ঢাকা: সংস্কার ও বিচারকে পাশ কাটিয়ে নির্বাচন দিলে, তা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সন্ধ্যায় আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে (কেআইবি) জাতীয় যুবশক্তি আয়োজিত জাতীয় যুব সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।
জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে উল্লেখ করে আখতার হোসেন বলেন, যে কোনো পন্থায় হোক জুলাই সনদের কার্যকারিতা নিশ্চিত করে জুলাই সনদের ভিত্তিতে সামনের নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু সংস্কার এবং বিচারকে পাশ কাটিয়ে নির্বাচন হলে সেই নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে যদি সংস্কারকে বাস্তবায়ন করার জন্য চব্বিশের অভ্যুত্থানের মতো করে আমাদের আবার রাজপথে আসতে হয়, এই জাতীয় যুবশক্তির নেতৃবৃন্দ কি রাজপথে আসতে প্রস্তুত আছে? আপনাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে, যদি সংস্কার নিয়ে কোনো টালবাহানা করা হয়, যদি সংস্কারকে কার্যকর করা না হয়, তাহলে রাজপথ দখলে নিয়ে সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে।
এনসিপির সদস্য সচিব আরও বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে রাজনৈতিক দলগুলো বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে সংস্কার সাধনের জন্য অনেকগুলো বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন অনেকগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তগুলোকে বাস্তবায়ন করা হবে কি না, সেটি নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। আমাদের এত মানুষের জীবনের ভেতর দিয়ে যে সংস্কার প্রস্তাবনাগুলো গৃহীত হলো, সেগুলো যদি বাস্তবায়ন না হয় আমাদের চব্বিশের অভ্যুত্থানের শহীদদের শাহাদাত আর এক বছরের প্রচেষ্টা, দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষা সবকিছু ম্লান হয়ে যাবে। অতএব আমরা আহ্বান করছি, টেবিলের আলোচনাতেই সংস্কার বাস্তবায়নের পথ নিশ্চিত করতে হবে। যদি টেবিলের আলোচনায় সংস্কার বাস্তবায়ন করা না হয়, রাজপথ দখলের প্রস্তুতি নিতে হবে।
‘এই বাংলাদেশে এতগুলো মানুষ জীবন দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে। এর বিনিময়ে আমরা পেতে চেয়েছি ফ্যাসিবাদমুক্ত, ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থামুক্ত এমন একটি বাংলাদেশ যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র থাকবে, জবাবদিহিতা থাকবে, ক্ষমতার ভারসাম্য থাকবে। ’
তিনি আরও বলেন, আবহমানকাল থেকে বাংলাদেশের মানুষেরা ধর্মে ধর্মে কখনো কোনো বিভেদ করেনি। বাংলাদেশের মানুষেরা সম্প্রীতিতে বসবাস করে এসেছে। কিন্তু সময়ে সময়ে আমরা দেখেছি, মুষ্ঠিমেয় কিছু ব্যক্তির কারণে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়েছে। আজকে এখানে সারাদেশের নেতারা আছেন। আপনাদের অন্যতম প্রধান কর্তব্য বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করা। বাংলাদেশের কোথাও যদি কখনো সাম্প্রদায়িক উসকানির মতো ঘটনা ঘটে, জাতীয় যুবশক্তির নেতৃবৃন্দ তৎপর ভূমিকা পালন করে সক্রিয় থেকে যেকোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক উসকানিকে তারা প্রতিহত করবেন।
জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. তারিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে যুব সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম। জাতীয় যুবশক্তির সদস্য সচিব ডা. জাহেদুল ইসলামের সঞ্চালনায় এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ, এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, জাতীয় যুবশক্তির মুখ্য সংগঠক ইঞ্জিনিয়ার ফরহাদ সোহেল, এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব, এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব নাহিদা সারোয়ার নিভা, এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ, জাতীয় যুবশক্তির মুখ্য যুব উন্নয়ন সমন্বয়ক খালেদ মোস্তফা, জাতীয় যুবশক্তির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তুহিন মাহমুদ, জাতীয় যুবশক্তির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব দ্যুতি অরণ্য, বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মঞ্জুর আহসান মোর্শেদ প্রমুখ।
আরও পড়ুন: ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
এসসি/এইচএ/