১৬০ টাকা কেজি ঘুঘনি প্রথম রোজাতেই ক্রেতাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। আর শাহী জিলাপি কিনতে দোকানে মানুষের ভিড় বরবরের মতোই বেশি, বললেন নগরীর ভোজনবাড়ি রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী মো. জুনু চৌধুরী।
তিনি বলেন, ইফতারে পুরান ঢাকার তেহেরি সিলেটে বিক্রি করা হয় আখনি নামে। রোজায় ইফতারের অনুষঙ্গ আখনি বিক্রি হয় সবক’টি হোটেল ও অলিগলিতে। সেই সঙ্গে মামা হালিম ২২০ টাকা কেজি বিক্রি হয় সিলেটের বাজারে।
এসবের পাশাপাশি রয়েছে চিকেন সাসলিক, খাসির লেগ (পা), চিকেন মাসালা, চিকেন লতা কাবাব, রেশমি চিকেন, নার্গিস ও নার্গেট কাবাব। ইফতারের সাধারণ খাবারের পাশাপাশি মুখরোচক এসব খাবার ক্রেতাদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে।
রোজার প্রথম দিনে বাজার ঘুরে সিলেটি খিচুড়িসহ নানা আইটেমের পাশাপাশি পুরান ঢাকার ইফতারির খোঁজ পড়ে দোকানগুলোতে।
নগরীর পালতি রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী তেরা মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, গত দুই/তিন বছর ধরে পুরান ঢাকার ইফতারি সিলেটে বাজার ধরেছে। বিশেষ করে সর্বনিম্ন ১২শ’ টাকা দামে বিক্রি করা হয় ‘বড় বাপের পোলায় খায়’। ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় থাকে এই ইফতার উপকরণ। ঢাকাইয়া স্লোগানটি ধারণ করে নাম দেওয়া হয়েছে আস্ত খাঁসি বা বড় খাসির একাংশ বুনা।
সৌখিন ক্রেতারা আস্ত খাসির উরু দিয়ে তৈরি ইফতারের এই সামগ্রী কিনে থাকেন। তবে সাধারণত দরিদ্র মানুষের হাতের নাগালের বাইরে এই ইফতার সামগ্রীর দাম।
এছাড়া রোজাদারদের তৃপ্ত করতে সিলেটের রেস্তোরাগুলো বাহারি ইফতার সামগ্রী নিয়ে বসেছে এবার। বাসায় ইফতার তৈরি থাকলেও রেস্তোরার বাহারি ইফতার না হলে যেন তৃপ্তি মেটাবার নয়! তাই সিলেটের রেস্টুরেন্টগুলোতে ইফতার কিনতে রোজাদারদের দীর্ঘ লাইর লক্ষ্য করা যায়।
মঙ্গলবার (০৭ মে) রোজার প্রথম দিনে বিকেল হতেই রেস্টুরেন্টগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় করতে দেখা গেছে। রেস্টুরেন্ট ছাড়াও নগরীর আনাচে-কানাচে দোকান ও ফুটপাতে ইফতার সামগ্রী বিক্রি চাঙ্গা হয়ে ওঠেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মঙ্গলবার মাহে রমজানের প্রথম দিন দুপুর থেকেই রেস্তোরাগুলোতে ইফতার সামগ্রী সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এরমধ্যে আস্ত মোরগের রোস্ট, কাবাব, কোয়েল-কবুতর ভুনা, মোরগ পোলাও, পেস্তা বাদামের শরবত, বিফ চাপ, মোরগ মুসাল্লাম, বটি কাবাব, টিকিয়া কাবাব, কোপ্তা, চিকেন কাঠি, শামি কাবাব, শিকের কাবাব, কোয়েল পাখির রোস্ট, কবুতরের রোস্ট, বিফ আখনি, চিকেন ড্রাম, মুরগির আখনি, হালুয়া, হালিম, কাশ্মীরি শরবত, ইসবগুলের ভূষি, পরোটা, দই বুন্দিয়া, দই বড়া, সহ অর্ধশতাধিক জাতের ইফতার সামগ্রী দোকান গুলোতে বিক্রি হচ্ছে।
ডিমের তৈরি নার্গিস কাবাব প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, শলায় গাঁথা চিকেন বল প্রতি ৩ পিস ৫০ টাকা, মাটন লেগ রোস্ট ২৯০ টাকা, বোম্বে মোরগের রোস্ট ৩৬০, বিফ আখনি ২৮০, চিকেন আখনি ২৫০ ও মাটন আখনি ২৮০টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া প্রতিকেজি জিলাপি ১২০-১৬০ টাকা, দইবুন্দিয়া কেজি ২০০, ফিরনি কেজি ২২০, চিকেন পরোটা ছোলা ১৬০ টাকা কেজি। কাবাবের মধ্যে চিকেন রেশমী কাবাব ৬০, চিকেন ফ্রাই ৭০, চিকেন স্টিক পিস ৭০-৯০, চিকেন নার্গেট ৫০-৮০, বিফ জালি কাবাব ২০-৪৫, বিফ স্টিক ৪০-৬০ টাকা ও বাখরখনি ৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত পিস বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া চানা ভুনা কেজি ১২০ টাকা, পিয়াজু , বেগুনি, শাক বড়া ও আলুর চপ প্রতি পিস ৫ টাকা।
মিষ্টি জাতীয় খাবারের মধ্যে দই বড়া, দুই বুন্দিয়া, অন্তত ২০ ধরনের দই ও মিষ্টি জর্দ্দা। দামের দিক থেকে মিষ্টি জর্দ্দা ২৪০ টাকা এবং অন্যগুলো আড়াইশ’ টাকার মধ্যেই বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া ইফতারের ক্ষেত্রে সিলেটের লোকজনের প্রথম পছন্দ পাতলা খিচুড়ি ও ছোলা। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে পাতলা খিচুড়ি জনপ্রিয়। দিন শেষে খালি পেটে পাতলা খিচুড়ি শরীরে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। যে কারণে গ্যাস্ট্রিকের জ্বালাপোড়া রক্ষা পেতে পাতলা খিচুড়ি রোজাদারদের পছন্দের তালিকায় সিলেটে।
ইফতার কিনতে আসা রায়হান আহমদ বলেন, বাজারে ভোগ্য পণ্যের দাম বেশি, তাই ইফতারেরও খানিকটা দাম বেশি। এরপরও কিনতে হবে, এটাই মুখ্য। দামের দিক বিবেচনা করলেতো আর হবে না।
নগরীর কলবাখানি এলাকার বাসিন্দা রাজু আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, বাসায় যতই ইফতার থাকুক, এরপরও কিনে নিতে হয়। দোকানগুলোতে বাহারি ইফতার আইটেম দেখে কিনতেই মন চায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৩ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০১৯
এনইউ/এমজেএফ