মঙ্গলবার (২৭ মার্চ) সকাল ৬টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শেখ মোস্তফা খোকন।
সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সোমবার (২৬ মার্চ) দিবাগত রাত ২টার দিকে পেটে ব্যথা নিয়ে সদর হাসপাতালে আসে বিউটি আক্তার (২২) নামে এক রোগী। তখন বিউটি চিকিৎসককে জানায় তার পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছে এবং তিনি পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তার পেটে জমজ দু’টি সন্তান রয়েছে। তখন হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক শুভ্রদেব সাহা ওষুধ লিখে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে দেন।
ভর্তির পর রোগীকে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কোনো বিছানাপত্র ছাড়াই শক্ত একটি সিটের ওপর রোগীকে রাখা হয়। সে অবস্থায় ভর্তি অনুযায়ী হাসপাতালে দায়িত্বরত নার্স নাসিমা আক্তার রোগীর শরীরে ইনজেকশন ও স্যালাইন পুশ করেন। এরপর মঙ্গলবার ভোর রাতের দিকে রোগীর ব্যথা আরো বেড়ে যায় এবং রোগী চিৎকার করতে থাকে। এ সময় রোগীর স্বজনরা বারবার বিষয়টি নার্সকে জানালেও তারা রোগীর কাছে আসেনি বলে অভিযোগ করেন। পরে সকাল ৬টার দিকে নার্স নাসিমা রোগীর জমজ দু’টি বাচ্চা ডেলিভারি করান। ভেডিভারি হওয়ার পরপরই বাচ্চা দু’টি মারা যায়। এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন রোগীর স্বজনরা।
মঙ্গলবার দুপুরে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, রোগী বিউটি বিছানাপত্র ছাড়াই একটি শক্ত সিটের ওপর শুয়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছে। পাশেই মৃত সন্তান দু’টিকে পলিথিন ব্যাগে রাখা হয়েছে। ভর্তি হওয়ার পর থেকে সে ওই শক্ত সিটের ওপরই চিকিৎসা দেয়া হয় এবং ওই সিটের ওপরই তার বাচ্চা ডেলিভারি করানো হয়। দুপুর পর্যন্ত ওই শক্ত সিটের ওপর ব্যথায় কাতরালেও তাকে ভালো কোনো সিটে নেয়া হয়নি। পরে এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তড়িগড়ি করে রোগীকে ভালো একটি সিটে নেয়া হয় এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হয়।
এ সময় বিউটি বলেন, আমি ব্যথার চিকিৎসা করতে হাসপাতালে এসেছি। ডাক্তার এবং নার্সকে বলেছি, আমি ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। পেটে আমার দু’টি জমজ সন্তান আছে। তারা চিকিৎসা দেয়ার পর আমার ব্যথা আরও বেড়ে যায় এবং সকালে ডেলিভারি করানো হয়।
তিনি আরো বলেন, আমাকে বিছানাপত্র, বালিশ কিছুই দেয়া হয়নি। শক্ত একটি সিটের ওপর সারারাত ব্যথায় ছটছট করেছি। এ সিটের ওপরই নার্স আমার পেট চেপে বাচ্চা বের করেছে।
এ বিষয়ে হাসপাতালের দায়িত্বরত নার্স নাসিমা বলেন, ভর্তি করানোর পর চিকিৎসকের দেয়া ওষুধপত্র রোগীকে দেয়া হয়েছে। রোগী আমাকে বলেছে, তিনি পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। সেক্ষেত্রে ডেলিভারি হওয়ার কথা ছিল না। ভোরে হাসপাতালের এক স্টাফ এসে আমাকে বললো, বাচ্চা ডেলিভারি হয়ে যাবে। তখন আমি গিয়ে দেখি একটি বাচ্চার মাথা বের হয়ে আসছে। তখন আমি পেটে চাপ দিয়ে জমজ দু’টি বাচ্চা ডেলিভারি করে দেই। ডেলিভারি হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই বাচ্চা দু’টি মারা যায়। কি কারণে ডেলিভারি হলো তা চিকিৎসক ভালো বলতে পারবে।
এ বিষয়ে ডা. শুভদেব সাহার বক্তব্য জানার জন্য সদর হাসপাতালে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ রয়েছে।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শেখ মোহাম্মদ মোস্তফা খোকন বলেন, পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা রোগীর ডেলিভারি হয়ে বাচ্চা মারা যাওয়া দুঃখজনক। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত করা হবে। তদন্তে ভুল চিকিৎসা বা নার্সের কোনো গাফিলতি প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৮
আরবি/