ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ কার্তিক ১৪৩২, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৭

সারাদেশ

চায়ের ইতিহাসে ‘টি মিউজিয়াম’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮:৪৮, অক্টোবর ২১, ২০২৫
চায়ের ইতিহাসে ‘টি মিউজিয়াম’ চা বাগানে ব্যবহৃত প্রাচীন বেতার যন্ত্র

মৌলভীবাজার: স্মৃতি মানেই প্রাচীনতার স্বাক্ষর। ইতিহাস আর ঐতিহ্যের পুরাতন ধারাপাত, যা মানুষের অতীতকে খুব সমজেই স্মরণ করিয়ে দেয় স্মৃতির ক্যানভাসে।

এর ভেতর দিয়েই জেগে উঠে বর্তমান সময়ের অগ্রযাত্রার মানদণ্ড।

সেই স্মৃতিময় অতীত থেকে কতটা এগুলো বর্তমান– এর যোগফলই হলো জাদুঘর। জাদুঘর মানেই নানা অতীত ইতিহাসের টুকরো টুকরো অংশ।  

বাংলাদেশে চায়ের ইতিহাস দেড়শ’ বছরের ওপরে। সেই ব্রিটিশ শাসনামলে চায়ের সূচনা হয়। ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালনিছড়া চা বাগানে চা আবাদের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে চা শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে রয়েছে ১৭০টি চা বাগান। এসব চা বাগানের প্রাচীন এবং অতি মূল্যবান জিনিসপত্র দিয়েই সজ্জিত করা হয়েছে এই টি মিউজিয়ামকে।  

শ্রীমঙ্গল শহর থেকে কমলগঞ্জ উপজেলা সড়কের দিকে তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাংলাদেশ চা বোর্ডের ‘টি মিউজিয়াম’। এর বাংলা অর্থ চা জাদুঘর। চা বাগানে ঘেরা এ চায়ের জাদুঘরে বাংলাদেশের চা শিল্পের প্রায় দেড়শ’ বছরের ইতিহাস ফুটে উঠেছে নানা সংগ্রহে-স্মারকে। সেগুলোর ওপর প্রদর্শন করা হয়েছে এই কক্ষের সংগ্রহগুলো। ২০০৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বরে যাত্রা শুরু।

চা বাগান থেকে সংগৃহকৃত প্রাচীন সেসব সংগ্রহের মাঝে রয়েছে- কেরোসিনচালিত ফ্রিজ মাঝারি ও ছোট আকারের, নারী চা শ্রমিকদের হাতে ব্যবহৃত বাঁক, গলার হাসলি, মাদুলি এবং রূপার গহনা, আগাছা পরিষ্কার করার কাঁটা কোদাল, গাড়ির চেসিস, বৈদ্যুতিক পাখা, দিক নির্ণয় যন্ত্র, রিং কোদাল, তির-ধনুক, চা-গাছ ছাঁটাই কাজে ব্যবহৃত কলম দাসহ ব্রিটিশ আমলে শ্রমিকদের ব্যবহৃত বিভিন্ন হাতিয়ার। আছে লোহার পাপোশ, চা শ্রমিকদের জন্য ব্যবহৃত বিশেষ রূপা ও তামার মুদ্রা, কাঠের ফসিল, ঘটি, টেবিল, ব্রিটিশ সাহেবদের গুনতির কাজে ব্যবহৃত হাড়ের ছড়ি, লাঠি; ব্যবস্থাপক বাংলোয় ব্যবহৃত প্রাচীন বেতারযন্ত্র, দেয়ালঘড়ি, চা বাগানে চারা লাগানোর কাজে ব্যবহৃত বিশেষ যন্ত্র।

এ ছাড়া দেখা গেল- চা বোর্ডের হিসাবরক্ষকের ব্যবহৃত টাকা রাখার বাক্স, মূল্যবান নানা ধরনের কলম, টেবিল; আছে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রথম কম্পিউটারটিও। চা শ্রমিক, চা সংশ্লিষ্ট কর্মচারী, কর্মকর্তারা এসব চা অনুষঙ্গ একসময় ব্যবহার করতেন।  

সাধারণ মানুষের কাছে চা কে জনপ্রিয় করতে প্রস্তুতপ্রণালি এবং চা পানে স্বাস্থ্যগত কী কী উপকার হয় সেসব নিয়েই বিজ্ঞাপনী পোস্টার। সেখানে সাধু ভাষায় লেখা রয়েছে- ‘ইহা খাইতে বেশ সুস্বাদু। ইহাতে কোনো অপকার হয় না। ইহা জীবনী শক্তির উদ্দীপক। ইহাতে মাদকতা শক্তি নাই। ইহা ম্যালেরিয়া নিবারক। ইহা সান্নিপাতিক বিকারের আক্রমণ হইতে রক্ষা করে। ইহা বিসূচিকা প্রতিষেধক। ইহা দেহ মনের অবসাদ দূর করে। ’

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার এবং টি রিসোর্ট অ্যান্ড মিউজিয়ামের ম্যানেজার রায়হান মুজিব হিমেল বলেন, অনেক পর্যটক এখানে আসেন যারা আসলে চা চিনেন না। চা গাছ দেখেন। কিন্তু চা গাছ থেকে কীভাবে চা হয় সেটা উনারা জানেন না। আমাদের এখানে একটি টি মিউজিয়ামে টি ফ্যাক্টরির কিছু যন্ত্রপাতি আছে। চা শ্রমিকরা কী কী যন্ত্রপাতি দিয়ে চা বাগানে কাজ করে এবং তাদের লাইফ স্টাইল কিংবা আগের চা বাগানের টি-প্লান্টাররা কীভাবে তাদের লাইফ লিড করতেন সেগুলোসহ চায়ের প্রসেসিং সিস্টেম আগ্রহী পর্যটকদের দেখানো হয়। তখন তারা চা সম্পর্কে খুব ভালো একটি ধারণা লাভ করেন।

চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল। কোনো আগ্রহী পর্যটক শ্রীমঙ্গল আসবেন অথচ চা জাদুঘর দেখবেন না— এমনটা হতে পারে না। আমরা খুব সামান্য ফির বিনিময়ে সবার জন্য টি মিউজিয়াম পরিদর্শনের ব্যবস্থা রেখেছি বলে জানান এই কর্মকর্তা।

বিবিবি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।