এর মধ্যে রেল লাইন সম্প্রসারণের একটি খবর বাতাসে ভাসতে থাকলে সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের জন্য একটি চক্র প্রকল্প এলাকায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে নির্মাণ করেছে শত শত ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ অবৈধ স্থাপনা। তাদের লক্ষ্য রেললাইন প্রকল্প সম্প্রসারণ করলে এসব স্থাপনার জন্য মোটা অংকের টাকা বাগিয়ে নিতে পারবে।
জানা গেছে, পদ্মাসেতুর সঙ্গে সঙ্গেই দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের প্রত্যাশিত রেললাইন নির্মাণের জন্য ঢাকা-ভাঙ্গা-যশোর রেল সংযোগ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় দেশি-বিদেশিদের কর্মতৎপরতা শুরু হয়েছে বেশ আগেই। এই রেল প্রকল্পকে সম্প্রসারণ করা হবে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে জমি অধিগ্রহণের সম্ভাবনায় প্রকল্প এলাকার মাদারীপুরের শিবচরসহ বিভিন্ন স্থানে নির্মাণ করা হচ্ছে ঘর-বাড়ি, দোকানপাট, লাগানো হচ্ছে গাছের চারাও। জমিতে ঘরবাড়িসহ নানা স্থাপনা দেখিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের পরিকল্পনায় রয়েছে অসাধু একটি চক্র।
জানা গেছে, পদ্মাসেতু হয়ে ঢাকার মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুরের জাজিরা, মাদারীপুরের শিবচর, ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষে ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। তা আজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রেললাইন হবে সিঙ্গেল লাইনে। কেরানীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর রেলস্টেশন, শিবচরে ২টি স্টেশন, যশোর ও ভাঙ্গায় একটি করে জংশন নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও ৩৪টি সেতু, ৯৬টি বক্স কালভার্ট এবং আন্ডারপাস থাকবে এ প্রকল্পে।
বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীতে নির্মিত হবে ২১.৮৪ কিমি. উড়াল সংযোগ সেতু। প্রথম পর্যায়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার জমি অধিগ্রহণ শেষ হয়েছে এবং ক্ষতিপূরণ বিতরণও রয়েছে শেষ পর্যায়ে। মোট ৩৫৮.৪১ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। রেললাইন নির্মাণে উঁচু জমিতে ১২০ ফুট ও নিচু জমিতে ১৫০ ফুট প্রশস্থতায় জমি অধিগ্রহণ করা হয়। গত এক বছর ধরে রেল লাইন নির্মাণের কাজ চলছে দ্রুত গতিতে।
এরই মাঝে গত ২ মাস আগে রেললাইন সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রকল্প এলাকায় মার্কিং করা হয়। এরপরই শুরু হয়েছে শিবচর অংশসহ প্রকল্পর বর্ধিত অংশে শত অবৈধ ঘর বাড়ি দোকানপাট নির্মাণ।
শিবচরের মাদবরচর মোল্লাকান্দি, পোদ্দারচর, কাঁঠালবাড়ি, জাজিরার বিভিন্ন গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ফসলি জমির মাঠে গড়ে উঠছে ঘরবাড়ি, লাগানো হয়েছে গাছ। অধিকাংশ ঘর শূন্য। কেউ থাকে না তাতে। মোটা অংকের টাকা পাওয়ার লোভেই নির্মাণ করা হয়েছে এসব ঘরবাড়ি।
স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, রেললাইন বড় করা হবে। এমন খবর পেয়ে রেল লাইন সংলগ্ন যাদের জমি রয়েছে, তারা নতুন করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করছে। গাছের চারা লাগিয়েছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, রেললাইনের জন্য যখন সরকারি লোকজন এ এলাকায় সীমানা পতাকা লাগিয়েছে তখন থেকেই এখানে ঘর-বাড়ি তুলছে একটি চক্র। স্থানীয়দের পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন এসে জমির মালিকের সঙ্গে সরকারি বিলের টাকা ভাগাভাগির চুক্তি করে বড় বড় ঘর তুলছে।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, বর্তমানে মাদারীপুরে অনেকগুলো উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চলছে। তার মধ্যে রেললাইন প্রকল্প একটি অন্যতম। যখন একটি প্রকল্পের প্রস্তাব আসে তখন আমাদের অফিস থেকে বা যে কোনো মাধ্যমে জমির মালিকরা তথ্যটি জানতে পারে। তখনি এ অবৈধ ঘরবাড়ি, স্থাপনা তৈরির প্রবণতা শুরু হয়। তবে কেউ যেন অসদুপায়ে সরকারি টাকা লোপাট করতে না পারে এ ব্যাপারে আমরা সতর্ক রয়েছি এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৩ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০১৯
এসএইচ