ফোর্স থাকে না যে ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২৫
এফএইচ/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

শিক্ষা এর সর্বশেষ