জন্মেছিলেন শেফিল্ডে, হাসপাতাল থেকে বেরিয়েছিলেন হাতে এক টুকরো কার্ডবোর্ড ব্যাট নিয়ে—যেটা বানিয়ে দিয়েছিলেন তার বাবা। সেই ছোট্ট জো রুট আজ ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের সামনে দাঁড়িয়ে।
২০১২ সালের ডিসেম্বরে, ভারতের নাগপুরেই ইঙ্গিত মিলেছিল এমন কিছুর। সেই ম্যাচে অসাধারণ এক মুহূর্তের জন্ম দেন ২১ বছর বয়সী জো রুট। ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টেই চার স্পিনার নিয়ে গড়া আক্রমণের বিরুদ্ধে আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং করে তিনি করেন ৭৩ ও অপরাজিত ২০ রান। ইংল্যান্ড ম্যাচটি ড্র করে সিরিজ জিতে নেয় ২-১ ব্যবধানে।
সেই ভারতীয় দলে ছিলেন শচীন টেন্ডুলকার—৩৯ বছর বয়সী ব্যাটিং দেবতা, যার এটিই ছিল রুটের সঙ্গে একমাত্র আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এরপর আর কোনো সেঞ্চুরি করতে পারেননি শচীন, খেলেন মাত্র ছয়টি টেস্ট, তারপরই থামেন ১৫ হাজার ৯২১ রানে। বিদায় নেন এক মহাকাব্যের শেষ অধ্যায় হয়ে।
অন্যদিকে শুরু হয় রুটের নিঃশব্দ অভিযাত্রা। ২০২৪ সালে এসে সেই যাত্রা এখন এক ঐতিহাসিক মোড়ে।
গতকাল শুক্রবার, ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ভারতের বিপক্ষে চতুর্থ টেস্টে রুট করলেন ক্যারিয়ারের ৩৮তম শতক। ম্যাচ শুরুর আগে তিনি ছিলেন টেস্ট ইতিহাসের পঞ্চম সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। মাত্র ৩০ রান করে টপকে যান রাহুল দ্রাবিড়কে, আর এক রান পর ছাড়িয়ে যান জ্যাক ক্যালিসকে।
প্রতিটি রান যেন ছিল একেকটি শ্রদ্ধার্ঘ্য—এক রান করে দুই কিংবদন্তিকে পেছনে ফেলে দেন রুট, অথচ উদযাপনটা করেন মাথা নিচু রেখে, বিনয়ী হাসিতে।
এরপর শুরু হয় ‘রুটীয় ক্লাসিক’ ব্যাটিং—স্ট্রেইট ড্রাইভ, স্কয়ার ড্রাইভ, থার্ড ম্যানের দিকে ড্যাব, লেগ গ্লান্স, রিভার্স সুইপ—সবই দেখা গেল সেই ইনিংসে। শতকের পর অপেক্ষা ছিল ১২০ রানের—কারণ তখনই তিনি ছাড়িয়ে যান অস্ট্রেলিয়ার রিকি পন্টিংকে। এখন শীর্ষে আছেন কেবল শচীন টেন্ডুলকার।
রুট শেষ পর্যন্ত আউট হন ১৫০ রানে, যার বলে আউট হলেন, সেই রবীন্দ্র জাদেজার সঙ্গে তার অভিষেক একই টেস্টে।
শচীনের রেকর্ড কত দূরে?
রুটের সংগ্রহ এখন ১৩ হাজার ৪০৯ টেস্ট রান। শচীনের থেকে পিছিয়ে ২ হাজার ৫১২ রানে।
বর্তমানে রুটের বয়স ৩৪। ইংল্যান্ডের নির্ধারিত টেস্ট সূচি অনুসারে ২০২৭ সাল পর্যন্ত আরও অন্তত ২৬টি টেস্ট খেলবে দলটি। গড় অনুযায়ী রুট প্রতি টেস্টে ৮৫.৪ রান করেন। এই হারে শচীনকে টপকাতে রুটের দরকার আরও প্রায় ৩০ টেস্ট—যা অর্জনযোগ্য।
তবে মজার বিষয় হলো, ২০২১ সাল থেকে রুটের গড় আরও বেড়ে হয়েছে ৯৩ রান প্রতি টেস্ট। এমনকি গত ১৯টি টেস্টে তার গড় ১০১ রান!
এই গড় ধরে রাখলে, শচীনকে ছুঁতে রুটের সময় লাগবে না ২০২৮ পর্যন্ত। বরং ২০২৭ সালের গ্রীষ্মে ওভালে অ্যাশেজের শেষ টেস্টেই হতে পারে ইতিহাসের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ—যেখানে রুট টেন্ডুলকারকে টপকে যাবেন।
তবে অপূর্ণতা একটা রয়ে গেছে…
রুটের অভাবনীয় এই ক্যারিয়ারে এখনো একটি বড় শূন্যতা রয়েছে—অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে একটি শতকও নেই তার। তিনবারের সফরে ১৪টি টেস্ট খেলেও শতক তো দূর, পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস নেই একটিও।
২০১৩-১৪ সফরে শেষ টেস্টে তাকে বাদই দেওয়া হয়। ২০১৭-১৮ সালে সিডনির দাবদাহে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে নিতে হয়। আর ২০২১-২২ সালে অ্যাডিলেডে অণ্ডকোষে বল খেয়ে মাঠেই কাতরাতে হয় তাকে।
এই দুঃসহ স্মৃতিগুলো নিশ্চয়ই রুটকে তাড়িত করে। তাই ২০২৫ সালের অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়ায় শতকের খরা কাটানোটা হবে তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ—না শুধু ব্যক্তিগত রেকর্ডের জন্য, বরং দলের অ্যাশেজ পুনরুদ্ধারেও এটি হতে পারে নির্ধারক।
এমএইচএম