ঢাকা, সোমবার, ৩ আষাঢ় ১৪৩২, ১৬ জুন ২০২৫, ১৯ জিলহজ ১৪৪৬

ক্রিকেট

অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে টেস্টের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দ. আফ্রিকা

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:৫৪, জুন ১৪, ২০২৫
অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে টেস্টের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দ. আফ্রিকা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা হাতে দক্ষিণ আফ্রিকার উল্লাস/সংগৃহীত ছবি

‘চোকার’ তকমা মুছে অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান—দক্ষিণ আফ্রিকার হাতে উঠলো তাদের প্রথম বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ (WTC) শিরোপা। লর্ডসের ঐতিহাসিক মাটিতে চার দিনের ক্লাসিক লড়াইয়ে তারা ৫ উইকেটে হারিয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে।

এই জয়ে ২৭ বছরের শুষ্কতা কাটল প্রোটিয়াদের—শেষবার তারা আইসিসির কোনো ট্রফি জিতেছিল ১৯৯৮ সালে, যখন প্রথম আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ঘরে তোলে আফ্রিকার এই ক্রিকেট পরাশক্তি।

এই ঐতিহাসিক জয়ের নায়ক ছিলেন এইডেন মারক্রাম, যিনি চাপের মুখে দুর্দান্ত এক ইনিংসে ১৩৬ রান করে দলকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেন। চ্যালেঞ্জিং সিমিং উইকেটে ২৮২ রানের বিশাল লক্ষ্যে নেমে শুরুতেই মাত্র ৬ রানে ওপেনার রায়ান রিকেলটনকে হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে অভিজ্ঞ মারক্রাম এবং তিন নম্বরে নামা উইয়ান মুলডার মিলে শুরুতে ধাক্কা সামাল দেন।

তবে তৃতীয় দিনের শেষ ভাগে, মুলডার ২৭ রানে মিচেল স্টার্কের বলে কাভারে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে গেলে মাঠে আসেন অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। এখানেই ম্যাচের মোড় ঘুরে যায়।

হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট নিয়েও বাভুমা এবং মারক্রাম জুটি গড়েন ১৫৭ রানের জুটি, যা জয়কে অনেকটাই নিশ্চিত করে দেয় প্রোটিয়াদের জন্য। এই জুটিতে মারক্রাম পূর্ণ করেন তার শতক এবং বাভুমা খেলেন সাহসী একটি অর্ধশতক।

তৃতীয় দিন শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ছিল ২১২/২—জয়ের জন্য বাকি মাত্র ৬০ রান, হাতে ৮ উইকেট। তবে চতুর্থ দিন শুরুতেই কিছু নাটকীয়তা আসে—অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স বাভুমাকে ৬৬ রানে ফিরিয়ে দেন, আর জশ হ্যাজলউড শেষ মুহূর্তে বিদায় করেন মারক্রামকেও।

তবু সেই ক্ষত আর প্রভাব ফেলেনি ম্যাচে। বাকি কাজটুকু সেরে দক্ষিণ আফ্রিকা তুলে নেয় ক্রিকেট ইতিহাসে তাদের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত জয়।

দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন কাইল ভেরেইনে ও ট্রিস্টান স্টাবস—তাদের ব্যাটেই পাঁচ উইকেটের জয় নিশ্চিত করে প্রোটিয়ারা, আর তুলে নেয় ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৫-এর শিরোপা।

এই জয়ের পেছনে বড় অবদান রেখে গেছেন কাগিসো রাবাদা, প্রমাণ করেছেন কেন তিনি বিশ্বের সেরা টেস্ট বোলারদের একজন। লর্ডসে অস্ট্রেলিয়াকে প্রথমে ব্যাট করতে পাঠিয়ে মাত্র ২১২ রানে গুটিয়ে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা, রাবাদা তুলে নেন ৫ উইকেট—এটি ছিল লর্ডসে তার দ্বিতীয় পাঁচ উইকেট নেওয়া এবং ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে কাইল জেমিসনের পর দ্বিতীয় বোলার হিসেবে ফাইফার।

তবে অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স দ্বিতীয় ইনিংসে একাই রূপকথা লিখেন—মাত্র ২৮ রানে ৬ উইকেট, দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুটিয়ে দেন ১৩৮ রানে। বড় লিড নিয়ে অস্ট্রেলিয়া তৃতীয় ইনিংসে বিশাল স্কোরের দিকে এগোচ্ছিল, কিন্তু আবারও বাধা হয়ে দাঁড়ায় রাবাদা ও লুঙ্গি এনগিডির জুটি—তাদের আঘাতে অজিরা থেমে যায় ২০৭ রানে।

দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৮২ রান—লর্ডসের ইতিহাসে এটি ছিল যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয় পাওয়ার নজির।

এমন এক কঠিন মঞ্চে এইডেন মারক্রাম খেলেন ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ইনিংস—১৩৬ রানের সেই মহাকাব্যিক ইনিংসই এনে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকার বহু কাঙ্ক্ষিত আইসিসি শিরোপা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

অস্ট্রেলিয়া: ২১২/১০ & ২০৭/১০
দ. আফ্রিকা: ১৩৮/১০ & ২৮২/৫
ফলাফল: দ. আফ্রিকা ৫ উইকেটে জয়ী।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।