কক্সবাজার: কক্সবাজারে স্থবির হয়ে পড়া ভূমির দলিল নিবন্ধন আলোর মুখ দেখেছে। বাতিল হয়েছে কক্সবাজার জেলায় ভূমির দলিল নিবন্ধনে বাড়তি উৎসে কর।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক মন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কক্সবাজারের মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ভূমি নিবন্ধনে আকাশচুম্বী উৎসে করের সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে এসেছে। এতে করে কক্সবাজার জেলাবাসী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন।
সূত্র জানায়, বিগত আগস্ট মাসে বাংলাদেশ দলিল লেখক সমিতি কক্সবাজার জেলা শাখার নেতারা কক্সবাজারবাসীর এ মহাসংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দুই দফা কক্সবাজারের সন্তান সালাহউদ্দিন আহমদের শরণাপন্ন হন। তিনি বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে কক্সবাজারে ভূমির দলিল নিবন্ধনে আকাশচুম্বী উৎসে কর বাতিলে সে সময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান, জাতীয় নিবন্ধন মহাপরিদর্শক, ভূমি সচিব ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। তারই আলোকে অবশেষে কক্সবাজারবাসীর মাথা থেকে ভূমি নিবন্ধনে অতিরিক্ত উৎসে করের বোঝা কমল।
এদিকে বাংলাদেশ দলিল লেখক সমিতি কক্সবাজার জেলা শাখার নেতারা ভূমি দলিল নিবন্ধনে অতিরিক্ত করের বোঝা বাতিলের সিদ্ধান্তে বিশেষ ভূমিকা রাখায় সালাহউদ্দিন আহমদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
এ উপলক্ষে বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজার প্রেসক্লাব মিলনায়তনে কক্সবাজার জেলা দলিল লেখক সমিতির আয়োজনে এক অনুষ্ঠান হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আবুল হোছাইন।
এতে সালাহউদ্দিন আহমদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বক্তব্য দেন কক্সবাজার জেলা দলিল লেখক সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. শাহজাহান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন মিজান, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, অর্থ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী, চকরিয়া সভাপতি শরীফুল ইসলাম, টেকনাফ সভাপতি ছৈয়দুর রহমানসহ অনেকে।
অন্যদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) এক প্রজ্ঞাপনে এ সিদ্ধান্ত জানায়। এনবিআরের সদস্য এ কে এম বদিউল আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২৪ জুন জারি করা পরিপত্র সংশোধন করে বর্ধিত করহার বাতিল করা হয়েছে।
এর আগে, ২৪ জুনের পরিপত্রে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) এলাকা ও জেলা সদরের পৌরসভাগুলোর ৮১টি মৌজায় নাল জমিতে শতক প্রতি ২৫ হাজার এবং আবাসিক জমিতে শতক প্রতি ৫০ হাজার টাকা উৎসে কর আরোপ করা হয়। ফলে জেলায় জমি বেচা-কেনা কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে।
বাড়তি উৎসে করের কারণে অযৌক্তিক আর্থিক চাপ, দলিল নিবন্ধন কার্যক্রমে অচলাবস্থা, জমি হস্তান্তরে জটিলতা তৈরি হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
জেলা জুড়ে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয় এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
কক্সবাজার দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন মিজান বলেন, বাড়তি উৎসে করের সরকার আরোপিত সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছিল। কক্সবাজারে দলিল নিবন্ধন কার্যত থমকে গিয়েছিল। কয়েক মাস ধরে আমরা আন্দোলন করেছি, সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছি। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সর্বশেষ হতাশাগ্রস্ত হয়ে আগস্ট মাসের শুরুতে এবং মাঝামাঝি সময়ে দুই দফা আমরা কক্সবাজার জেলা দলিল লেখক সমিতির নেতারা বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদের সঙ্গে দেখা করে সমস্যা খুলে বলি। তিনি বিষয়টি সমাধানে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেন। তারই আলোকে অবশেষে বাতিল হলো ভূমি নিবন্ধনে চাপিয়ে দেওয়া উৎসে কর।
জেলা রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য ১৩ আগস্ট মহাপরিদর্শকের (নিবন্ধন) কাছে আবেদন করেন জেলা রেজিস্ট্রার। পরে ২০ আগস্ট এনবিআর চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অধিক্ষেত্রভুক্ত ৮১টি মৌজায় করহার ‘অন্য কোনো উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ ধারা অনুসারে আরোপ করা হয়েছিল। সচেতন মহলের মতে, সমুদ্র উপকূলীয় অনুন্নত অঞ্চল যেমন মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া ও সেন্টমার্টিনের জন্য এ হার সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ছিল।
প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে কক্সবাজারে বাড়তি উৎসে কর বাতিল হওয়ায় জমি বেচা-কেনায় আবার গতি আসবে বলে আশা করছেন জেলা রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তারা।
এসআই