ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২, ০১ জুলাই ২০২৫, ০৫ মহররম ১৪৪৭

রাজনীতি

তার এলাকায় বাড়ি বা ব্যবসা করতে গেলেই দিতে হয় চাঁদা! 

সাভার করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:৫১, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২১
তার এলাকায় বাড়ি বা ব্যবসা করতে গেলেই দিতে হয় চাঁদা! 

সাভার (ঢাকা): সাভার উপজেলার আশুলিয়া থানার পাথালিয়া ইউনিয়নের পানধোয়া এলাকা। এটি এমন একটি এলাকা, যেখানে বাড়ি নির্মাণ, ছোট-বড় ব্যবসা পরিচালনা অথবা জমি কিনতে গেলে এক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে চাঁদা দিতে হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

আরও অভিযোগ রয়েছে, চাঁদা না দিলেই শুরু হয় লুটপাট, ভাঙচুর ও মারধর। শুধু এতেই ক্ষান্ত হন না সেই নেতা। দলবল নিয়ে দেশীয় অস্ত্রসহ হামলা চালিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়। বিষয়টি প্রায় বাংলা সিনেমার মতই। যেখানে চাঁদা না দিলে কিছুই করা যাবে না। এখানে দিনে-দুপুরে প্রকাশ্যেই চাঁদা দাবি করেন।  

এসব অভিযোগ উঠেছে সাভার উপজেলার পাথালিয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান নয়নের বিরুদ্ধে।  

আশুলিয়া থানায় তার বিরুদ্ধে কয়েকজন অভিযোগ করও অদৃশ্য শক্তির কারণে কোনো কিছুই হয় না নয়নের। এমনকি দলীয়ভাবেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না একাধিক চাঁদাবাজির মামলা ও অস্ত্রসহ মাদক ব্যবসায়ীদের প্রশ্রয় দাতা স্বেচ্ছাসেবক লীগের এ নেতার বিরুদ্ধে।   

আশুলিয়া থানা সূত্রে জানা গেছে, পাথালিয়া ইউনিয়নের পানধোয়া এলাকার আব্দুল কাদেরের ছেলে কামরুল হাসান নয়ন। ২০১৮ সালের ১৬ আগস্ট চাঁদাবাজি ও হত্যার উদ্দেশে জখমসহ ২৭ লক্ষাধিক টাকা লুটের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার প্রধান আসামি তিনি। এ মামলায় তার সঙ্গী ফেরদৌস আলম ও ইউসুফ আলী ছাড়াও অজ্ঞাতনামা আসামি রয়েছেন আরও চার/পাঁচজন। ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর নজরুল ইসলাম নামে এক চা দোকানিকে পিটিয়ে আহত করা ও লুটপাটের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় কামরুল ইসলাম নয়ন ও নীলয় নামে দু’জন আসামি।

এছাড়া চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ২ তারিখে বাড়ি নির্মাণ কাজে ৬০ হাজার টাকা চাঁদা দাবির ঘটনায় নয়নকে প্রধান অভিযুক্ত করে ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়।  

এদিকে আশুলিয়ার পানধোয়া এলাকায় ২০১৪ সালে অস্ত্র ও মাদকসহ রনি মিয়া ও মো. খোকন নামে দুই সন্ত্রাসী গ্রেফতার হয়েছিলেন। যারা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কামরুল ইসলাম নয়নের ডান ও বা হাত হিসেবে পরিচিত। যাদের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

নয়নের কাছে নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী শামিম শেখ জানান, পানধোয়া এলাকায় বাড়ি নির্মাণ করছেন তিনি। বেশ কয়েকদিন ধরেই ৬০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে আসছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নয়ন। তিনি চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় ২ ফেব্রুয়ারি নয়ন তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে বাড়িতে ঢুকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। এতে রাজি না হলে নয়ন ও তার লোকজন শামিমে দুই ছেলে মো. রনি ও ফয়সালকে ধারালো অস্ত্র ও লোহার রড আঘাত করে রক্তাক্ত করেন। তার স্ত্রীকেও বেধরক পিটিয়ে আহত ও লাঞ্ছিত করেন এবং ৬০ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যান নয়ন ও তার সঙ্গীরা। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শামিম শেখ থানায় লিখিত অভিযোগ করলেও পুলিশ নীরব ভূমিকায়। ঘটনার এক সপ্তাহ পার হলেও পুলিশ মামলা নিচ্ছে না।

