যদিও কারখানা আইন অনুযায়ী কোনো বাণিজ্যিক ভবনের নিচে গোডাউন ও ছাদ বন্ধ রেখে গোডাউন করার কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু কল্যাণপুরের সেই ভবনের মালিক কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছেন না।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রাজধানীর কল্যাণপুরের মিরপুর রোডে অবস্থিত ২৪/ক ওই ভবনটি। ভবনটির মালিক ইঞ্জিনিয়ার মাহতাব উদ্দিন। ভবনে জরুরি বর্হিগমনে প্রশস্ত সিঁড়িও নেই।
লিফটেরও করুণ অবস্থা। ভবনটি বাণিজ্যিক কাম কমার্শিয়াল হিসেবে তৈরি করলেও পুরো ভবনজুড়েই কারখানা ও অফিস। ভবনটির নিচের পার্কিং জোনে তেল, চিনি ও গ্যাসের গোডাউন হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। ভবনের দোতলায় সোনালী ব্যাংক কল্যাণপুর শাখা, আরএফএলের তরল পদার্থ, ইলেক্ট্রনিকের গোডাউন, তিনতলায় অ্যামব্রয়ডারি মেশিন, চারতলায় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি, পাঁচ ও ছয়তলায় ফাইন ক্র্যাফট ও ক্যামলেট ফ্যাশন গার্মেন্টস, ৭, ৮ ও নয় তলায় আরএফএলের ভারী মেশিন, ১০ তলায় ছাদ বন্ধ করে ফায়ার চুলা গোডাউন হিসেবে ভাড়া দিয়েছে মালিক।
ছাদে তরল পদার্থ ও ভারী মেশিন এবং নিচতলায় গ্যাস সিলিন্ডারের গোডাউন থাকায় প্রতিনিয়ত মৃত্যু ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছেন এসব লোক। ভবনটিতে গ্যাসের অবৈধ সংযোগও রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। ভবনে এসব প্রতিষ্ঠানের ৮ শতাধিক শ্রমিক কাজ করেন বলে জানা গেছে।
নিশাত নামে এক গার্মেন্টস কর্মী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত মনের মধ্যে ভয় নিয়েই কাজ করি। কখন যে আগুন লাগে বা অতিরিক্ত বোঝাইয়ে ভবন ধসে পড়ে, এটা একটা ভয় কাজ করে মনে।
শ্রমিকরা বলছেন, প্রতিদিন মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেও তাদের সমস্যা বা উদ্বেগ তুলে ধরার কোনো জায়গা নেই। গৃহকর্মে নিয়োজিত শ্রমিকদেরও চোখবুঁজে অনেক নির্যাতন সহ্য করতে হয়।
ভবনটিতে অবস্থিত ফাইন ক্র্যাফট লিমিটেডের সাবেক জিএম মো. সোহেল বাংলানিউজকে বলেন, ভবনটি আমার কাছে মৃত্যুকূপ মনে হয়েছিল। তাই বাধ্য হয়েই আমি চাকরি ছেড়ে দিয়েছি।
শুধু সোহেল নন, তার মতো অনেকে চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন বলে জানা গেছে।
ফাইন ক্র্যাফটের স্বত্বাধিকারী পারভেজ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আসলে মনের মধ্যে অজানা আতঙ্ক কাজ করে। সেটা নিয়েই আমরা কাজ করি। কিন্তু তাদের কী করার আছে বলেও প্রশ্ন রাখেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভবনের মালিক ইঞ্জিনিয়ার মাহতাব উদ্দিনের সঙ্গে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করে সাংবাদিক পরিচয় শুনে তিনি কথা বলতে পারবেন না বলে জানান।
বাংলাদেশ সময়: ০০০৮ ঘণ্টা, মে ০১, ২০১৯
টিএম/এএটি