যশোর শহরের রং মিস্ত্রি ও ড্রাইভার রাজিচ হত্যাকাণ্ডের পর গ্রেফতার সেলিম পারভেজের ১৬৪ ধারায় আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বিষয়টি তুলে ধরে এ তথ্য জানায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিকেশন (পিবিআই)। গত ৯ মার্চ রাজিচ খুন হওয়ার পর ১১ মার্চ তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা যশোর পিবিআইয়ের উপ-পরিদর্শক (এসআই) শরিফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, গত ৯ মার্চ রাজিচ উদ্দিন খুন হওয়ার ঘটনায় সেলিম পারভেজ ইকবালকে গ্রেফতারের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদে এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটিত হয়েছে।
পরিবার ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালে দিকে যশোর শহরের নিরিবিলি এলাকার মৃত আমিন উদ্দিনের ছেলে রং মিস্ত্রি ও ড্রাইভার রাজিচ ফেনসিডিলের একটি মামলায় যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে যায়। জেলের ভেতরেই পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব হয় অভয়নগরের ওহাব হত্যা মামলায় বন্দি ভোলার লালমোহনের চরপাড়ার সেলিম পারভেজ ইকবালের সঙ্গে।
২০০৫ সালে তারা কারাগার থেকে বেরিয়ে দুই বন্ধু মিলে পুরাতন গাড়ি কিনে মেরামত করে তা বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন। রাজিচের মূলধন না থাকায় ব্যবসার লভ্যাংশের ৪০ শতাংশ তিনি এবং ৬০ শতাংশ সেলিম পারভেজ ইকবাল পাবেন চুক্তিতে ব্যবসা চলতে থাকে। এভাবে দীর্ঘ ১৪ বছর যশোর শহরে ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন দু’জন। দেখভাল করছিলেন রাজিচ।
কিন্তু এ বছর রাজিচ ব্যবসার একটি প্রাইভেটকার গোপনে এক লাখ টাকা বিক্রি করে আত্মসাৎ করেন। বিষয়টি জানতে পেরে সেলিম পারভেজ ইকবাল ক্ষুব্ধ হন এবং রাজিচকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
গত ৯ মার্চ সেলিম পারভেজ ঢাকা থেকে একা মাওয়া হয়ে খুলনায় যান। এরপর নিজের একটি মোটরসাইকেল নিয়ে ফুলতলা উপজেলা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে রাজিচকে ফোন করেন। পুনরায় গাড়ি কিনে দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে রাজিচকে যশোর থেকে ডেকে ফুলতলায় নিয়ে যান। ওইদিন সন্ধ্যায় রাজিচকে চেচুড়িয়া পালবাড়ির একটি চায়ের দোকানে নিয়ে যান সেলিম। এরপর রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজিচকে মণিরামপুরের কাপালিয়া ব্রিজের উপরে নিয়ে যান সেলিম। একপর্যায়ে রাজিচকে পেছন থেকে ধাক্কা দেন সেলিম। এতে ব্রিজের লোহার নাটের অংশের সঙ্গে রাজিচের মাথা আঘাতের কারণে মারাত্মকভাবে জখম হয়। তখন সে অবস্থায় তাকে মুক্তেশ্বরী নদীতে ফেলে দেন সেলিম। এরপর তিনি মোটরসাইকেল চালিয়ে ফুলতলা হয়ে খুলনায় গিয়ে মোটরসাইকেল রেখে রাতেই ঢাকা ফিরে যান।
রাজিচ রাতে বাসায় না ফেরায় তার স্ত্রী শামছুরনাহার বুলবুলি স্বামীর বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার সেলিম পারভেজকে ফোন করে খোঁজ নেন। তখন সেলিম জানান, রাজিচের সঙ্গে দুদিন আগে ফোনে কথা হয়েছিল, কিন্তু তিনি (রাজিচ) এখন কোথায়, তা তার জানা নেই।
এরপর বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি করেও রাজিচকে পাওয়া যায়নি। পরে ১১ মার্চ এলাকাবাসীর মাধ্যমে খোঁজ পেয়ে মনিরামপুর থানাধীন নেহালপুর গ্রামের টেকেরঘাট ব্রিজের অদূরে মহাশ্মশানের পাশের মুক্তেশ্বরী নদীর পাড় থেকে রাজিচের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় স্ত্রী বুলবুলি অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
আদালতের নির্দেশে আলোচিত এ হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সে অনুযায়ী তদন্ত করে সেলিমকে ৩০ এপ্রিল রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সেলিম হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন। এরপর ১ মে আসামি সেলিমকে যশোর আদালতে হাজির করলে বিচারকের কাছে তিনি হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২৩৭ ঘণ্টা, মে ০২, ২০১৯
ইউজি/এইচএ/