আরেক ভুক্তভোগী চা দোকানি নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমার কাছে ডেইলি এক পেকেট ফ্রি সিগারেট চায় হেই (নয়ন)। পরে আমি দেই নাই দেহি আমার দোহানু (দোকান) থাকি আমারে ডাইকি হেই অফিসে নিয়া যায়। পরে হের অফিসে গেলে হেই সাটার ফালায় দিয়া কুনু কিছু বোঝার আগেই আমারে বারি মারে। মাতায় আমার রড দিয়া বারি দিছে। আমি দুই হাতে ধরছি বারিডা। পরে আমার হাতে পায়ে রড দিয়া মারছে। বহুদিন হাসপাতালে গেছি, ওষুধ খাইছি। এহুনু (এখনও) আমার পায়ো (পা) ঠিক হয় নাই। মামলাও করছিলাম। কিন্তু হেই (নয়ন) আগেই জামিন নিয়া আয়া পড়ছে।

স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নয়নের হামলার শিকার হয়েছেন ওই এলাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ী কার্তিক চন্দ্র ঘোষ। ২০১৮ সালের ১৫ আগস্ট পানধোয়া বাজার এলাকায় পূর্ণ জুয়েলার্সে ৫০ হাজার টাকা চাঁদার জন্য দিনে-দুপুরে হামলা চালায় নয়ন বাহিনী। দোকানে থাকা দু’জনকে জখম করে লুট করা হয় বিপুল স্বর্ণালঙ্কার। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী কার্তিক। কিন্তু পুলিশের নজর ফাঁকি দিয়ে গ্রেফতার এড়িয়ে জামিনে মুক্ত হন অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নয়ন।

এ বিষয়ে পানধোয়া বাজার সমিতির সভাপতি এরশাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নয়ন মাঝে মধ্যে বাজারের ব্যবসায়ীদের ওপর নির্যাতন চালান। বিভিন্ন সময় তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ভুক্তভোগীসহ স্থানীয় জনগণ মিলে মানববন্ধন করেছি। কিন্তু আমরা কোনো সুফল পাইনি। বরং বারবার তার অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। মূলত পুলিশ ও দলগতভাবে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।

এতো সব অভিযোগের বিষয়ে পাথালিয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান নয়ন বাংলানিউজকে বলেন, আমি এসবের কিছুই জানি না। এখন আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আছে, তারা আমার বিরুদ্ধে এ অপপ্রচার চালাচ্ছেন। আমার এলাকায় রিকশায় চাঁদা উঠাইতো। ওই চাঁদাটা আমি বন্ধ করাইছি। সেটা রিকশাওয়ালাদের ডাইকা বইলেন। কাঁচাবাজারের চাঁদাটা আমি বন্ধ করছি ভাই। আর এসব বিষয়ে ক্ষুব্ধ হয়েই আমার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা মামলা দিছে।

আশুলিয়া থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শহীদুল্লাহ মুন্সী বাংলানিউজকে বলেন, কিছু করলে তো আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো। আমাদের কাছে তো কোনো অভিযোগ আসে নাই। আমরা তো অপরাধীদের কখনও ছাড় দেবো না।

আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, পানধোয়া বাজারে চাঁদার জন্য বাড়ি নির্মাণ কাজে বাধা ও মারধর করে জখমের ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি এখনো আমাদের উপ-পরিদর্শক (এসআই) হারুন তদন্ত করে দেখছেন। আমি তদন্তকারী অফিসারের সঙ্গে কথা বলে দেখছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২১
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।