ময়মনসিংহ: সন্ত্রাসী হামলায় গাজীপুরের চৌরাস্তা এলাকায় নিহত সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান তুহিনের (৩৮) গ্রামের বাড়িতে নেমেছে শোকের ছায়া। এ ঘটনায় হতবাক গ্রামবাসীও।
তারা জানান, এসএসসি পাস করার পর তুহিন আর গ্রামে থাকেননি। বছরে এক বা দুইবার গ্রামে মা-বাবার সঙ্গে দেখা করতে আসতেন। তিনি ভালো মন মানসিকতার মানুষ। তার এমন মৃত্যু কেউ কল্পনাও করেনি। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
শুক্রবার (৮ আগস্ট) সকাল ১০টায় ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ৬ নম্বর সদর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ভাটিপাড়া মৌলভীবাড়ী গ্রামে তুহিনের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে বিলাপ করছেন আত্মীয়-স্বজন, কান্না ধরে রাখতে পারছেন না গ্রামের লোকজন।
নিহত তুহিন স্থানীয় হাসান জামিল ও সাহাবিয়া খাতুন বকুল দম্পতির ছেলে। দুই বোন পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট তুহিন।
স্থানীয় আল হেরা একাডেমি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০২ সালে মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর সিলেটের কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার এম. সাইফুর রহমান কলেজ থেকে ২০০৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় বসবাস শুরু করেন।
তুহিনের বন্ধু মো. আজিজুর রহমান বলেন, গাজীপুরে স্ত্রী মুক্তা বেগম ও দুই ছেলেকে নিয়ে বসবাস করতেন তুহিন। বড় ছেলের বয়স সাত বছর আর ছোট ছেলের বয়স তিন বছর। গাজীপুরে একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করতেন তুহিন, একটি ক্লিনিকের ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। পাশাপাশি গত তিন থেকে চার বছর ধরে সাংবাদিকতা করতেন। তিনি দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, শুনেছি ঘটনার আগে একজনকে মারধর করার ভিডিও করেছিল তুহিন। মূলত এ ঘটনার জের ধরেই তাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ব্যক্তি জীবনে সে অত্যন্ত আন্তরিক মানুষ ছিল। মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থাকত।
সূত্র জানায়, তুহিনের বড় ভাই জসিম উদ্দিন গাজীপুর চৌরাস্তায় ব্যবসা করতেন। এজন্য তিনি বড় ভাইয়ের সঙ্গে বসবাস শুরু করেন। তবে ২০০৯ বা ১০ সালের দিকে জসিম মারা যান। এরপর অপর ভাই সেলিমের সঙ্গে গাজীপুরে বসবাস করতেন তুহিন। এর মধ্যে সেলিম পরিবহন শ্রমিক। দ্বিতীয় ভাই জাহাঙ্গীর আলম কক্সবাজারের টেকনাফে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন এবং অন্য ভাই শাজাহান মিয়া বতর্মানে সিলেটে বসবাস করেন। তাদের দুই বোনের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় বতর্মানে গ্রামের বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা ও মা থাকেন। তারা বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত।
তুহিনের বন্ধু মো. নাসির উদ্দিন বলেন, গত কোরবানির ঈদে বাড়ি এসেছিল তুহিন। একদিন বাড়ি থেকে পরদিনই সে গাজীপুর চলে যায়। এরপর সে আর বাড়ি আসেনি।
পারিবারিক সূত্র জানায়, তুহিনের লাশ গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় রয়েছে। সেখানে আজ বাদ জোহর তার প্রথম জানাজা শেষে গ্রামের বাড়ি নিয়ে আসা হবে। এরপর দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে গাজীপুর মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় প্রকাশ্যে সাংবাদিক তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এক যুবককে মারধর ও ধাওয়া দেওয়ার ঘটনা ভিডিও করায় খুন হন সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮)।
অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, এক যুবক এক তরুণীকে মারধর করছেন। এ সময় ছয়-সাতজন যুবক চাপাতি, রামদা ও ছুরি নিয়ে ওই যুবককে কোপানোর চেষ্টা করছেন। একপর্যায়ে ওই যুবক দৌড়ে পালিয়ে যান। তখন অস্ত্রধারীরা পেছন থেকে তাকে ধাওয়া করেন।
পুলিশের ধারণা, এ ঘটনার ভিডিও ধারণ করছিলেন সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন। এসময় তাকে ধাওয়া দিলে তুহিন ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে পালিয়ে যান। কিন্তু কিছু সময় পর একটি দোকানের সামনে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
এসআই