ঢাকা, সোমবার, ৬ আশ্বিন ১৪৩২, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

রাজনীতি

কর্মীর শরীরে ৪২ কোপ, চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন এ্যানি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩:৫৪, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৫
কর্মীর শরীরে ৪২ কোপ, চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন এ্যানি

প্রায় ৯ বছর আগে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির মিছিলে যাওয়ায় আওয়ামী লীগের বর্বর হামলার শিকার হন লক্ষ্মীপুরের যুবদল কর্মী আব্দুল মান্নান ছুট্টু। সেখানকার আওয়ামী লীগ নেতা ইয়াছিন মিয়াসহ তার লোকজনের ৪২ কোপে ছুট্টু মৃত্যুশয্যায় পতিত হন।

তার বাম হাতের একটি আঙুল কেটে দেয় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। কেটে দেওয়া হয়েছিল ডান পায়ের রগ। মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে সেই কোপের চিহ্নই প্রমাণ করে ঘটনার ভয়াবহতা।

সম্প্রতি স্থানীয় একটি অনলাইন গণমাধ্যমে শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে থাকা ছুট্টুকে নিয়ে ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। সেখানে ছুট্টু নিজেই বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানির কাছে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেওয়ার দাবি জানান।

ভিডিওটি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বিএনপি নেতা এ্যানির নজরে পড়ে। পরে তারেক রহমানের নির্দেশে ছুট্টুর চিকিৎসার দায়িত্ব নেন এ্যানি।

রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিএনপি নেতা এ্যানি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার হাজিরপাড়া ইউনিয়নের মুসলিমাবাদ গ্রামে ছুট্টুর বাড়িতে যান। সেখানে তিনি ছুট্টুর চিকিৎসার দায়িত্ব, ঘর ও বাড়ির রাস্তা নির্মাণ এবং তার ছেলে সাইমুনের (১২) পড়ালেখার দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এ সময় ছুট্টু ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন এ্যানি। এ ছাড়াও ঘটনায় জড়িত আওয়ামী লীগ নেতা ইয়াছিন মিয়াসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে মামলা করার পরমর্শ দেন তিনি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাফুফে সহ-সভাপতি ওয়াহিদ উদ্দীন চৌধুরী হ্যাপি, চন্দ্রগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি এম বেল্লাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক এম ইউছুফ ভূঁইয়া, জেলা কৃষক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি বদরুল ইসলাম শ্যামল, সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল প্রমুখ।

এদিকে বিএনপি নেতা এ্যানিকে কাছ পেয়ে ছুট্টু নিজেই দলীয় স্লোগান তোলেন। তার দাবি, আওয়ামী লীগ নেতা ইয়াছিন মিয়াসহ তার লোকজন তাকে (ছুট্টু) কুপিয়েছে। শেখ হাসিনা ভারত পালিয়েছে। ইয়াছিন দেশেই পালিয়ে আছে, তার বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বিএনপির জন্য রক্ত দিয়েছে, প্রয়োজনে আরও রক্ত দেবে। শেখ হাসিনারও বিচার হতে হবে।

এ্যানিকে ছুট্টু জানান, হাজিরপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের রাজনীতিতে তিনি সক্রিয় ছিলেন। এলাকায় থাকতে না পেরে সিদ্ধিরগঞ্জে সানারপাড় এলাকায় ভাইয়ের বাসায় গিয়ে অবস্থান নেন। ২০১৬ সালে বিএনপির মিছিলে গেলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়াসহ তার লোকজন তাকে আটক করে। সেখানে প্রথমে তার হাতের আঙুল কেটে দেয়। একে একে তার শরীরে উপুর্যপুরি কুপিয়ে মৃত ভেবে তাকে ফেলে রাখে।

এ সময় শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ছুট্টুর চিকিৎসার ভার আমি নিয়েছি। ইতিমধ্যে পিজি হাসপাতাল ও সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে কথা বলেছি। তাকে উন্নত চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যবস্থা করা হবে। তাকে একটি ঘর করে দেওয়া হবে। তার ছেলের পড়ালেখার দায়িত্বও আমি নিয়েছি। তার আর আমাদের একই দাবি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

স্থানীয়রা জানায়, ছুট্টু মুসলিমাবাদ গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে। তার একটি সুন্দর সংসার ছিল। হামলার পর তিনি শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। প্রথমদিকে তার স্ত্রী ও একমাত্র সন্তান পাশে থাকলেও পরবর্তীতে স্ত্রী অন্যত্র চলে যান। সন্তানের দায়িত্বও আর নেননি। সন্তান এখন এতিমখানায় বড় হচ্ছে। পরে তাকে দেখাশোনার জন্য গ্রামের এক প্রবীণ ব্যক্তি ও এক চাচাতো ভাইকে মাসিক ১০ হাজার টাকা বেতনে রেখেছেন তার ভাইয়েরা। ছুট্টু এখনো নিজে খাবার খেতে পারেন না, হাতে তুলে দিতে হয়। কারণ হাতের আঙুলগুলো মুষ্ঠিবদ্ধ করার শক্তি তার নেই। একা উঠে দাঁড়াতেও পারেন না তিনি।

ছুট্টুর ভাই বিল্লাল হোসেন বলেন, ছুট্টু তিন মাস ইউরোপ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিল। ৬ মাস ওই হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করেছে। তার চিকিৎসায় ৪২ লাখ টাকা খরচ করেছি। এরপর বাড়িতে এনেও তাকে বেডে রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ্যানি চৌধুরী বাড়িতে এসে ছুট্টুর চিকিৎসার বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন। ছুট্টু আবারো চিকিৎসা পাবে, এতে আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি তারেক রহমান ও এ্যানি চৌধুরীর প্রতি।

ছুট্টুর ভাই গিয়াস উদ্দিন বলেন, মস্তিষ্কে আঘাতের কারণে ছুট্টু স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারবে না। তখন চিকিৎসকরা বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন। আর্থিক সংকট আর আওয়ামী লীগের লোকজনের কারণে আমরা তা পারিনি। মামলা করতে গেলেও আওয়ামী লীগের লোকজনের ভয়ে পুলিশ তখন মামলা নেয়নি।

এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।