সিটি কর্পোরেশনের অনেক ওয়ার্ডে খুলনা ওয়াসা এখনও সুপেয় পানি সরবরাহ করতে পারেনি। গ্রীষ্মের শুরুতেই পানিস্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নগরবাসী খাবার ও গোসল করার পানিটুকু পর্যন্ত পাচ্ছেন না।
পানি সঙ্কটকে কাজে লাগিয়ে এক নাম্বার ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অফিসের পূর্বের গভীর নলকূপের পানি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন অনেকে।
এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ নাম্বার ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, যারা একটু স্বচ্ছল মানুষ তারা বিভিন্ন কোম্পানির পানি কিনে খাচ্ছেন।
১ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম পালপাড়ার অধিবাসী হাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, বাড়িতে যে নলকূপ আছে সেটাতে পানি উঠলেও লবণ ও আয়রনের প্রবল উপস্থিতি থাকায় সে পানি পান করা যায় না। তারা এই পানি পান করেনও না। অগত্যা পানি কিনে খাচ্ছেন নিয়মিত।
এ সকল এলাকার গুটিকয় গভীর নলকূপ এলাকার মানুষের চাহিদা মেটানোর শেষ ভরসাস্থল। কিন্তু তা দিয়ে তো আর পুরো চাহিদা মেটে না!
দৌলতপুর বীণাপাণি স্কুলের পশ্চিম পাশের গভীর নলকূপে ভিড় লেগে থাকে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। পাবলা ও দেয়ানার অনেক মানুষ এ নলকূপের পানিকে সুপেয় পানি হিসাবে গ্রহণ করেছেন।
পাবলার স্থানীয় বাসিন্দা গোলেবাহার জানান, এটা পাঁচ নাম্বার ওয়ার্ড হলেও অন্য ওয়ার্ড ও এলাকার অনেক মানুষ এখান থেকে খাবার পানি নিয়ে যান। একটুখানি অপেক্ষা করুন, নামাজ শেষ হলেই দেখবেন পানি নিতে আসা মানুষের লম্বা লাইন পড়ে গেছে।
মঙ্গলবার (১০ এপ্রিল) রাতে গিয়ে দেখা যায়, মহেশ্বরপাশা কমিউনিটি সেন্টার ও এক নাম্বার ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অফিসের পুব দিকের গভীর নলকূপের সামনে দেখা যায় মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। ড্রাম, পটহাতে একের পর এক মানুষ আসছেন।
তিন নাম্বার ওয়ার্ডের নয়াপাড়ার বাসিন্দা লিটন বলেন, দুই কিলোমিটার দূর থেকে কুড়ি টাকা খরচ করে পানি নিতে আসি।
এ নলকূপের পানি বাজার থেকে কেনা পানির চেয়ে ভাল এমন দাবি ইব্রাহিমের।
কালিবাড়ীর বাসিন্দা শুভ জানান, পাত্র ভাল হলে এক মাসেও পানির স্বাদে কোনো পরিবর্তন হয় না।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত থাকে এ নলকূপ। পানির গুণগত মানের কারণে মহেশ্বেরপাশার গোলকধাম, পশ্চিমপাড়া, পালপাড়া, সাহাপাড়া, শিকারি মোড়সহ বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার মানুষের চাহিদার যোগান দিচ্ছে এ নলকূপ।
সেলিম উদ্দিন ও মান্দার নামের দু’জন ভ্যানচালকের সাথে কথা হয়। তারা জানান, প্রত্যেকের ১৫-২০ জন করে গ্রাহক আছে।
কুড়ি লিটারের জার কুড়ি টাকায় গ্রাহকের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসেন তারা। সাধারণত একেকজন গ্রাহকের সপ্তাহে ১০০ লিটার পানির চাহিদা আছে বলে জানান তারা।
পালপাড়ার বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা এনায়েত হোসেন মঙ্গলবার রাতে বাংলানিউজকে বলেন, রান্না, ধোয়ামোছাসহ জরুরি কাজ কিছুই ঠিকভাবে হচ্ছে না পানির অভাবে। কোনো কোনো এলাকায় মসজিদেও পানির সংকট তৈরি হয়েছে। মুসল্লিরা অজু করতে গিয়েও সমস্যায় পড়ছেন।
তিনি জানান, পানির এই তীব্র সঙ্কটে হাজারও নলকূপে পানি না থাকলেও এক নাম্বার ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অফিসের পুব দিকের গভীর নলকূপটিতে পানি রয়েছে। যা দিয়ে কোনোমতে এ এলাকার মানুষ চাহিদা মেটাচ্ছে। অনেকে এই নলকূপের পানি বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, ওয়াসার এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, খুলনা মহানগরে প্রতিদিনের পানির চাহিদা ২৪-২৫ কোটি লিটার। এর মধ্যে ওয়াসা ৮৫টি উৎপাদক নলকূপের মাধ্যমে প্রতিদিন মাত্র ১১ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করে। বাকিটুকু নগরবাসী হস্তচালিত নলকূপ এবং নলকূপে পাম্প লাগিয়ে নিজস্বভাবে উত্তোলন করে থাকেন। চাহিদার শতভাগ পানিই ভূগর্ভ থেকে উত্তোলন করা হয়। প্রতিবছরই গ্রীষ্ম মওসুমে মহানগরে পানির সংকট দেখা দেয়। তবে এবারের চলমান পানিসংকট অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১ , ২০১৮
এমআরএম/জেএম