ঢাকা: জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে রূপনগর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক টুটুল মিয়া ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মামুন মিয়ার বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় ২১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় ৫০/৬০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে রাজধানীর রূপনগর আবাসিক এলাকার ১২ নম্বর রোড পশ্চিম পাশের শেষ মাথায় ওই হামলার ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) রূপনগর থানায় এই ঘটনায় শেখ মাহিন আহমেদ বাদী হয়ে মামলা করেন।
আসামিরা হলেন রূপনগর থানা স্বেচ্ছাসেবক দল সাধারণ সম্পাদক টুটুল মিয়া (৪৫), ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. মামুন মিয়া (৪২), মো. সাখাওয়াত হোসেন সুমন (৩০), রূপনগর থানা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. নাইম হোসেন (৩৫), ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইমরান মুন্সি (৬০), মোছা. সাহিদা বেগম (৫৫), রূপনগর থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মো. কাওসার মল্লিক (৩০), মুরাদ (৫৫), যুবদলকর্মী মো. কামাল হোসেন (৩৫), যুবদলকর্মী মো. টুকু মিয়া (৩০), যুবদলকর্মী মো. কান্নু মিয়া (৩০), ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবদল আহ্বায়ক মো. সোহাগ মিয়া (৩০), যুবদল কর্মী মো. সুজন মিয়া (২৫), যুবদল কর্মী মো. ইলিয়াস হোসেন (২৫), যুবদলকর্মী মো. হান্নান হোসেন (২৫), বিএনপি নেতা মো. আশরাফ (৬০), যুবদলকর্মী পানি মনির (৩৫), রূপনগর থানা বিএনপির সদস্য মো. ইউসুফ মাতবার (৫০), মো. শামীম মিয়া (৪০), মো. কদর আলী (৩৫), মো. লাবু মিয়া (২৮) ও অজ্ঞাতনামা ৫০/৬০ জন।
ভুক্তভোগী শেখ মাহিন আহমেদ এজাহারে অভিযোগ করেন, সোমবার (১৪ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে রূপনগর থানাধীন রূপনগর রূপনগর আবাসিক এলাকার ১২ নম্বর রোডের পশ্চিম পাশের শেষ মাথায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন নেতাকর্মী কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীর নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মী অনিককে আটক করে পুলিশের নিকট সোপর্দ করার জন্য থানায় সংবাদ দেয়। সে সময় ১ নম্বর আসামি রূপনগর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক টুটুল মিয়া ও প্রায় অজ্ঞাতনামা ৫০/৬০ জন আসামি মিলে সেখানে এসে ওই ছাত্রলীগের কর্মীকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেন। বিষয়টি নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আসামি টুটুলসহ তার লোকজনের কথা কাটাকাটি ও মারপিটের ঘটনা ঘটে।
মাহিন আহমেদ বলেন, মোবাইল ফোনে বিষয়টি ফারওয়া জামান আমাকে জানালে আমি মোটরসাইকেলযোগে দ্রুত ওই স্থানে উপস্থিত হই। সে সময় আসামি টুটুল আমাকে দেখে বলেন যে, এটাই সেই মাহিন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। তাকে সবাই মারো। এই হুকুম পাওয়ামাত্রই আসামিরাসহ অজ্ঞাতনামা ৫০/৬০ জন দলবদ্ধ হয়ে হাতে লাঠিসোঁটা, ধারালো চাকু, রাম দা, হকিস্টিক, স্ট্যাম্প নিয়ে আমাকে চারদিক হতে ঘিরে ধরে। মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে আমাকে এলোপাতাড়িভাবে মারপিট করে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম করে।
তিনি এজাহারে আরও বলেন, মারামারির এক পর্যায়ে আসামি টুটুল মিয়া হাতে থাকা ধারালো চাকু দিয়ে আমার বাম হাতের কনুইয়ে পরপর তিনটি কোপ মেরে জখম করেন। আসামিদের মারপিটের আঘাতে আমার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হই। আমাকে রক্ষার জন্য আব্দুল্লাহ আল তোহা, ফারওয়া জামান, অরুপ চক্রবর্তী, আশিক মাহমুদ, আব্দুল্লা আল মামুন শুভ, নাঈম হাওলাদার, সাখাওয়াত হোসেন, ফারদিন হাসানগণসহ আরও অনেকে এগিয়ে এলে আসামিরা তাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাদেরও পিটিয়ে জখম করে। ১১ নম্বর আসামি মো. কাল্গু মিয়া চাকু দিয়ে আশিক মাহমুদকে আঘাত করেন। আসামি মো. সাখাওয়াত হোসেন সুমন, টুটুল, হান্নান, মো. কল্লু মিয়া ও ইমরান মুন্সিদের হাতে থাকা ছোরা, লোহার রড, স্ট্যাম্প দিয়ে ফারওয়া জামানকে মেরে তার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করেন। অরুপ চক্রবর্তী, আব্দুল্লাহ আল মামুন ও নাঈম হাওলাদারও আঘাতপ্রাপ্ত হন।
ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী উপস্থিত হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্য নেতা-কর্মীরা আমাকেসহ অন্যদের শহীদ সোহরাওয়াদী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসা নিয়ে থানায় এজাহার দায়ের করার জন্য এলে টুটুল ও মামুনের নেতৃত্বে আসামিরা আবারও থানার নিচতলার সিঁড়িতে আক্রমণ করে সাখাওয়াত হোসেন সজীবকে চাকু দিয়ে তলপেটে আঘাত করে এবং বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সহ-মুখপাত্র ফারদিন হাসানের চোখে ও মাথায় আঘাত করে। যা থানার সিসিটিভি ফুটেজে দৃশ্যমান।
মামলার বিষয় নিশ্চিত করে রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোকাম্মেল হক বলেন, ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। আসামিদের ধরতে আমাদের অভিযান চলমান।
বাংলাদেশ সময়: ২২১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০২৫
এমএমআই/এইচএ/