ঢাকা, রবিবার, ১৯ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৩ আগস্ট ২০২৫, ০৮ সফর ১৪৪৭

সারাদেশ

বিপৎসীমার ওপরে তিস্তার পানি, ফের বন্যার কবলে লালমনিরহাট 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:০২, আগস্ট ৩, ২০২৫
বিপৎসীমার ওপরে তিস্তার পানি, ফের বন্যার কবলে লালমনিরহাট  তিস্তা ব্যারেজ

বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি হু হু করে বেড়ে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে দ্বিতীয় দফায় বন্যার কবলে পড়েছে তিস্তার বাম তীরের জেলা লালমনিরহাট।

রোববার (৩ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় অবস্থিত  দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমি ১২০ মিটার। যা বিপৎসীমার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার) ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুপুর ১২টা থেকে এ অবস্থা রয়েছে।  

নদীপাড়ের মানুষ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, কয়েকদিন ধরে ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় উজান থেকে ধেয়ে আসছে পানি। একইসঙ্গে টানা দুইদিনের বৃষ্টিতে তিস্তা নদীতে পানি প্রবাহ বেড়ে গেছে। এ কারণে তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হচ্ছে।  

গেল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে এবং ওই দিন রাত ৯টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বন্যার কবলে পড়ে লালমনিরহাটের নদী তীরবর্তী এলাকা। পানিবন্দি হয়ে পড়ে হাজার হাজার পরিবার। এর একদিন পরেই পানি কমে গিয়ে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে তিস্তাপাড়ে।

প্রথম দফায় বন্যার ধকল কাটতে না কাটতেই রোববার (৩ আগস্ট) সকাল থেকে বাড়তে থাকে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ। সকাল ৯টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় বিপৎসীমা বরাবরে। মুহূর্তে বাড়তে থাকে পানির চাপ। দুপুর ১২টায় বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ডালিয়া পয়েন্টে।

ফলে তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে দ্বিতীয় দফায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে তিস্তাপাড়ের হাজার হাজার পরিবার। ডুবে গেছে তিস্তা চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট ফসলের মাঠ। চরাঞ্চলের সড়ক পথের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। যোগাযোগের মাধ্যম হয়েছে নৌকা আর ভেলা। সৃষ্ট বন্যায় ডুবে যেতে বসেছে আমন ধানসহ নানান ফসলের ক্ষেত। পুকুর ডুবে যাওয়ায় ভেসে যাচ্ছে চাষিদের মাছ।  

লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার ওপর দিয়ে তিস্তা নদী বয়ে যাওয়ায় নদীতে সামান্য পানি বাড়লে গোটা জেলার সব উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়। বৃষ্টি আর উজানের ঢলের সৃষ্ট বন্যায় জেলার ৫টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানির চাপ বাড়লে বন্যার পরিধিও বাড়বে। পানি প্রবেশ করবে নতুন নতুন এলাকায়। এবার তিস্তা নদীতে এখন পর্যন্ত বড় কোনো বন্যা হয়নি। এটি বন্যায় রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিস্তা পাড়ের মানুষ।  

বন্যা সতর্কিকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, রোববার দুপুর ১২টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। নদী তীরবর্তী অঞ্চলের জনগণকে সতর্ক থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে।  

গড্ডিমারী ইউনিয়নের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি ও উজান থেকে প্রচুর পানি আসছে। ইতোমধ্যে নিচু এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করেছে। নিচু এলাকার পরিবারগুলো পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রাস্তা ঘাট পানিতে ডুবে গেছে।  

আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবরধন গ্রামের আজিজুল ইসলাম বলেন, তিস্তা নদীতে পানি বাড়ছে। চরাঞ্চলের কিছু কিছু বাড়ি পানিবন্দি হয়েছে। যেভাবে পানি আসছে তাতে বড় বন্যা হওয়ার ভয়ে আছি। সেদিনের পানি নামতে না নামতেই আবার পানি ঢুকেছে বাড়িতে। এটাই বুঝি বড় বন্যা হবে।

সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আরিফুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে হু হু করে বাড়ছে। তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করলেই আমার ইউনিয়নের প্রায় দেড় হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার বলেন, বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। রোববার দুপুর ১২টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে। তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। তাই এসব অঞ্চলের জনগণকে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। তবে সন্ধ্যা ৬টায় ও পানি বাড়ার অবস্থা একই রয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, তিস্তাপাড় প্লাবিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতি আরও দুইদিন অব্যাহত থাকতে পারে। গেল বন্যায় বন্যার্তদের মাঝে শুকনো খাবারসহ চাল বিতরণ করা হয়েছে। চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে জেলা প্রশাসন। কবলিতদের তালিকা করে পুনরায় শুকনো খাবার বিতরণ করা হবে।  সার্বক্ষণিক নদী তীরবর্তী এলাকার খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।  

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।