কোনো দল বা রাজনৈতিক নেতার নাম উল্লেখ না করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, ডিসেম্বরে যারা নির্বাচন করার কথা বলেছে, তারাই এখন নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা নির্বাচন নয়, আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন (পিডিবিএফ) আয়োজিত নবনিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, যারা ডিসেম্বরে নির্বাচন চেয়েছিল, তারা অনেকে নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে। আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে। এটা স্পষ্ট যে তাদের ইচ্ছে ছিল আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে এনে নির্বাচন করানো। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, সেখানে ফ্যাসিবাদীদের অংশগ্রহণ থাকছে না। এজন্য তাদের মাথা নষ্ট হয়ে গেছে।
মব আর রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, গণঅধিকার পরিষদের রাজনৈতিক কর্মসূচিকে মব বলা যাবে না—আমি এর আগেও বলেছি। তারা একটি নিবন্ধিত দল। তাদের কর্মসূচিকে যদি মব বলা হয়, তাহলে বিএনপি বা এনসিপির কর্মসূচিকেও অনেকে মব বলা শুরু করবে। আমাদের রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি মব হতে পারে না। আমাদের পার্থক্যটা বুঝতে হবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, লাশ পোড়ানোর মতো ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এ ধরনের ঘটনাকে সরকার প্রশ্রয় দেবে না। কার দায় বা অবহেলার কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাদের অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।
জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলা সম্পর্কে আসিফ মাহমুদ বলেন, প্রথম হামলাটা জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে হয়েছে। ১৭ বছর তারা ফ্যাসিবাদকে সহযোগিতা করে এসেছিল। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে এ ধরনের রাজনৈতিক ধৃষ্টতা দেখানো এক ধরনের বোকামি। কার সাহস পেয়ে জাতীয় পার্টি এ ধরনের কার্যক্রম করেছে, সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।
এর আগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, বাংলাদেশের প্র্যাকটিস হচ্ছে—যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, তারা তাদের নিকটজনকে নিয়োগ দিয়ে থাকে। আমরা চেষ্টা করছি কোনো নির্দিষ্ট দলের নিয়োগ না দিয়ে বরং স্বচ্ছতার ভিত্তিতে চাকরিতে নিয়োগ দিতে। মেধাবীরা দেশের সম্পদ। এই নিয়োগে কোনো স্বজনপ্রিয়তার অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। কোনো মামা-চাচা বা ঘুষ ছাড়া যারা নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের সময় এসেছে দেশকে কিছু প্রতিদান দেওয়ার।
তিনি বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান শুরু হয়েছিল কর্মসংস্থানের চাহিদা থেকে। সেই প্রাথমিক চাহিদা থেকে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই শুরু। এক বছর পরে যদি দেখি—আমরা বেশি কিছু করতে পারিনি, তবে আমরা চেষ্টা করছি সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের শূন্য পদগুলো পূরণ করতে।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় সচিব মো. ইসমাইল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার সচিব মোহাম্মদ রেজাউল মাকছুদ জাহেদী।
অনুষ্ঠানে রেজাউল মাকছুদ জাহেদী বলেন, আগস্টের পর পাবলিক সার্ভিস ছাড়া এত বড় নিয়োগ আর কোথাও দেওয়া সম্ভব হয়নি। এখানে অতি অল্প সময়ে এই নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। এক হাজার ৬৬৫ জনকে স্বচ্ছতা ও দক্ষতার সঙ্গে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মানুষকে সেবা দিতে হলে আপনাকে সদয় হতে হবে। আমার অনুরোধ থাকবে, মাঠে যাওয়ার পর মাঠের চিত্রটা পরিবর্তন করবেন।
অনুষ্ঠানে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর আবুল বাশার বলেন, নিয়োগপ্রাপ্ত এক হাজার ৬৬৫ জন স্বচ্ছতা ও দক্ষতার মাধ্যমে কাজ করবেন—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
সভাপতির বক্তব্যে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় সচিব মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, আমাদের নির্দেশনা ছিল শূন্য পদে দ্রুততার সঙ্গে নিয়োগ দিতে। আমরা ভাইভার জন্য পাঁচটি বোর্ড গঠন করেছি। এদেশে স্বচ্ছ নিয়োগ দেওয়া সম্ভব—এটা এ নিয়োগের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।
পিডিবিএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান বলেন, বছরের পর বছর ধরে অনিয়ম নিয়মে পরিণত হয়েছিল। ২০২৪ এর পরবর্তী নৈরাজ্য দূর করে এখানে কর্মপরিবেশ ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এখানে অত্যন্ত সততার সঙ্গে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এসএমএকে/এইচএ/