ঢাকা, রবিবার, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২, ২০ জুলাই ২০২৫, ২৪ মহররম ১৪৪৭

সারাদেশ

মাথা-মুখসহ শরীরে গুলির ৩৮টি স্প্রিন্টার নিয়ে জীবনাশংকায় অমিত

এম রবিউল ইসলাম রবি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:২২, জুলাই ২০, ২০২৫
মাথা-মুখসহ শরীরে গুলির ৩৮টি স্প্রিন্টার নিয়ে জীবনাশংকায় অমিত

ঝিনাইদহ: ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে পঙ্গুত্ব বরণকারী অমিত হাসানের জীবনীশক্তি যেনো দিন দিন ফুরিয়ে আসছে। ১৯ বছর বয়সী টগবগে এই যুবক মাথার মধ্যে গুলির ৩৮টি স্প্রিন্টার বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন প্রায় এক বছর।

পরিবারের আর্থিক সক্ষমতা না থাকায় সুচিকিৎসার অভাবে আগামী দিনগুলোতে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারবেন কি না অমিত, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়।

স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার আগে প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা মহেশপুর উপজেলা শহরের শাপলা চত্ত্বরে এক দফার দাবিতে মিছিল বের করেন। অমিত ছিলেন সেই মিছিলের অগ্র সৈনিক।
 
মিছিলটি মহেশপুর কলেজ বাসস্ট্যান্ডে আসার চেষ্টা করলে পুলিশ অতর্কিতে হামলা চালায়। এক পর্যায়ে পুলিশের ছোড়া গুলিতে আহত হন প্রায় ২৫ জন আন্দোলনকারী। তাদের মধ্যে মারাত্মকভাবে আহত হন অমিত।

তাকে গুরুতর অবস্থায় প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে নিয়ে যাওয়া হয় যশোর ইবনে সিনহা হাসপাতালে। কিন্তু, অবস্থার আরো অবনতি হওয়ায় যশোর জেনারেল হাসপাতাল হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত হন অমিত।  

সেখানে তার পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা শুরু হয় ৮ আগস্ট সকাল থেকে। পরে এম আর আই সিটিস্ক্যান করে ডাক্তাররা দেখতে পান অমিতের মাথার মগজে তিনটি, মাথার চামড়ার নীচে হাঁড়ের ভিতরে ১৯টি, গলা-মুখ মন্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ১৬টিসহ মোট৩৮টি স্প্রিন্টার রয়েছে।  

এর মধ্যে মাথার মগজের তিনটি স্প্রিন্টার সব চেয়ে বেশি বিপদজনক অবস্থায় আছে। ঢাকা সিএমএইচের নিউরো সার্জন মেজর মোহাম্মদ মুরাদ মাজেদের তত্বাবধানে বর্তমানে অমিতের চিকিৎসা চলছে।

বড়ভাই আব্দুল হামিদ জানিয়েছেন, সিএমএইচের চিকিৎসকরা বলেছেন অমিতের মগজের তিনটি স্প্রিন্টার বের করা আদৌ সম্ভব না। দ্রুত বিদেশে নিয়ে গেলে হয়তোবা সম্ভব হতে পারে। মগজের মধ্যে ঢুকে থাকা বুলেটের প্রভাবে ইতিমধ্যে অমিতের ডানহাত অবশ ও মুখের কথা এলোমেলো হয়ে গেছে। প্রচন্ড যন্ত্রণায় অজ্ঞান হয়ে যান মাঝেমধ্যে।  

বড়ভাই আরো জানিয়েছেন, অর্থের অভাবে অমিতকে ঢাকায় রেখে চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে না। গত ৫ আগস্ট থেকে এই পর্যন্ত তাদের প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে।  

খালা জবেদা আক্তার বলেন, ধার দেনা করে বেশিদন চিকিৎসা চালানো তাদের পক্ষে সম্ভব না। ইদানিং অমিত কাউকে ঠিকমতো চিনতেও পারেন না। চিকিৎসার কারণে এই পর্যন্ত প্রায় ১৫ বার তাকে মহেশপুর থেকে ঢাকাতে নিয়ে যেতে হয়েছে। প্রতি বার যাতায়াতে অনেক টাকা ব্যয় হচ্ছে।  

অমিত হাসান জানিয়েছেন, পারিবারিক কলহে প্রায় ১৫ বছর আগে তার বাবা ও মায়ের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তখন অমিতের বয়স ছিল চার ও বড়ভাই হামিদের বয়স নয় বছর। এরপর থেকে দুই ভাই মহেশপুর পৌরসভার গোপালপুরে নানা বাড়িতে বড় হয়েছেন।

বড়ভাই হামিদ রং মিস্ত্রির কাজ করেন। অভাবের কারণে নবম শ্রেণির বেশি পড়াশোনা করতে পারেননি অমিত। সংসারের হাল ধরতে তিনিও রঙের কাজ শুরু করেন। দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে অমিত কাজ ছেড়ে দিয়ে আন্দোলনের প্রতিটি কর্মসূচিতে যুক্ত থাকেন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত জুলাই মাস জুড়ে প্রতিদিন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মিছিল করতেন তিনি।  

প্রতি বেশী আলী হাসান মন্ডল জানান, বাবা মা বেঁচে থেকেও অমিত আর হামিদ অসহায়, এতিমদের মতো। ওদের দেখার কেউ নেই। নানা ও নানি দুজনেই মারা গেছেন। রংমিস্ত্রির কাজ করে অমিতের বড় ভাইয়ের পক্ষে চিকিৎসা ব্যয় মেটানো সম্ভব না।  

এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।