ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২, ১২ আগস্ট ২০২৫, ১৭ সফর ১৪৪৭

জাতীয়

‘তুই তো অনেক ভালো ছবি তুলিস, আমার একটা ছবি তুলে দে’

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬:১৭, মার্চ ১৯, ২০১৯
‘তুই তো অনেক ভালো ছবি তুলিস, আমার একটা ছবি তুলে দে’

খাগড়াছড়ি: ‘তুই তো অনেক ভালো ছবি তুলিস। পোশাক আর অস্ত্র হাতে আমার একটা ছবি তুলে দে। কবে আবার অস্ত্র ধরতে পারবো জানি না।’ বাড়ি ফেরার আগ মুহূর্তে ছেলের কাছে ঠিক এমনিভাবে ছবি তোলার আবদার করেছিলেন রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত আনসার সদস্য মিহির কান্তি দত্ত (৪২)। কেঁদে কেঁদে বাবার সেই কথাগুলো বলছিলেন ছেলে পিয়াল দত্ত। কে জানতো, এটিই ছেলের কাছে বাবার শেষ চাওয়া হবে। মিহিরের সেই ছবি এখন শুধুই স্মৃতি। 

পিয়াল নিজেও বাবার সঙ্গে আনসার সদস্য হিসেবে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার কংলাক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেন। তাদের সঙ্গে ছিলেন কাকি (চাচী) লাকী দত্ত।

দায়িত্বে এসে একই গাড়িতে করে সবাই মিলে রওনা দিলেও পিয়াল ও তার কাকি বাঘাইহাট বাজারে নেমে যান। সেখান থেকে তারা পিয়ালের মোটরসাইকেলে করে ফেরেন। অপর দিকে অস্ত্র ও নির্বাচনী সরঞ্জাম জমা দেওয়ার জন্য অন্যদের সঙ্গে মিহির কান্তি যান বাঘাইছড়ি।
 
পিয়াল বাংলানিউজকে বলেন, আমি, বাবা ও কাকিমা একসঙ্গে আনসার সদস্য হিসেবে কংলাকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করি। সারাদিন ভোটগ্রহণ ও গণনা শেষে আমরা বাড়ি ফেরার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এসময় বাবা আমাকে বলে ‘তুইতো অনেক ভালো ছবি তুলিস। পোশাক আর অস্ত্র হাতে আমার একটা ছবি তুলে দে। কবে আবার অস্ত্র ধরতে পারবো জানি না। ’
 
‘এসময় আমি বাবার বেশ কয়েকটি ছবি তুলে দিই। পরে নির্বাচনী সরঞ্জাম নিয়ে সবাই মিলে রওনা দিই। পথে মাচাং থেকে মাচালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের আরেকটি চাঁদের গাড়ি যুক্ত হয়। ’ 

তিনি বলেন, পথিমধ্যে আমি বাঘাইহাট বাজারে নেমে যাই। সেখানে আগে থেকে আমার মোটরসাইকেলটি রাখা ছিল। আমি আর আমার কাকিমা মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফিরে আসি। বাঘাইছড়িতে সরঞ্জাম বুঝিয়ে দেওয়ার পরের দিন বাবার বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু আমাদের ছেড়ে একেবারে না ফেরার দেশে চলে গেছেন বাবা। ঘটনার সময় অন্য এক আনসার সদস্যসহ বাবা চাঁদের গাড়ির ছাদে বসা ছিলেন।
 
মিহির কান্তি দত্ত বাঘাইছড়ি উপজেলার বঙ্গলতলী ইউনিয়নের করাঙ্গাতলী বাজারের বাসিন্দা।  

সন্ধ্যায় দীঘিনালা-বাঘাইছড়ি সড়কের নয় মাইল নামক এলাকায় নির্বাচনী দায়িত্ব পালন শেষে ফেরার পথে অস্ত্রধারীদের ব্রাস্টফায়ারে সাতজন নিহত হন। এসময় আহত হন ২৬ জন। নিহতরা হলেন- সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার আমিন হোসেন, মো. তৈয়ব আলী, আনসার সদস্য আল আমিন, বিলকিছ, মিহির কান্তি দত্ত, জাহানারা বেগম ও পথচারী মন্টু চাকমা।  
 
আহতদের মধ্যে ১১ জনকে হেলিকপ্টারে করে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে পাঠানো হয়। অন্যদের স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।  
 
এদিকে, এ ঘটনায় একে অন্যকে দায়ী করছে পাহাড়ের আঞ্চলিক দলগুলো।
 
বাংলাদেশ সময়: ০২১৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৯
এডি/টিএম/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।