ঢাকা, শুক্রবার, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৩ জুন ২০২৫, ১৬ জিলহজ ১৪৪৬

সারাদেশ

ঈদের ছুটিতে পদ্মাপাড়ে উৎসবের আমেজ

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:৫১, জুন ১২, ২০২৫
ঈদের ছুটিতে পদ্মাপাড়ে উৎসবের আমেজ ছবি: বাংলানিউজ

মাদারীপুর: দিনের শেষ প্রহরে সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়তেই তাপমাত্রা কমতে থাকে। বইতে থাকে মৃদুমন্দ বাতাস।

আর সেই বাতাসে ঢেউ তোলে প্রমত্তা পদ্মা নদীর বুকে। পদ্মা সেতু চালুর পর পর্যটন সম্ভাবনায় গুরুত্ব বেড়েছে পদ্মা নদীর। নগরের কোলাহল থেকে একটু প্রশান্তি পেতে এখন মানুষ ছুটে আসছে পদ্মাপাড়ে।

পদ্মা সেতুর জাজিরা পয়েন্ট থেকে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাওড়াকান্দি ঘাট পর্যন্ত দীর্ঘ পথজুড়ে নদীশাসন বাঁধ। বিকেল হলেই এই বাঁধ এলাকাজুড়ে দর্শনার্থীদের ঢল নামে। বিশেষ করে ঈদের ছুটিতে যেন এই ঢল আরও বেড়েছে।  

পদ্মা সেতুর নিচে ও আশপাশের নদীশাসন বাঁধে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। শহর থেকে গ্রামে আসা মানুষজন আত্মীয়-স্বজন নিয়ে ভিড় জমায় পদ্মাপাড়ে। কেউ বসে গল্পে মেতে ওঠেন, কেউবা পা ভিজান পদ্মার পানিতে। কেউ আবার ডিঙি নৌকা বা ট্রলারে চড়ে নদীর বুকে ঘুরে বেড়ান, কেউ দলবল নিয়ে নেমে পড়েন পানিতে। ঈদ মৌসুমে পদ্মার পাড়ে এমন দৃশ্য এখন খুবই স্বাভাবিক।

সরেজমিনে পদ্মাপাড় ঘুরে দেখা যায়, শিবচরের কাওড়াকান্দি ঘাট, কাঁঠালবাড়ী, বাংলাবাজার ঘাট ও জাজিরা পয়েন্টের নদীশাসন বাঁধ এলাকায় ভিড় করছে প্রচুর দর্শনার্থী।
জাজিরা প্রান্তে যেন এক ধরনের উৎসবের আমেজ—ভাসমান খাবারের দোকান, খেলনার দোকান, হালকা বিনোদনের উপকরণে ভরপুর। অনেকে জেলেদের ডিঙি নৌকায় ঘুরছেন, কেউবা আবার ট্রলার ভাড়া করে এসেছেন দূরদূরান্ত থেকে।

শরীয়তপুর থেকে আসা হাবিবুর রহমান বলেন, ঈদের ছুটিতে বাড়ি এসেছি। বিকেলে ঘুরতে বের হয়ে পদ্মার পাড়ে এলাম। প্রতিবার ঈদেই এখানে আসি। সূর্যাস্তের মুহূর্তটা সত্যিই মন ছুঁয়ে যায়।



শিবচর থেকে আসা আফরোজা আক্তার বলেন, এলাকায় ঘোরার মতো তেমন কোনো পিকনিক স্পট বা রিসোর্ট নেই। তাই পদ্মাপাড়ে অনেকেই আসেন। আমিও অবসর সময় কাটাতে এসেছি। আমার নদী খুব ভালো লাগে।

দর্শনার্থীদের ভিড়কে কেন্দ্র করে স্থানীয়দেরও আয়-রোজগারের সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে জানাচ্ছেন অনেকে।

ফুচকা বিক্রেতা মো. দুলাল হোসেন বলেন, বিকেলে ফুচকা নিয়ে এখানে আসি। রাত ৮–৯টা পর্যন্ত বিক্রি করি। ভালো আয় হয়। অনেকেই এখন এই জায়গাটিকে আয়-রোজগারের সুযোগ হিসেবে দেখছেন।

বাদাম বিক্রেতা মো. হাশেম বলেন, আমি মূলত কৃষি কাজ করি, পদ্মার পাড়েই আমার বাড়ি। বিকেলে নদীর পাড়ে বাদাম বিক্রি করি। আগে সময়টা নষ্ট যেত, এখন আয় হয়—পকেট খরচ চলে যায়।

স্থানীয়রা বলছেন, মানুষ এখন প্রকৃতির কাছাকাছি যেতে চায়, মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে চায়। পদ্মা সেতুর সংলগ্ন এই নদীপাড় এখন হয়ে উঠছে এমন এক পরম শান্তির জায়গা। তাদের মতে, সরকার যদি উদ্যোগ নেয়, তবে এই এলাকাকে ঘিরে গড়ে উঠতে পারে সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র। ঈদের সময় ছাড়াও প্রতিদিনই লোকজন ভিড় করছেন এখানে। ইতোমধ্যে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক খিচুড়ির দোকান, হাইওয়ের পাশে রয়েছে উন্নতমানের রেস্টুরেন্ট, আর নদীপাড় জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ভাসমান মুখরোচক খাবারের দোকান।

এদিকে সামনে বর্ষা মৌসুম। ইতোমধ্যে পদ্মায় পানি বাড়তে শুরু করেছে। জেগে ওঠা চরে উঠছে নতুন পানির ছোঁয়া, কিছু চর ইতোমধ্যে তলিয়ে গেছে। ঝকঝকে নীল আকাশের প্রতিবিম্বে পদ্মার পানিতেও পড়েছে নীলাভ আভা। তার সঙ্গে মৃদুমন্দ বাতাস, ঢেউ আর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা পদ্মা সেতুর শৌর্য–সব মিলিয়ে পদ্মার সৌন্দর্য মুগ্ধ করে যে কাউকে। আর এই সৌন্দর্য উপভোগ করতেই প্রতিদিন ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা।

এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।