গত বুধবার (১১ এপ্রিল) সীমানা প্রাচীর নির্মানে আদালত নিষেধাজ্ঞা দিলেও সোমবার (১৬ এপ্রিল) স্থানীয় বন বিভাগের ভালুকা রেঞ্জের হরিববাড়ি বিট অফিসের মেহেরাবাড়ি মৌজার তিনটি দাগে প্রাচীর নির্মাণ কাজ করতে দেখা যায়।
স্থানীয় বন বিভাগ বারবার উপজেলা প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করলেও তারাও কর্ণপাত করছে না বলে অভিযোগ।
উপজেলার মেহেরাবাড়ি মৌজায় তিনটি দাগে প্রায় ৬০ একর জমি রয়েছে স্থানীয় বন বিভাগের হরিববাড়ি বিট অফিসের। এর মধ্যে ৬৩ নম্বর দাগে ১০ একর ৭২ শতাংশ, ৬৯ নম্বর দাগে ২৭ একর ৫০ শতাংশ ও ৭৪ নম্বর দাগে ২৩ একর ৪৩ শতাংশ বন বিভাগের গেজেটভুক্ত জমি রয়েছে।
স্থানীয় বন বিভাগের দায়িত্বশীল একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, স্থানীয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বাদশা মিয়ার চক্র ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে বনের জমি ইজারা নেয়।
চক্রটি সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ৬৯ নম্বর দাগে ৫ একর, ৬৩ নম্বর দাগে ১ একর ৪০ শতাংশ ও ৭৪ নম্বর দাগে ২.২৫ একর জমি ইজারা নিয়ে প্রায় দু’সপ্তাহ যাবত সীমানা চিহ্নিত না করেই সেখানে প্রাচীর নির্মাণ কাজ শুরু করে।
একই সূত্র জানায়, স্থানীয় সন্ত্রাসীদের ভাড়া করে চক্রটি দিন-রাত সেখানে শোডাউন করে এবং বন বিভাগের কর্মকর্তাদের হুমকি-ধমকি প্রদর্শন করে।
পরবর্তীতে স্থানীয় বন বিভাগের হবিরবাড়ি বিট কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান, রেঞ্জ কর্মকর্তা ও বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বাদী হয়ে জেলা যুগ্ম জজ তৃতীয় আদালতে দখলবাজ বাদশা মিয়া চক্রের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।
বুধবার (১১ এপ্রিল) মামলার আসামি বাদশা মিয়াকে আদালতে হাজির না হওয়া পর্যন্ত সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন আদালত।
স্থানীয় বন কর্মকর্তারা অভিযোগ করে বলেন, আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে প্রভাবশালী ওই চক্র স্থানীয় সন্ত্রাসীদের সহায়তায় সীমানা প্রাচীর নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে।
স্থানীয় নেজারাত শাখার কর্মচারী সামাদ আদালতের নির্দেশনা সংক্রান্ত নোটিশ নিয়ে বৃহস্পতিবার (১২ এপ্রিল) সকালে মেহেরাবাড়ি মৌজায় যান। কিন্তু তারা নোটিশ গ্রহণ না করে সুকৌশলে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ চালিয়ে যায়।
পরে অবৈধভাবে বনের জমিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের অভিযোগে প্রভাবশালী বাদশা মিয়া চক্রের দুই সদস্যকে সোমবার (১৬ এপ্রিল) ভোরে অভিযান চালিয়ে আটক করে আদালতে সোপর্দ করে স্থানীয় বন বিভাগ। আটকরা হলেন- সেলিম (৪০) ও অন্তর হোসেন (৩৫)।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভালুকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ কামাল বাংলানিউজকে জানান, বন বিভাগের কর্মকর্তারা আমাকে জানিয়েছেন আদালত থেকে বাদশা মিয়াকে কাজ বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে আদালতের নির্দেশনার কোনো চিঠি এখনো হাতে পাইনি। হাতে পেলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একই ব্যাপারে ভালুকা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন অর রশিদ বাংলানিউজকে জানান, জমিজমা সংক্রান্ত আদালতের অর্ডার পালন করে ইউএনও এবং এসিল্যান্ড। আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক তারা আমাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বললে আমরা সেই মোতাবেক কাজ করবো।
এসব অভিযোগের বিষয়ে স্থানীয় বাদশা মিয়া’র সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এর আগে গত শুক্রবার (০৬ এপ্রিল) রাতে ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ি মৌজার ৬৪১ নম্বর দাগে অবৈধভাবে বনের জায়গা দখল করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করার সময় স্থানীয় বিট কর্মকর্তা সেখানে অভিযান চালিয়ে রাব্বুল আল আমিন (২৫) ও মো. আল আমিন (২০) নামে দুজনকে আটক করে।
পরদিন শনিবার (০৭ এপ্রিল) দুপুরে তাদের ময়মনসিংহ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হয়। এ অভিযানে একটি মোটরসাইকেল ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণের বিভিন্ন সামগ্রী জব্দ করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৮
এমএএএম/এমজেএফ