ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের শাল্যে এবং মাছখোলা গ্রাম ও সাতক্ষীরা পৌরসভার বদ্দীপুর কলোনির কোল ঘেঁষা খাল দু’টি মিলেছে বেতনা নদীতে।
কিন্তু বেতনার সংযোগ মুখে থাকা স্লুইস গেট দু’টি অকেজো হয়ে পড়ায় বন্ধ হয়ে গেছে পানি প্রবাহ।

আর এতে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শাল্যে, মাছখোলা নতুন বাজার, ঝুঁটিতলা, আখড়াখোলা ও মুকুন্দপুর এবং সাতক্ষীরা পৌরসভার বদ্দীপুর কলোনি, রাজার বাগান, পুরাতন সাতক্ষীরা, আলিয়া মাদ্রাসা পাড়া, কাটিয়াসহ ২০টিরও বেশি গ্রামের মানুষ।
স্থানীয়রা জানান, এখন বর্ষা মৌসুমে সাতক্ষীরা পৌরসভা ও সদর উপজেলার ২০টিরও বেশি গ্রামের পানি ডায়ের বিল ও ক্যামের বিলের খাল দিয়ে বেতনা নদীতে পড়ে। কিন্তু খাল দু’টি দখল হয়ে গত কয়েক বছর ধরে অস্তিত্ব সংকেট পড়েছে। এছাড়া নাব্য সংকটের কারণে বেতনা নদীর তলদেশ উঁচু হয়ে যাওয়ায় তা পানি ধারণের ক্ষমতা অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছে। একই সঙ্গে গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে নদী ও খাল দু’টির সংযোগ স্লুইস গেট দু’টি। প্রতিবছর ডুবছে গোটা এলাকা। বছরের ছয় থেকে আট মাস জলাবদ্ধ থাকে বেতনা পাড়ের গ্রামগুলো।
সরেজমিন দেখা যায়, দামারপোতা স্লুইস গেট বন্ধ থাকায় নদীর সঙ্গে ডায়ের বিলের খালের সংযোগ বিচ্ছিন্ন। খালের মধ্যেই কিছুদূর পরপর বাঁধ দেওয়া। ভরাট হয়ে গেছে অনেকটা। ভরাট হওয়া অংশ দখল করে ধান চাষ করছে প্রভাবশালীরা। কেউ বা চাষ করছে মাছ। এতে দিন দিন অস্তিত্ব হারাচ্ছে ডায়ের বিলের খাল।
ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের মাছখোলা গ্রামের রফিকুল মোড়ল বাংলানিউজকে জানান, আগে খাল দু’টিতে জোয়ার-ভাটা হতো। বছর দশেক আগেও খালটি ২০-২৫ হাত চওড়া ছিল। তখন খালে চিংড়ি, গুলি, টেংরা, বেলি, ভেটকি, পুঁটিসহ বিভিন্ন ধরনের মাছ পাওয়া যেত। মাছ ধরেও অনেকে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন খালে পানিই নেই। মাছ তো দূরের কথা। আর প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশিত হতে না পেরে ডুবছে গোটা এলাকা।
মাছখোলা গ্রামের কাশেম সরদার বাংলানিউজকে জানান, মাছখোলা, বদ্দীপুর কলোনি, নাথপাড়া, শেখপাড়া, কুলিনপাড়া, হরিনগরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বৃষ্টির পানি ডায়ের বিলের খাল দিয়ে বেতনা নদীতে গিয়ে পড়ে। কিন্তু শুধুমাত্র বর্ষা মৌসুম ছাড়া বাকি সময়ে নদীর সঙ্গে খালের সংযোগ না থাকায় খালের চেয়ে নদী উঁচু হয়ে গেছে। তাই এখন আর বিলের পানি খাল দিয়ে তেমন সরে না। এজন্য বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, যা বন্যায় রূপ নেয়। এতে এলাকার কৃষি-প্রকৃতি-পরিবেশ ধ্বংসের মুখে পতিত হচ্ছে।
আব্দুল আজিজ বাংলানিউজকে জানান, খালে নদীর পানি ওঠা-নামা করার জন্য দামারপোতায় একটি গেট রয়েছে। কিন্তু চর জমে সেটি পানি নিষ্কাশনের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শুধু খাল নয়, ডায়ের বিলে বড় বড় বাঁধ দিয়ে মৎস্য ঘের করায় গত চার-পাঁচ বছর ধরে বর্ষায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে বন্যার কবলে পড়তে হচ্ছে হাজার হাজার মানুষকে।
এদিকে, বর্ষা মৌসুমে সদর উপজেলার শাল্যে, মাছখোলা নতুন বাজার, ঝুঁটিতলা, আখড়াখোলা ও মুকুন্দপুরসহ প্রায় ২০টিরও বেশি গ্রামের পানি ক্যামের বিলের খাল দিয়ে বেতনা নদীতে পড়ে। কিন্তু বিল ছাড়া নদী উঁচু হওয়ায় ও স্লুইস গেট মাটির নিচে থাকায় পানি নিষ্কাশনের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে খালটি। খালের মুখে বাঁধ-পাটা দিয়ে মৎস্য চাষ করছেন প্রভাবশালীরা। খালের প্রথমভাগ উঁচু, মধ্যভাগ নিচু। খাল ও নদীর সংযোগের জন্য স্থাপিত শাল্যে স্লুইস গেটটি মাটির নিচে। ফলে তা দিন দিন অকার্যকর হয়ে পড়ছে।
স্থানীয় জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, খাল দখল করে যে যার মতো ব্যবহার করছে। খালে প্রবাহ না থাকলে তা তো মরবেই। কিন্তু এসব দেখার কেউ নেই। বর্ষা মৌসুমে সব ডুবে গেলে তখন হইচই শুরু হয়।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবুল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, স্লুইস গেট দু’টি সংস্কার করা হচ্ছে। কিছুদিন পর নতুন গেট লাগিয়ে পানি প্রবাহের জন্য খুলে দেওয়া হবে। বর্ষা মৌসুমের আগেই খাল দু’টি উন্মুক্ত করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৮
এসআই