‘জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের’ দাবিতে রোববার (৩ জুলাই) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জনসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এই জনসমাবেশ থেকে নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার ঘোষণা করবে নতুন এই রাজনৈতিক দলটি।
শনিবার (২ আগস্ট) রাত সাড়ে ১১টার দিকে এনসিপির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এক ভিডিও বার্তায় এই কথা জানান দলটির শীর্ষ নেতারা।
ভিডিও বার্তার শুরুতে দেশবাসীর উদ্দেশে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ২০২৪ সালের ৩ আগস্ট আমরা এক দফার ঘোষণার মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটাতে পেরেছি। কিন্তু আমাদের প্রত্যাশিত নতুন রাষ্ট্র গঠন অর্থাৎ, নতুন বন্দোবস্তের যেই আকাঙ্ক্ষা, যেই প্রতিশ্রুতি আমরা বাংলাদেশকে দিয়েছিলাম, জনগণকে দিয়েছিলাম সেটির যাত্রা এখনো পর্যন্ত সম্পন্ন হয়নি। সেটির জন্য লড়াই এখনো পর্যন্ত আমরা করে যাচ্ছি।
এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেন, আমরা বিগত জুলাই মাসে বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় গেছি। আমরা আমাদের দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা করেছি। বিচার, সংস্কার এবং নতুন সংবিধান- এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে নতুন করে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের জন্য আমরা জনগণের কাছে গেছি। সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা শুনেছি। মাঠ পর্যায়ে দ্বারে দ্বারে গিয়ে মানুষ কী চায়, এই বাংলাদেশকে কীভাবে দেখতে চায়, তাদের সেই কথাগুলো শুনেছি এবং এই অভ্যুত্থানের সময় আমরা এই বাংলাদেশকে নিয়ে যে স্বপ্নগুলো দেখেছিলাম, আমাদের যে আকাঙ্ক্ষাগুলো সেই আকাঙ্ক্ষাগুলো তাদের কাছে তুলে ধরেছি। এই যে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জায়গায়, জেলায় গিয়ে মানুষের যে চাওয়া-পাওয়া-আকাঙ্ক্ষা সেগুলোকে ধারণ করেই আমরা আমাদের ইশতেহার সাজিয়েছি।
ভিডিও বার্তার শেষে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তির দ্বারপ্রান্তে আমরা। আগামীকাল ৩ আগস্ট, আমরা ৩ আগস্ট আবারো শহীদ মিনারে জড়ো হচ্ছি। আমরা নতুন বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কাজ করছি। আমাদের কাছে জুলাইয়ের কোনো সমাপ্তি ছিল না। জুলাই ছিল শুরু। একটি সম্ভাবনার শুরু, আকাঙ্ক্ষার শুরু। এই এক বছর হয়তো আমাদের অনেক অপ্রাপ্তি, অনেক হতাশা রয়েছে। কিন্তু আমরা মনে করি, যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি, যদি আমাদের ভেতরে সেই স্বপ্নের বীজ এখনো থাকে, আমরা আমাদের সে আকাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবো। আমাদের গত এক বছরের অভিজ্ঞতা, এক বছরের সীমাবদ্ধতা সবকিছু মিলেই আমরা সামনে দিনের পথ চলতে চাই।
তিনি আরও বলেন, জুলাই পদযাত্রায় আমাদের যে অভিজ্ঞতা, মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা সবকিছু মিলিয়ে আগামীর যে নতুন বাংলাদেশ সেই নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার পাঠ করতে চাই। জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে গণঅভ্যুত্থানের নেতাদের পক্ষ থেকে আমাদের আগামীর বাংলাদেশ, আগামীর রাষ্ট্রকল্পটি আমরা ঘোষণা করতে চাই।
নাহিদ ইসলাম বলেন, তরুণ প্রজন্ম, বাংলাদেশের মানুষ কী রকম বাংলাদেশ দেখতে চায়, আমাদের বাংলাদেশটা কী রকম হবে, আমরা যেই নাগরিক মর্যাদার বাংলাদেশের কথা বলি, বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের কথা বলি, যে দায় ও দরদের রাজনীতির কথা বলি, আমাদের শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে বাংলাদেশের যে সমস্যাগুলো রয়েছে সেই সমস্যার সমাধানের উপকল্পটি কী হবে আমরা সেই রাজনীতির উপকল্পটি, আমাদের ভবিষ্যৎ কর্মসূচিটি আমরা প্রকাশ করতে চাচ্ছি এবং এর মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের জুলাই পদযাত্রার পরিসমাপ্তি টানতে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, ৩ আগস্ট এক দফার যেই নতুন বন্দোবস্ত এবং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ, সেই দিনটিকে স্মরণ করতে চাচ্ছি। আগামীকাল শহীদ মিনারে বিকেল ৪টায় আমরা জড়ো হচ্ছি। আপনাদের কাছে উদাত্ত আহ্বান, আপনারা ঢাকা আসুন। শহীদ মিনার এসে যোগ দিন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন। আমাদের প্রতি সে আস্থাটি রাখুন। আমরা গণঅভ্যুত্থানে আপনাদের আস্থার প্রতীক হয়েছিলাম। আমরা আপনাদের সে আস্থা ধরে রেখে বাংলাদেশ বিনির্মাণে, জনগণের পক্ষে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমতা এবং নাগরিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের যে লড়াই সে লড়াই চালিয়ে যেতে চাই। আগামীকাল শহীদ মিনারে দেখা হচ্ছে বিকেল ৪টায়।
এসসি/আরবি