ঢাকা: লজিস্টিক খাতের উন্নয়নে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো আমাদের কোন দীর্ঘমেয়াদী বৃহৎ মাস্টারপ্ল্যান নেই। এমনটাই মনে করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়) ড. শেখ মইনউদ্দিন।
রোববার (২৯ জুন) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) মিলনায়তনে “বাংলাদেশের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে লজিস্টিক খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধি” শীর্ষক সেমিনারে এ কথা জানানো হয়।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়) ড. শেখ মইনউদ্দিন উক্ত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন-এর চেয়ারম্যান মোঃ সলিম উল্লাহ এবং বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড)-এর চেয়ারপার্সন আবুল কাসেম খান এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগদান করেন।
প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে ড. শেখ মইনউদ্দিন বলেন, এলডিসি পরবর্তী সময়ে বৈশ্বিক বাণিজ্যে আমাদের প্রতিযোগী সক্ষমতা বাড়াতে আমাদের সড়ক, রেল, নৌ, বিমান ও সমুদ্র বন্দর এবং ইনফরমেশন সুপার হাইওয়ের সমন্বয়ে একটি বহুমাত্রিক পরিবহন ইকোসিস্টেম প্রয়োজন, অন্যথায় আমাদের অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
তিনি বলেন, লজিস্টক খাতের উন্নয়নে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো আমাদের কোন দীর্ঘমেয়াদী বৃহৎ মাস্টারপ্ল্যান অনুপস্থিতি। আগামী ২৫-৫০ বছরের জন্য উপযোগী একটি সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থা চালুর লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে এবং এক্ষেত্রে বেসরকারিখাতকে এগিয়ে আসতে হবে।
অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, লজিস্টিক পারফরম্যান্স ইনডেক্স ২০২৩’-এর তথ্য মতে লজিস্টিক খাতে বিশ্বের ১৩৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৮, বন্দরে যানজট, কাস্টমস প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা, আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের অনুপস্থিতি ও অপ্রতুল অবকাঠামো আমাদের আমদানি-রপ্তানির পাশাপাশি সামগ্রিক ব্যবসায়িক প্রক্রিয়াকে প্রতিনিয়ত ব্যাহত করছে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশ’র চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, বৈশ্বিক বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে বাণিজ্য সহযোগিতা এবং লজিস্টিক সক্ষমতা বাড়নোর কোন বিকল্প নেই। লজিস্টিকের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি উল্লেখ করেন, কেবলমাত্র এখাতে যদি ২৫ শতাংশ ব্যয় হ্রাস করা যায়, তাহলে প্রায় ২০ শতাংশ রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব, সেই সাথে পরিবহন ব্যয় ১ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব হলে ৭.৪ শতাংশ রপ্তানি বৃদ্ধি করা সম্ভব। জাতীয় লজিস্টিক নীতিমালার কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য সেক্টর ডেভেলপমেন্ট রোডম্যাপ মাস্টারপ্ল্যান একান্ত আবশ্যক।
সেমিনারের নির্ধারিত আলোচনায় অংশ নেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত সচিব মোঃ হাবিবুর রহমান, ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল)-এর নির্বাহী পরিচালক আলমগীর মোর্শেদ, ডিপি ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’র কান্ট্রি ডিরেক্টর শামীম উল হক, বাংলাদেশ সাপ্লাইচেইন ম্যানেজমেন্ট সোসাইটির সভাপতি নকিব খান এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)’র সিনিয়র প্রজেক্ট অফিসার (ট্রান্সপোর্ট) হুমায়ুন কবীর অংশগ্রহণ করেন।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত সচিব মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোর সক্ষমতা দাঁড়াবে ১০ মিলিয়ন টিইইউস, যার ব্যবহার নিশ্চিত করতে বেসরকারিখাতকে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম আরো বহুগুণে বৃদ্ধি করতে হবে।
তিনি জানান, যেহেতু প্রতি ৫ বছরে প্রায় ২শতাংশ করে জমি কমে যাচ্ছে, তাই লজিস্টিক বিশেষকরে পরিবহন পরিসেবায় রেলওয়ে হতে পারে সবচেয়ে ব্যয় সাশ্রয়ী উপযোগী ব্যবস্থা। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সীতাকুণ্ড পর্যন্ত কেবলমাত্র ট্রাক ও লরির জন্য একটি বিশেষায়িত এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করতে পারলে আমদানি-রপ্তানির পণ্য পরিবহন প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক সুফল পাওয়া যাবে বলে অভিমত জ্ঞাপন করেন। এছাড়াও পানগাঁও নদীবন্দরকে সফলভাবে পরিচালনার জন্য বেসরকারিখাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
মুক্ত আলোচনায় চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক চেয়ারম্যান রিয়ার এ্যাডমিরাল এম খালেদ ইকবাল (অবঃ), বারবিভার সভাপতি আব্দুল হক, ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি ওসামা তাসীর, প্রাক্তন সহ-সভাপতি এম আবু হোরায়রাহ, প্রাক্তন পরিচালক এ কে ডি খায়ের মোহাম্মদ খান এবং ডিসিসিআই’র স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক আবরারুল আলম প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন। আলোচকবৃন্দ কমপ্লায়েন্স অনুসরণ করে বেসরকারিখাতে আরো বেশি হারে আইসিডি স্থাপন, নদীর নাব্যতা বাড়াতে ঢ্রেজিং কার্যক্রম বাড়ানো, বন্দর ভিত্তিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধি এবং সরকারের সংস্থার মধ্যকার সমন্বয় সম্প্রসারণের উপর জোরারোপ করেন।
এ সময় ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহ-সভাপতি মোঃ সালিম সোলায়মান, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ সহ সংশ্লিস্ট স্টেকহোল্ডারবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
জিসিজি /এমএম