খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা এবং ৩৭ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং প্রশাসনের ভূমিকা ‘নেতিবাচক’ ও ‘বিতর্কিত’ বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় তারা কুয়েট উপাচার্য ও প্রশাসনের কঠোর জবাবদিহিতা চেয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বুয়েট শিক্ষার্থীরা এ দাবি জানিয়েছেন।
বুয়েট শিক্ষার্থীদের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফারাবি হাসান ও আরমান হাসান লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, আমরা কুয়েট প্রশাসনের অনৈতিক, পক্ষপাতদুষ্ট এবং দমনমূলক আচরণের বিরুদ্ধে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি। ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েট ক্যাম্পাসে স্থানীয় ছাত্রদল ও বিএনপিপন্থি সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ছাত্ররাজনীতিমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবির বিপরীতে শিক্ষাঙ্গনের অভ্যন্তরে এমন বর্বরোচিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাতে না জানাতেই আমরা দেখতে পাই, প্রায় দুই মাস পর কুয়েট প্রশাসনের সহযোগিতায় নিরপরাধ, আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের নাম ব্যবহার করে ২২ জনের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, এই হামলার প্রকৃত তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া এবং অপরাধীদের যথাযথভাবে চিহ্নিত না করেই কীভাবে আন্দোলনরত নিরীহ শিক্ষার্থীদের নাম মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হলো, তা আমাদের মাঝে বিস্ময়ের উদ্রেক করে এবং বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বলাই বাহুল্য, কুয়েট প্রশাসনের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই প্রক্রিয়াটি কুয়েট প্রশাসন ও তদন্ত কমিটির নিষ্ক্রিয়তা, ব্যর্থতা ও পক্ষপাতিত্বের প্রতিফলন।
তারা বলেন, আন্দোলন দমন করার লক্ষ্যে প্রশাসন একের পর এক দমনমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। এরমধ্যে হল বন্ধ করে দেওয়া; শিক্ষার্থীরা হল ত্যাগে অসম্মতি জানালে পানি, বিদ্যুৎ ও ওয়াইফাই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে স্বৈরাচারী কায়দায় হল ত্যাগে বাধ্য করা; ঈদের সময় শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি অথচ বহিরাগতদের অনায়াসে প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়া; চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো ন্যায়সঙ্গত দাবি নিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর দোষারোপ করে অপপ্রচার চালানো এবং হলে প্রবেশ করতে না দিয়ে শিক্ষার্থীদের রাতে খোলা আকাশের নিচে রাস্তায় থাকতে বাধ্য করে নিকৃষ্টতম নজির স্থাপন করেছে কুয়েট প্রশাসন।
কুয়েটের সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের ঘটনা প্রসঙ্গে বুয়েট শিক্ষার্থীরা বলেন, নিরাপদ ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারী কোনো নিরপরাধ শিক্ষার্থীকে আন্দোলন দমনের লক্ষ্যে বহিষ্কার করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা বুয়েট শিক্ষার্থীরা কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে পাশে আছি এবং এই মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার, প্রকৃত দোষীদের বিচার, কুয়েট ভিসি ও কুয়েট প্রশাসনের বিতর্কিত ও নেতিবাচক ভূমিকার কঠোর জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জোর দাবি জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০২৫
এফএইচ/এমজেএফ