টানা দুই বছর প্রতিটি ক্যালেন্ডার বছরে একশ’র বেশি ছক্কা হাঁকিয়ে বাংলাদেশ দেখাচ্ছে নতুন শক্তি—বড় শট খেলার ক্ষমতা। এত বছর ধরে যে দলকে রক্ষণাত্মক ক্রিকেটের প্রতীক ধরা হতো, সেই বাংলাদেশ এখন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নতুন পরিচয়ে উজ্জ্বল।
২০০৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ইনিংসপ্রতি গড়ে ৩.৮১ ছক্কা হাঁকাত—যা ফুল মেম্বারদের মধ্যে সর্বনিম্ন। ২০২৪ সালে এই গড় বেড়ে দাঁড়ায় ৫.০৮, আর ২০২৫ সালে আরও বেড়ে হয় ৭.৭৩। ২০২৪ ও ২০২৫ মিলিয়ে বাংলাদেশি ব্যাটাররা মেরেছেন ২৩৮ ছক্কা; যেখানে ২০২২ ও ২০২৩ মিলিয়ে ছিল মাত্র ১৩০।
এই বিপ্লবের সামনে আছেন চার তরুণ—ওপেনার তানজিদ হাসান (২৪) ও পারভেজ হোসেন (২৩), আর মিডল-অর্ডারের জাকার আলি (২৭) ও শামিম হোসেন (২৪)। শুধু শক্তির উপর নির্ভর না করে তারা শটের বৈচিত্র্য বাড়াচ্ছেন এবং ঝুঁকি নিতে পিছপা হচ্ছেন না। ২০২১–২৩ সালে প্রতি ৯.৫ বলে একটি ছক্কা আসত, এখন সেই অনুপাত নেমে এসেছে ৫.৫৮ বলে এক ছক্কায়।
বাংলাদেশ দলের সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন মনে করেন, এই চারজনের মানসিকতা ও আগ্রাসী মনোভাব পুরো দলকে প্রভাবিত করেছে।
২০০৫–২০২৩ সময়কালে ১২ ফুল মেম্বারের মধ্যে ছক্কার সংখ্যায় বাংলাদেশ ছিল সবার নিচে। কিন্তু গত দুই বছরে ইনিংসপ্রতি গড়ে ৬.১০ ছক্কা হাঁকিয়েছে তারা, বলপ্রতি ছক্কার হারও উন্নত (১৮.৫৬)। এখন তারা আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা, আয়ারল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ের চেয়ে এগিয়ে।
রানরেটেও দেখা যাচ্ছে উন্নতি। ২০২১–২৩ সময়ে যেখানে ছিল ইনিংসপ্রতি ৭.২০ রান, গত দুই বছরে তা বেড়ে হয়েছে ৭.৮১।
সাবেক অধিনায়ক শাহরিয়ার নাফীস মনে করেন, প্রজন্ম বদলের সঙ্গে মানসিকতাও বদলেছে। আগের প্রজন্মকে শেখানো হতো মাটির ওপর দিয়ে খেলতে, আর নতুনরা বড় হয়ে উঠেছে ক্রিস গেইল, এবি ডি ভিলিয়ার্সদের ছক্কার দাপট দেখে। ফলে তাদের কাছে ছক্কা মারা স্বাভাবিক ব্যাপার।
তানজিদের রেঞ্জ-হিটিং উন্নত হয়েছে বিপিএল-এ কোচদের সঙ্গে কাজ করে। জাকের আলি শিখেছেন বেস এবং পজিশনের গুরুত্ব। শামিমও শটের পরিধি বাড়িয়েছেন, ফিনিশার হিসেবে নিজেকে তৈরি করছেন।
নাফীসের ভাষায়, “ছক্কা মারা মানেই জোরে মারা নয়। আসল ব্যাপার হলো টাইমিং। ”
২০২৪–২৫ সালে পাওয়ারপ্লে’তে বাংলাদেশ আরও ঝুঁকি নিচ্ছে। এই সময়ে তাদের স্ট্রাইক-রেট বেড়েছে ১২৩.৬২-তে, যা ২০২১–২৩ সময়ে ছিল ১০৩.৮৩। মিডল ওভারে রানরেট বেড়ে হয়েছে ৭.৫ এবং ডেথ ওভারে দাঁড়িয়েছে ৯.৭৩। শট নির্বাচনে উন্নতির কারণে পুল, স্লগ সুইপ বা লফটেড শটে আগের তুলনায় অনেক বেশি ছক্কা আসছে।
এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—এই নতুন ছক্কা-নির্ভর মানসিকতা কি আসন্ন এশিয়া কাপে সফল হবে? বাংলাদেশ হংকং, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের সঙ্গে খেলবে গ্রুপ পর্বে। এর আগে তারা শ্রীলঙ্কাকে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারিয়েছে। লক্ষ্য সবার আগে গ্রুপ থেকে সুপার ফোরে ওঠা, আর সেই পথে সবচেয়ে বড় ভরসা—নতুন প্রজন্মের ছক্কা মারার দাপট।
এমএইচএম