ঢাকা: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপির আয়োজিত `গণঅভ্যুত্থান ২০২৪: জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা' শীর্ষক আলোচনা সভা শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) বিকেল ৩টায় ওই কেন্দ্রে এ অনুষ্ঠান শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ভিডিও বার্তার মাধ্যমে অংশ নেবেন।
উদ্বোধনী বক্তব্য দেবেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেবেন। সভাপতিত্ব করছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে জাতীয় নেতাদের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে গুম, খুন ও নিপীড়নের শিকার পরিবারগুলোর সদস্যরা উপস্থিত রয়েছেন।
অনুষ্ঠানটি শুরু হয় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। এরপরই ফ্যাসিবাদী শাসনের ছায়ায় হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনদের স্মৃতি এবং গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের গল্প উঠে আসে মঞ্চে।
এ সময় গুম হওয়া বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন ও ‘মায়ের ডাক’র আহ্বায়ক সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, আমাদের অনেক বাধা অতিক্রম করে আজকে এখানে আসতে হয়েছে। বিগত সময়ে যত গুম-খুন হয়েছে, জুলাইতে আমাদের ছাত্র-জনতা, কৃষক-মজুর সবার আত্মত্যাগের মাধ্যমে এখানে আমরা এসেছি। ভিক্টিমদের পক্ষ থেকে আমাদের দাবি, গুমের মহাকৌশলে যারা যুক্ত ছিলেন, যাদের মদদে আয়নাঘরে আমাদের ভাইদের ধরে নেওয়া হয়েছে এবং নির্যাতন করা হয়েছে, তাদের প্রত্যেকের হত্যার বিচার আমরা চাই। যতদিন আমাদের শরীরে রক্ত আছে, আমরা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আমৃত্যু লড়বো।
আওয়ামীলীগের আমলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের হাতে নিহত বিশ্বজিৎ দাসের বাবা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার ছেলেকে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়েছে, এর বিচার এখনো হয়নি।
বক্তব্য রাখতে গিয়ে বুয়েট ছাত্রলীগের হাতে নিহত শহীদ আবরার ফাহাদের বাবা বলেন, আমার ছেলের হত্যার বিচার আমি এখনো পাইনি। কী অপরাধ ছিল আবরার ফাহাদের? সে দেশের পক্ষে কথা বলায় তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের হত্যাকাণ্ড আর না ঘটে। নতুনভাবে দেশটাকে স্বাধীন করা হয়েছে, এই স্বাধীনতা যেন অব্যাহত থাকে।
আন্দোলনের ঢাকায় প্রথম শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বোন বলেন, আমার ভাই ২৮ জুলাই শহীদ হয়। সে ছিল ঢাকার প্রথম শহীদ। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আমরা যে বিজয় এনেছি, তা আমরা ধরে রাখতে পারছি কি না, তা প্রশ্ন থেকে যায়। জুলাইতে দল-মত নির্বিশেষে প্রতিবাদ করেছিল, কিন্তু এক বছর পর আমার মনে হয় সেই ঐক্য ধরে রাখতে পারছি না। এই বিপ্লবের ফলে আমাদের আশা ছিল নতুন কিছু দেখতে পাবো। স্বৈরাচার হাসিনা যত অপকর্ম করেছে, এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার আমরা দেখতে চাই। এরপর যেন কেউ এমন অপকর্ম না করতে পারে। শহীদরা যে বৈষম্যবিরোধী দেশ চেয়েছিল, সেটা যেন আমরা দেখতে পাই।
গণঅভ্যুত্থানে বুক পেতে পুলিশের গুলিতে শহীদ হওয়া আবু সাঈদের বড় ভাই বলেন, আবু সাঈদ বুক পেতে দেশের সবার সাহস জুগিয়েছিল, তাই ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। কইসঙ্গে তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে শহীদ পরিবারের পাশে থাকার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।
এ ছাড়া গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া অনেকের পরিবারের সদস্যরা এবং আহতরা অভিযোগ করে বলেন, তাদের আন্দোলনে নতুন বাংলাদেশ পেলেও তাদের পরিবারের পাশে অথবা তাদের চিকিৎসায় তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। অন্তর্বর্তী সরকার এবং জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া সমন্বয়কদের কয়েকজনের নামোল্লেখ করে এ সময় শহীদদের পরিবারের সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এসবিডব্লিউ/এএটি