জেলার সর্বত্র ঝড় আতঙ্কে থাকলেও এ তিন উপজেলার মানুষ বেশি বিপদের আশঙ্কা করছে। মোংলা বন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত ঘোষণার পর থেকে বাগেরহাটের তিন উপজেলার মানুষ নিজেদের জানমাল রক্ষায় ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন।
এদিকে শরণখোলা উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ৩৫/১ পোল্ডারের বিভিন্ন জায়গায় কয়েকশ মিটার ভাঙনের ফলে অনিশ্চয়তায় বসবাস করছে সাউথখালী ইউনিয়নের বগী, উত্তর সাউথখালী, সাতঘর, দক্ষিণ সাউথখালী, তাফালবাড়ী ও গাবতলা গ্রামের বাসিন্দারা।
>> ফণী: সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিলেও ঝুঁকিতে ঢালচরের মানুষ
বেড়িবাঁধের পাশে থাকা শরণখোলা উপজেলার সাতঘর গ্রামের স্বামীহারা তহমিনা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, দু’টি সন্তান নিয়ে বাঁধের পাশে থাকি। ঝড়ের কথা শুনলেই ভয় করে। ঘরের মায়া ছেড়ে কোথাও যেতে পারি না। তবে বিপদ সংকেত বৃদ্ধি পেলে জীবন বাঁচাতে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠবে যাবো।
একই এলাকার রহিমা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, শুনেছি এ ঘূর্ণিঝড় সিডরের থেকে ভয়ঙ্কর। এখন ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোথায় যাবো, কোথায় থাকব, চিন্তায় পড়েছি।
আব্দুস ছাত্তার হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, বাঁধ ভেঙে এমনিতেই জোয়ারের সময় পানি ওঠে ঘরে। ঝড়ের কথা শুনে খুব আতঙ্কে আছি আমরা। সরকার বাঁধের দিকে নজর দিলে এ এলাকার মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারতো।
অন্যদিকে পাকা ধান, পান, আখ ও সবজি রক্ষার্থে মরণপণ চেষ্টা করছেন কৃষকরা। জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কায় মৎস্য খামারের পাশে অতিরিক্ত নেটের বেড়া দিয়েছেন মৎস্য চাষিরা।
সদর উপজেলার ভুটে মারি গ্রামের কৃষক আবুল বাশার বাংলানিউজকে বলেন, ঝড়ের খবর শুনে সবাই মিলে কাঁচা-পাকা ধান কেটে ঘরে তোলার চেষ্টা করছি। বউ ছেলে-মেয়ে সবাই মিলে রাতেও ধান কাটছি।
ওই সব এলাকার শেখ দেলোয়ার হোসেন, ছাব্বির রহমান, ইসরফিল আমিনসহ আরও অনেকে বলেন, এতো বড় ঘূর্ণিঝড়ের কথা কখনও শুনিনি। এখন আমাদের জমিতে পাকা ধান, ঘেরে মাছ, ভিটায় সবজি কোনটা রেখে কোনটা রক্ষা করবো। সঙ্গে রয়েছে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ফণীর জন্য সুন্দরবনের শেলারচর ও কছিখালী টহল ফাঁড়ির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পার্শ্ববর্তী ফাঁড়িতে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুন্দরবন
পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান।
তিনি বলেন, সুন্দরবন রক্ষার্থে বনের অভ্যন্তরে আমাদের ৮৩টি অফিসে ৮ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী রেয়েছেন। তারা অস্ত্র, গোলাবারুদ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি নিয়ে বনের অভ্যন্তরে অবস্থান করবেন।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার নুরুল হুদা বাংলানিউজকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দর জেটি ও আউটার অ্যাংকরেজে অবস্থানরত ১৪টি জাহাজ নিরাপদে রয়েছে। পণ্য বোঝাই ও খালাসের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
তবে ফণী মোকাবিলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসন দফায় দফায় সভা জেলা সদর ও উপজেলাগুলোতে কন্ট্রোলরুম ও মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশপাশি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যসহ জনপ্রতিনিধিদের সাধারণ মানুষদের প্রতি খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবিলায় ২৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্র এবং সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। জেলা সদরসহ নয়টি উপজেলায় একটি করে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে এবং ৭৫টি ইউনিয়নে ৭৫টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিলসহ রেড ক্রিসেন্ট, ফায়ার সার্ভিস ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কয়েক শত স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসবের পাশাপাশি জনসাধারণকে সচেতন করার জন্য জেলার সর্বত্র মাইকিং করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪১ ঘণ্টা, মে ০২, ২০১৯
জিপি