নির্দিষ্ট সময়ে মধ্যে সরকারি চাকুরেদের পে কমিশনের রিপোর্ট জমা দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, পে কমিশনের প্রতিবেদন তৈরি করার সময় দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও মূল্যস্ফীতির বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ে পে কমিশনের সভাপতি সাবেক অর্থসচিব ও পল্লী কর্ম—সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খানের নেতৃত্বে কমিশনের প্রতিনিধিদল অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় অর্থ উপদেষ্টা তাদের এসব কথা বলেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন। এ সময় কমিশনের অন্যান্য সদস্য ছাড়াও অর্থ সচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে গত ২৭ জুলাই ২২ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিশনটি গঠন করা হয়। এই কশিমনকে আগামী ছয় মাসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এ সময় ধরলে কমিশনকে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে জাকির আহমেদ খান গণমাধ্যমকে জানান, সাক্ষাৎটি ছিল সম্পূর্ণ সৌজন্যমূলক। তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলার নেই। আগামী কয়েকদিন মধ্যে আমরা কমিশনের পূর্ণাঙ্গ বৈঠকে বসবো।
জানা গেছে, কমিশনের সদস্যরা অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে পরিচিত হোন। এ সময় কমিশনের সভাপতি জাকির আহমেদ খান বলেন, কয়েকদিনের মধ্যে কমিশনের আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু করা হবে। তারা চেষ্টা করবেন আন্তরিকতার সঙ্গে প্রতিবেদন তৈরি করার।
নতুন এই কমিশন সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠান, সরকারি মঞ্জুরিপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো সুপারিশ করবে।
এই কমিশন বিদ্যমান বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পর্যালোচনা করে সুপারিশমালা জমা দেবে। কমিশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার তারিখ থেকে ৬ মাসের মধ্যে সরকারের কাছে এই সুপারিশমালা জমা দিতে হবে। সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ধারা ১৫ এ দেওয়া ক্ষমতাবলে জাতীয় বেতনস্কেলের আওতাভুক্ত প্রজাতন্ত্রের সব শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য জাতীয় বেতন কমিশন, ২০২৫ গঠন করা হয়।
সভাপতি (পূর্ণকালীন): সাবেক অর্থ সচিব জাকির আহমেদ খান। সদস্য (পূর্ণকালীন) হলেন- সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ আলী খান, সাবেক মহানিয়ন্ত্রক মো. মোসলেম উদ্দীন, সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. ফজলুল করিম। সদস্য (খণ্ডকালীন): সাবেক মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক আহমেদ আতাউল হাকিম, সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জাহিদ হোসাইন, সাবেক সচিব ড. জিশান আরা আরাফুন্নেসা, মেজর জেনারেল (অব.) এ আই এম মোস্তফা রেজা নূর, সাবেক ডেপুটি গভর্নর ড. মো. হাবিবুর রহমান, তহমিনা বেগম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মাকছুদুর রহমান সরকার, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, এনিমেল ব্রিডিং অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগ ড. মোহাম্মদ সামছুল আলম ভূঁঞা, বুয়েটের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ড. এ.কে.এম. মাসুদ, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আতিকুল হক, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক এ. কে. এনামুল হক, সশস্ত্র বাহিনীর একজন প্রতিনিধি (প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত), আইন ও বিচার বিভাগের একজন প্রতিনিধি, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি, জননিরাপত্তা বিভাগের একজন প্রতিনিধি, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট, অতিরিক্ত সচিব (প্রবিধি, বাস্তবায়ন, আইন ও রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠান, অতিরিক্ত সচিব (বাস্তবায়ন) অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়, সরকারের সচিব/অতিরিক্ত সচিব।
কমিশনের কার্যপরিধির বিষয়ে বলা হয়েছে, সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠান, সরকারি মজুরিপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্প প্রতিষ্টানসমূহের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বিদ্যামান বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পর্যালোচনাপূর্বক কমিশস সুপারিশমালা প্রণয়ন করবেন। এই সুপারিশের মধ্যে থাকবে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের জন্য একটি সময়োপযোগী ও যথোপুক্ত বেতন কাঠামো নির্ধারণ। বিশেষায়িত চাকরিজীবীদের বেতন কাঠামো নির্ধারণ, ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, বর্তমানে ২০১৫ সালের পে স্কেল অনুসারে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন—ভাতা পান। বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন প্রায় ১৫ লাখ। এর বাইরে বিভিন্ন বাহিনী ও স্বায়াত্তশাসিত সংস্থার চাকরিজীবীদের ধরলে এই সংখ্যা ২১ লাখ বলে জানা গেছে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আসার পর থেকে সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয় ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে। চলতি ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার জন্য একটি কমিটি কাজ শুরু করে। এ নিয়ে বিরূপ সমালোচনা শুরু হলে সরকার পরে পিছিয়ে যায়। পরে চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বাজেট সংক্ষিপ্তসার অনুযায়ী, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন বাবদ ১৩ হাজার ৪৮৩ কোটি ও কর্মচারীদের বেতন বাবদ ৩০ হাজার ৪৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তাদের ভাতা বাবদ বরাদ্দ ৪১ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। বেতন-ভাতায় মোট বরাদ্দ করা হয়েছে ৮৪ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য মোট বরাদ্দ ছিল ৮২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। সে হিসাবে বেড়েছে ১ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা।
এনডি