ঢাকা, বুধবার, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

ক্রিকেট

এশিয়া কাপ: ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরে রাজনীতি ও লাভের খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২:৪৩, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৫
এশিয়া কাপ: ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরে রাজনীতি ও লাভের খেলা সংগৃহীত ছবি

রাজনৈতিক সম্পর্ক যতই তিক্ত হোক, ক্রিকেট মাঠে ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথই এশিয়া কাপের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। দর্শকসংখ্যা, টিভি ভিউয়ারশিপ এবং স্পনসরশিপ আয়ের মূল ভরসা এই ম্যাচ।

আয়োজক সংস্থাগুলোও জানে, ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি হলেই রাজস্ব বাড়বে বহুগুণ।

এশিয়া কাপ ক্রিকেট শুরু হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। তবে আয়োজক, স্পনসর ও সমর্থকদের মূল দৃষ্টি রোববারের দিকে—যেদিন দুবাইয়ে মুখোমুখি হবে ভারত ও পাকিস্তান। সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘর্ষ ও আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতির পর এটিই দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর প্রথম দেখা।

দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বন্ধ প্রায় ১৩ বছর, আর টেস্ট সিরিজে মুখোমুখি হয়নি প্রায় ১৮ বছর। তবুও আইসিসি বা এসিসি-র আসরে নিয়মিত লড়াই হচ্ছে দুই দলের।

রাজনীতি ও রাজস্বের সমীকরণ

সাবেক আইসিসি মিডিয়া প্রধান সামি উল হাসান বলেছেন, ‘সবকিছুই নির্ভর করে সর্বোচ্চ দর্শক টানার উপর। এজন্য টুর্নামেন্টের ফরম্যাটও এমনভাবে সাজানো হয় যাতে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ অন্তত একবার হয়। ’

আইসিসি অতীতে স্বীকার করেছে, গ্রুপ ড্র এমনভাবে করা হয়েছে যাতে দুই দল একই গ্রুপে পড়ে। এর ফলেই ভিউয়ারশিপ বেড়েছে আকাশচুম্বী। ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ টিভিতে ২৬ বিলিয়ন মিনিট ভিউ টাইম পেয়েছিল—যা ২০২৩ বিশ্বকাপের লড়াইয়ের চেয়েও বেশি।

অন্যদের অভিযোগ ও নিয়ম ভাঙার নজির

শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান কিংবা বাংলাদেশের সমর্থকরা অভিযোগ তুলেছেন, সব মনোযোগ থাকে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে। অথচ শ্রীলঙ্কাই সবচেয়ে বেশি ১৩ বার ফাইনালে উঠেছে ও ছয়বার শিরোপা জিতেছে।

২০২৩ সালের শ্রীলঙ্কা আসরে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে গেলে সুপার ফোর পর্বে শুধুমাত্র তাদের জন্য রিজার্ভ ডে রাখা হয়—যা অন্য দলগুলোর কাছে বৈষম্যমূলক মনে হয়েছিল।

ভারতের নীতি ও বৈশ্বিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা

২০২৪ সালের আগস্টে ভারত নতুন ক্রীড়া নীতি ঘোষণা করে—পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো দ্বিপাক্ষিক খেলা হবে না। তবে বহুজাতিক টুর্নামেন্টে মুখোমুখি হতে আপত্তি নেই। কারণ ২০৩০ কমনওয়েলথ গেমস ও ২০৩৬ অলিম্পিক আয়োজনের বিডে ভারত নিজেকে বৈশ্বিক ক্রীড়া কেন্দ্র হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়।

বাংলাদেশ-ভারতের রাজনৈতিক সমীকরণ

২০২৪ সালের আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মুখে দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর প্রভাব পড়ে বাংলাদেশ-ভারতের ক্রিকেট সম্পর্কেও। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে এ বছরের আগস্টে ঢাকায় নির্ধারিত ভারতের সাদা-বল সিরিজ (৩ ওয়ানডে, ৩ টি-টোয়েন্টি) স্থগিত হয়ে ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বরে গড়ায়। এসিসি সভা নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল।

আইপিএলেও এর প্রতিফলন দেখা যায়। মেগা নিলামে কোনো বাংলাদেশি খেলোয়াড় দল না পাওয়া নিয়ে বিতর্ক হয়। ২০২৫ মৌসুমে দিল্লি ক্যাপিটালস মোস্তাফিজকে রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে নেওয়ার চেষ্টার পর ভারতের সামাজিক মাধ্যমে বয়কট ট্রেন্ড শুরু হয়—যা আবারও ভূরাজনীতির প্রসঙ্গ টেনে আনে।

এই আবহে ভারত ও বাংলাদেশ এবার এশিয়া কাপে আলাদা গ্রুপে পড়েছে। তবে সুপার ফোরে পৌঁছালে দেখা হতে পারে দুই দলের। সেই সম্ভাব্য লড়াই ঘিরেও দুই দেশের সমর্থকদের কৌতূহল তুঙ্গে।

এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

ক্রিকেট এর সর্বশেষ