ঢাকা: বিএনপি আন্দোলনের নামে শতভাগ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।
শনিবার (৩১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের চারটি বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা একটি সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের দিকে যতটুকু এগিয়েছিলাম তা কয়েকদিনের আন্দোলনে ধ্বংস করে দিয়েছে বিএনপি। খালেদা জিয়ার আশেপাশে যারা আছেন তাদের মধ্যে কি দেশপ্রেম নেই? তারা কি দেখছেন না দেশের কী হচ্ছে? এটা কি আন্দোলন না-কী পুরোপুরি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড? তারা যে সহিংস আচরণ করছে তার কোনো উদ্দেশ্য আছে বলে আমি মনে করি না।
তত্ত্বাধায়ক সরকার সম্পর্কে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উদ্দেশ্য ছিল নিরপেক্ষ নির্বাচন করা। সেজন্য রাজনীতির বাইরের লোকদের নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু তারা তাদের মূল লক্ষ্য থেকে দূরে গিয়ে অন্য কাজ করেছেন। তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ধরে রাখতে পারেননি তারা।
অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশে নিরপেক্ষ বলে কোনো লোক নেই, কোনো না কোনো রাজনৈতিক আদর্শে তারা বিশ্বাস করেন। সাংবিধানিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনার কোনো সুযোগ নেই। আর নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা তো প্রধানমন্ত্রী করে দিয়েছেন।
বিশ্বের গণতান্ত্রিক অন্যান্য দেশেও ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন হয়। আমাদের দেশে একটু ব্যতিক্রম হয়েছে। এখানে অন্যান্য দলের সদস্য নিয়েই নির্বাচনের আগে একটি সরকার গঠন করা হয়েছিল। বিএনপিকেও ডাকা হয়েছিল কিন্তু তারা আসেননি।
‘স্মৃতির মণিকোঠায়’ বইয়ের আলোচনা করেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বইটিতে আদর্শ মানুষের কথা বলেছেন লেখক। তাদের কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। যে মানুষগুলো হারিয়ে গেছে তাদের পুনরুজ্জীবনই এ বইয়ের উদ্দেশ্য।
বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ নামে বই সম্পর্কে কথা বলেন অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শুধু রাজনৈতিক নেতাই নন, তিনি দেড় হাজার বছরের বাঙালির আদর্শ চেতনা ধারণ করেছিলেন। এ বইয়ে অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নিজের ঘনিষ্ঠতার কথা তুলে ধরেছেন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের বিশ্বজনমত ও প্রবাসীদের ভূমিকার কথাও রয়েছে এই বইয়ে।
অমর একুশে বইমেলা-২০১৫ উপলক্ষে প্রকাশিত ‘বসবাসের উপযুক্ত বাংলাদেশ চাই’ শিরোনামে বইটির ওপর আলোচনা করেন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত অর্থমন্ত্রীর ১২টি সাক্ষাৎকার স্থান পেয়েছে এ বইয়ে। এসবের মধ্যে তিনি দেশের নানা অসঙ্গতি এবং তা থেকে উত্তরণের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। দল বহির্ভূত ছাত্র রাজনীতি এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের উপকারিতা ইত্যাদি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রীর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে তিনি বলেন, তার সৎ চিন্তা ও সাবলীল জীবনযাপন এবং আবেগী বৈশিষ্ট্য দেখে মনেই হয় না, তিনি একজন রাজনীতিক।
বাংলাদেশের অভ্যুদয় শিরোনামে বইয়ের আলোচনা করতে গিয়ে নূহ-উল-আলম লেলিন বলেন, এই বইয়ে ১৩টি প্রবন্ধ রয়েছে। এর ৮টিতে তিনি বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের কথা বলেছেন এবং বাকী পাঁচটি প্রবন্ধে তিনি নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন। সে অভিজ্ঞতায় দেশের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংকট এবং তা থেকে উত্তরণের দিক নির্দেশনা রয়েছে।
অর্থমন্ত্রীর চারটি বইয়ের ওপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন সাবেক কুটনীতিক মহিউদ্দিন আহমদ। তিনি তার বক্তব্যে চারটি গ্রন্থের আংশিক তথ্য বিভ্রাট এবং আঙ্গিক উপস্থাপনার ত্রুটি নিয়ে কথা বলেন। সেই সঙ্গে বিশ্বস্ত অসংখ্য তথ্য উপস্থাপনের জন্য মন্ত্রীকে অভিন্দন জানান।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান লেখকের স্মৃতির মণিকোঠায় ও বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ দুটি বইয়ের প্রশংসা করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সময় প্রকাশনের সত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ। চারটি বইয়েরই প্রকাশক সময় প্রকাশন।
বাংলাদেশ সময়: ২৩১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১,২০১৫