ঢাকা, রবিবার, ২৩ ভাদ্র ১৪৩২, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

‘ফণী’ নয়, মেঘনার ভাঙন উৎকণ্ঠায় কমলনগরবাসী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:৫০, মে ৩, ২০১৯
‘ফণী’ নয়, মেঘনার ভাঙন উৎকণ্ঠায় কমলনগরবাসী কমলনগরের মাতাব্বরহাটের নদীর তীর রক্ষা বাঁধ, ছবি: বাংলানিউজ

লক্ষ্মীপুর: অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাবে বেড়েছে মেঘনার পানি, ঢেউয়ের আঘাতে ভাঙছে উপকূল, হুমকির মুখে প্রায় এক কিলোমিটার তীর রক্ষা বাঁধ। তবে, ‘ফণী’ নয়, মেঘনার ভাঙন উৎকণ্ঠায় রয়েছেন লক্ষ্মীপুর কমলনগর উপজেলার মেঘনাপাড়ের বাসিন্দারা।

শুক্রবার (৩ মে) কমলনগরের মাতাব্বরহাটের নদীর তীর রক্ষা বাঁধ এলাকায় দেখা যায়, বারবার ধসে ক্ষতিগ্রস্ত ওই বাঁধের ওপর ঢেউ আচঁড়ে পড়ছে। ভাঙছে আশ-পাশের এলাকা।

ঘুর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাবে ভাঙন বেড়েছে। তীর রক্ষা বাঁধ ভেঙে গেলে সর্বনাশ হবে। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয়দের মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।

ভাঙন কবলিত এলাকাবাসী জানান, ঘূর্ণিঝড়ে গাছপালা-ঘরবাড়ি লণ্ডভণ্ড হলেও ভিটেমাটি থাকে। কিন্তু নদী ভাঙনে সব হারিয়ে যায়। নদীর তীর রক্ষা বাঁধটিকে থাকুক এ প্রার্থনা তাদের।

কমলনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুদ্দিন আজম বলেন, গত দশ বছরে কমলনগরের মেঘনা নদীর ভাঙনে আমাদের পরিবারের শত শত একর জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। একাধিকবার বসতভিটা হারিয়েছি। এখন হারানোর আর কিছু নেই। তবে, নদী তীর রক্ষা বাঁধ ভেঙে গেলে সর্বনাশ হবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে মেঘনাপাড়ের হাজার হাজার পরিবার।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাবে শুক্রবার সকালে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। দুপুর থেকে রোদ-বৃষ্টির লুকোচুরি দেখা দেয়। বিকেলে থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে বাতাস রয়েছে।

মেঘনা উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র সতর্কতায় জনগণকে সচেতন করতে বৃহস্পতিবার (২ মে) থেকে মাইকিং চলছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সদরের মজু চৌধুরীর হাট, রায়পুর কমলনগর ও রামগতি এলাকার নদী তীরবর্তী বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করা হচ্ছে। মেঘনার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ও চরাঞ্চলের মানুষ, গরু, মহিষসহ নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আসার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে আহ্বান করা হচ্ছে। লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশাল নৌপথের সব নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। নদীতে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।

লক্ষ্মীপুরে ‘ফণী’ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জেলা প্রশাসন। এরইমধ্যে ৬৬টি মেডিকেল টিম গঠন, সরকারি বরাদ্দের ৩৭৫ মেট্রিক টন চাল ও দুই হাজার ৫০০ বস্তা শুকনো খাবার ও আট লাখ টাকা মজুদ রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১০০টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ সব পাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

কমলনগর মেঘনা নদীর ভাঙন ভয়াবহ। এখানে ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে রাস্তাঘাট, হাট বাজার, ফসলি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আশ্রয়কেন্দ্রসহ বহু প্রতিষ্ঠান। হুমকির মুখে রয়েছে কমলনগর উপজেলা কমপ্লেক্সসহ সরকারি-বেসরকারি বহু স্থাপনা। ভাঙন পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয়রা বিভিন্ন সময় হরতাল অবরোধ ও মানববন্ধনসহ নানান কর্মসূচির ফলে কমলনগরে এক কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ হয়। নিন্মমানের কাজের কারণে গত দেড় বছরে ৮ বার ধস নামে ওই বাঁধে। ক্ষতিগ্রস্ত ওই বাঁধ ‘ফণী’র প্রভাবে ভেঙে গেলে কমলনগরে সর্বনাশ নেমে আসবে। সেই উৎকণ্ঠায় কমলনগরবাসী।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৪ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১৯
ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।