সন্তানদের ভরণপোষণ ও পিতৃ পরিচয়ের দাবি নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন শেখ সাদী নামে এক সহকারী উপ পরিদর্শকের (এএসআই) প্রথম স্ত্রী তানিয়া সুলতানা ও তালাকপ্রাপ্তা তৃতীয় স্ত্রী কবিতা আক্তার। তাদের সঙ্গে রয়েছে ওই এএসআইয়ের দুই ছেলে ও এক মেয়ে।
শেখ সাদী বর্তমানে জেলার বিজয়নগর থানায় কর্মরত রয়েছেন। বাবার স্নেহ বঞ্চিত এই সন্তানদের চোখে মুখে যেন রাজ্যের হতাশার ছাপ। বাবা থেকেও যেন নেই। রাখেন না কোনো যোগাযোগ। দেন না ভরণপোষণ। এমনকি এক সন্তানের পিতৃ পরিচয় নিয়েও তুলেছেন প্রশ্ন। এ অবস্থায় সামাজিক বঞ্চনা আর দুঃখ-কষ্টে দিন কাটছে তাদের।
গেল ২৮ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপারের কাছে এমনি অভিযোগ নিয়ে আসেন প্রথম স্ত্রী তানিয়া সুলতানা ও পুলিশের এসবি শাখায় কর্মরত তালাকপ্রাপ্তা তৃতীয় স্ত্রী কবিতা আক্তার।
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা এলাকা থেকে এসে তানিয়া সুলতানা এবং ঢাকার উত্তরখান থেকে কবিতা আক্তার ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে পৃথক অভিযোগ দেন।
শেখ সাদীর প্রথম স্ত্রীর দেওয়া অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০০৩ সালে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা এলাকার আব্দুস সামাদের মেয়ে তানিয়া সুলতানার সঙ্গে ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক বিয়ে করেন নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার হরিনগর গ্রামের সাজিদ মিয়া ছেলে শেখ সাদী। সাদী ঢাকার একটি গার্মেন্টসে সুপারভাইজারের চাকরি করাকালে ২০০৮ সালে কাউকে কিছু না জানিয়ে ওই গার্মেন্টসে কর্মরত পারভীন নামে এক মেয়েকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় বিয়ের পর তিনি প্রথম স্ত্রী ও এক ছেলে এবং এক মেয়ের ভরণপোষণ বন্ধ করে দেন।
পরবর্তীকালে প্রথম স্ত্রী মামলা করলে শেখ সাদী তার প্রথম স্ত্রী তানিয়া ও ছেলে-মেয়েকে ভরণপোষণ দিতে হবে বলে রায় দেন আদালত। কিন্তু সাদী কাউকে কিছু না জানিয়ে পালিয়ে যান। দীর্ঘ ৬ বছর পর ২০১৫ সালের দিকে তানিয়া শেখ সাদীর চাচাতো ভাইয়ের মাধ্যমে খবর পান কবিতা আক্তার নামে এক পুলিশ সদস্যকে তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করেছেন সাদী। পরে সালিশের মাধ্যমে তিনি বছর খানেক ভরণপোষণ দিলেও এর পর আর কোনো খোঁজ-খবর নেন না। এ অবস্থায় অনার্স পড়ুয়া মেয়ে ও সদ্য এসএসসি পাশ করা ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়িতে অসহায় দিন কাটছে তানিয়ার।
এদিকে এএসআই শেখ সাদীর তালাকপ্রাপ্তা তৃতীয় স্ত্রী ঢাকা পুলিশের এসবিতে কর্মরত কবিতা আক্তারের অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২০১১ সালে মীরপুরে তৎকালীন কনস্টেবল শেখ সাদীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ২০১২ সালের ২৭ অক্টোবর মীরপুর কাজী অফিসে তাদের বিয়ের হয়। কিন্তু বিয়ের আগে শেখ সাদী কবিতা আক্তারের কাছ থেকে দুটি খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন। তবে কবিতা যখন দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা তখন জানতে পারেন শেখ সাদীর আগের দুই স্ত্রী রয়েছেন। ২০১৪ সালে শেখ মোহাম্মদ আব্দুল বিন সাদী নামে এক ছেলে সন্তান হয়। ২০১৯ সালে বান্দরবান পার্বত্য জেলায় পুলিশ সুপারের বডিগার্ড হিসেবে বদলি হলে সেখানে এক নারী কনস্টেবলের সঙ্গে আবার প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন সাদী। ২০২০ সালে কবিতা আক্তার মিশনে মালিতে চলে যান। এর মধ্যে স্বামী শেখ সাদী এএসআই পদে পদোন্নতি পান। ২০২১ সালে কবিতা আক্তার মিশন থেকে ছুটিতে দেশে আসেন। তবে স্বামী শেখ সাদী কবিতা আক্তারের বিরুদ্ধে মিশনে থাকা অবস্থায় অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তোলেন। এ নিয়ে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে তাদের মধ্যে তালাক হয়ে যায়। বর্তমানে তিনি তার সন্তান শেখ মোহাম্মদ আব্দুল বিন সাদকে অস্বীকার করে তার ভরণপোষণ দিচ্ছেন না। এ অবস্থায় তিনি তার সন্তানের বৈধতা দাবি করে তার ন্যায্য অধিকারের দাবি জানান।
এছাড়াও অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয় এএসআই শেখ সাদী ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় কর্মরত থাকা অবস্থায় জেলার বিজয়নগর উপজেলার ফারজানা নামে আরও এক মেয়েকে বিয়ে করেছেন। ইতোমধ্যে সাদী বিজয়নগর থানায় বদলি হয়েছেন। তবে তার ৪র্থ স্ত্রী বিভিন্ন সময় ফেসবুক মেসেঞ্জারে তাকে হুমকি দিয়ে থাকেন। এ অবস্থায় কবিতা এএসআই শেখ সাদীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
শেখ সাদীর প্রথম স্ত্রীর মেয়ে শেখ স্নিগ্ধা ও ছেলে শেখ সিয়াম বলেন, আমাদের মায়ের কাছ থেকে শুনেছি বাবা যেখানে বদলি হন সেখানেই বিয়ে করেন। আমাদের ভরণপোষণ দেন না এবং খোঁজ খবরও নেন না। আমার বয়স যখন তিন বছর সেসময় বাবা আমাদের ছেড়ে চলে যান। বাবার আদর থেকে আমরা বঞ্চিত। যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে আমাদের ফোন নাম্বার বক্ল করে দেন। আমাদের একটাই চাওয়া বাবার অধিকার যেন পাই।
তৃতীয় স্ত্রীর ছেলে শেখ মোহাম্মদ আব্দল্লাহ্ বিন সাদী বলেন, মায়ের আদর যত্নে বড় হচ্ছি। অনেক সময় স্কুলে গেলে বন্ধুদের বাবাদের দেখে অনেক কষ্ট লাগে। তখন মনে হয় বাবা থেকেও যেন নেই। আমি আমার বাবার পিতৃ পরিচয় চাই।
এ বিষয়ে জানতে এএসআই শেখ সাদীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি এসে আপনার সঙ্গে দেখা করব’।
জেলা পুলিশ সুপার মো. এহতেশামুল হক বলেন, ওই এএসআইয়ের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ এসেছে। এসব ঘটনার অনুসন্ধান চলছে। সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরএ