এভাবেই বলছিলেন খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য বেলাল হোসেন।
বৃহস্পতিবার (২ মে) দুপুরে সরেজমিনে গেলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ১৪/১ ফোল্ডারে গোলখালী গ্রামে কপোতাক্ষ নদের মোহনায় ওয়াপদা বেড়িবাঁধ খুবই নড়বড়ে।
ইউপি সদস্য বেলাল জানান, উপকূলীয় উপজেলাগুলোতে মাইকিং করা হচ্ছে। তবে কোনো মানুষ নিরাপদে আশ্রয়ে এখনও যাননি।

আবহাওয়া অধিদফতরের এমনআশঙ্কায়, আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সিডর-আইলা কবলিত খুলনার কয়রা, পাইকগাছা, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি, বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা, মোংলা উপজেলার লাখো মানুষ। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ছোবলে ব্যাপক প্রাণহানি ও সম্পদহানিরও আশঙ্কা করছেন এসব মানুষ।
উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে আসতে মাইকিং করছেন রেড ক্রিসেন্ট এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির (সিপিসি) কর্মীরা। এছাড়া এ নিয়ে বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জরুরি সভা ডাকা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব শুক্রবার (০৩ মে) সকালে খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় শুরু হতে পারে। আর শুক্রবার সন্ধ্যা নাগাদ খুলনা ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় পৌঁছাতে পারে ‘ফণী’।
ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার দুরুল হুদা দুপুরে বাংলানিউজকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বন্দরে অবস্থানরত বিদেশি জাহাজসহ নৌযানগুলোকে সতর্কতাবস্থায় থাকার নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে বন্দরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে খুলনা জেলা প্রশাসন। ফণী’র মোকাবিলায় খুলনার ২৪২টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
খুলনার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, খুলনার তিন উপকূলীয় উপজেলা কয়রায় ১২৫০ ,দাকোপে ১১৩৫ ও পাইকগাছায় ১ হাজার স্বেচ্ছাসেবকসহ প্রায় সাড়ে তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি জেলার সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি এবং ৯টি উপজেলায় নয়টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। স্থানীয় লোকজনকে সতর্ক করতে উপকূলীয় উপজেলাগুলোতে মাইকিং করা হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় ১১৪ টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ মোকাবেলার জন্য জেলা প্রশাসন, খুলনা ও উপজেলা পর্যায়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। কন্ট্রোল রুমের নম্বরগুলো হচ্ছে-
জেলা প্রশাসন, খুলনা: ০৪১২৮৩০০৫১, উপজেলা প্রশাসন: বটিয়াঘাটা: ০৪০২২-৫৬০৪৯, ফুলতলা: ০১৭১৬৭৭১২৮১, দাকোপ:০৪০২৩-৫৬০৬২,০১৯১৭১৭৩০৬৯, কয়রা: ০৪০২৬৫৬০৪৭, ০১৭০০৭১৭০০৮, ডুমুরিয়া: ০১৭৩০৯৯৬২৬৯, ০১৭১১৪৪৮৯৬১, ০৪০২৫৫৬১১, দিঘলিয়া: ০৪১-৮৯০১৭৮, ০১৭১২২৫০৪৮৭, পাইকগাছা: ০৪০২৭৫৬০০১, রূপসা: ০১৭১৯৪৫৭৮০৫,০১৭৪৭৬০৬০৬০, তেরখাদা: ০১৭৯৪৪৯২১৫৭ ও ০১৭১৭৯১৬৭৯৮।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০১ ঘণ্টা, মে ০২, ২০১৯
এমআরএম/এমএ