ঢাকা: খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য ড. অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ বিএনপি ও ছাত্রদলের দলীয় স্বার্থ বাস্তবায়ন করছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস)।
সম্প্রতি কুয়েটে সংগঠিত সহিংস ঘটনায় উপাচার্যের বিতর্কিত ভূমিকা তুলে ধরে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার পদত্যাগ চেয়েছে সংগঠনটি।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি এসব দাবি জানায়। সংগঠনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সদস্য সচিব জাহিদ আহসান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক তাহমীদ আল মোদ্দাসসীর চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য সচিব মহির আলম। সংগঠনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক আব্দুল কাদের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন না।
লিখিত বক্তব্যে জাহিদ আহসান বলেন, কুয়েটে দলীয় ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও ছাত্রদলের জোরপূর্বক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জের ধরেই হামলার ঘটনা ঘটেছে। দলীয় ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও কুয়েটের উপাচার্য ড. মোহাম্মদ মাছুদের পৃষ্ঠপোষকতায় ছাত্রদল কার্যক্রম পরিচালনা করে। এমনকি ছাত্রদল-যুবদল-বিএনপির যৌথ হামলার সময়েও উপাচার্যকে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। সেই হামলায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়।
তিনি বলেন, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীরা যখন বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার দাবিতে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে, সেই সময়েই গত ১০ এপ্রিল ২২ শিক্ষার্থীর নামে মিথ্যা মামলা করা হয়। যদিও এখন পর্যন্ত হামলাকারী কারও বিরুদ্ধেই কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। মামলার পরপরই সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এসব সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানান জাহিদ।
জাহিদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশেষত উপাচার্য শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে গিয়ে বিএনপির দলীয় স্বার্থের পক্ষে অন্যায্য অবস্থান ব্যক্ত করছে। কুয়েটের উপাচার্য ড. মোহাম্মদ মাছুদ ছাত্রদলের কুয়েট শাখার সভাপতি ছিলেন। আমরা উপাচার্যের শিক্ষার্থী বিরোধী অবস্থান প্রত্যাখ্যান করছি।
এ সময় তারা সোমবার রাজধানীর মিরপুরে এক সহিংসতার ঘটনায় ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় সদস্য মাহিন আহমদের ওপর হামলার নিন্দা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রসংসদের পক্ষ থেকে ৫ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবির মধ্যে উল্লেখ রয়েছে- ১. কুয়েট ছাত্রদল-যুবদলের হামলা, মামলা এবং শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের বিষয়ে পূর্ণ নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; ২. আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের নামে মামলা এবং বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করতে হবে; ৩. কুয়েটের উপাচার্য ড. মোহাম্মদ মাছুদকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে। পদত্যাগ না করলে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাবলে অপসারণ করতে হবে; ৪. আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কুয়েটের সব হল খুলে দিতে হবে; ৫. মাহিন আহমেদের ওপর হামলাকারীদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে।
দাবি মেনে নেওয়া না হলে কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সংগঠনের নেতারা।
গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক তাহমীদ আল মোদ্দাসসীর চৌধুরী বলেন, ছাত্রলীগের সময়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটতো। তারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করত। পুলিশ এসে আহতদের নামে মামলা দিয়ে ধরে নিয়ে যেত। বর্তমান কুয়েটেও একই ঘটনা ঘটছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে আজ একটি নির্বাচনের টাইমলাইন ঘোষণা করা হয়েছে। প্রশাসনের রোডম্যাপের ঘোষণায় দীর্ঘসূত্রিতা ছাত্রসংসদ ভালো চোখে দেখছে না বলেও জাহিদ জানান।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তফসিল ঘোষণা বাতিল হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছাত্রদলের এই মাতব্বরি ও ছাত্রসংসদ নির্বাচন বন্ধ করার পায়তারা আমরা দেখতে চাই না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা আরও শক্ত হবেন। বিশ্ববিদ্যালয় কাউকে ইজারা দেবেন না।
তিনি বলেন, ছাত্ররা যাদেরকে নির্বাচিত করবে, তারাই ছাত্রদের নেতৃত্ব দেবে। উড়ে এসে জুড়ে বসে ছাত্রদের প্রতিনিধি দাবি করবে, এরকম মাতব্বরি বাংলাদেশে হবে না। ভর্তি হওয়ার ১৬ বছর পর, ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার ১০ বছর পর ছাত্রদের প্রতিনিধি দাবি করা যাবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০২৫
এফএইচ/এমজে