ঢাকা, শুক্রবার, ৭ ভাদ্র ১৪৩২, ২২ আগস্ট ২০২৫, ২৭ সফর ১৪৪৭

জাতীয়

দেয়ালজুড়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬:০১, মার্চ ২৬, ২০১৮
দেয়ালজুড়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ছবি। ছবি: হোসাইন মোহাম্মদ সাগর

ঢাকা: স্বাধীন বাংলাদেশের রক্তাক্ত জন্ম-ইতিহাসের সাক্ষী ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।  ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ এখান থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার মন্ত্র শুনিয়েছিলেন বাঙালি জাতিকে।

আর স্বাধীনতার ইতিহাসকে বুকে ধারণ করেই এ উদ্যানে ২০১৬ সালের ২৬ মার্চ যাত্রা শুরু করে স্বাধীনতা জাদুঘর।

জাদুঘরের পুরো জায়গাজুড়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন সময়ের ছবি।

মাঝখানে রয়েছে একটি ফোয়ারা। এটি নেমে এসেছে মাটির উপরিভাগ থেকে। স্বাধীনতা জাদুঘরের প্রবেশপথ।  ছবি: হোসাইন মোহাম্মদ সাগরএছাড়া প্রবেশের সময় ভেতর থেকে আসা হালকা আলো দেখে মনে হবে যেন কোনো গহীন সুড়ঙ্গ পথে যাওয়া হচ্ছে। আসলে এ জাদুঘরটি তৈরিই করা হয়েছে এমনভাবে। এ জাদুঘরটির অন্যতম বৈশিষ্ট্যই হলো এর স্থাপত্যশৈলী।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিখা চিরন্তনের পাশ দিয়ে যেখানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নামের বিশাল টাওয়ারটি নির্মিত, তার ঠিক নিচেই এ জাদুঘরের অবস্থান। ওপরে প্লাজা চত্বরে মাটির ফলকে মুক্তিযুদ্ধের নকশা, আর নিচের অংশে মূল জাদুঘর। দেয়ালজুড়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি।  ছবি: হোসাইন মোহাম্মদ সাগরপ্রবেশপথ ওপর থেকে প্রসারিত হয়ে গেছে নিচের দিকে। মাটির নিচে এ জাদুঘরটির বিশাল অংশ ফাঁকা জায়গা। আর সেখানেই স্থান পেয়েছে মুঘল আমল থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ের ছবি।

এ জাদুঘরে ১৪৪টি প্যানেলে বাঙালি ও বাংলাদেশি জাতিসত্ত্বার স্বাধীনতার ইতিহাস আলোকচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে তিনটি অংশে। যা জানান দেবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে। এর মধ্যে প্রথম অংশে আছে, বাংলা ভাষার উৎপত্তি, বাংলার উৎপত্তি ও স্বাধীনতার জন্য বিভিন্ন সময়কার আন্দোলন। এটি শেষ হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ছবি দিয়ে।

একাত্তরের নির্যাতন আর হত্যাযজ্ঞসহ ভয়াবহ দিনগুলোর ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে জাদুঘরের দ্বিতীয় অংশটি। অন্ধকার এ কুঠুরির নাম দেয়া হয়েছে ‘কালো অধ্যায়’। এর পাশেই রয়েছে ফোয়ারা। ওপর থেকে নেমে আসা এ ফোয়ারাটি স্বাধীনতা যুদ্ধে লাখো শহীদের মায়েদের অশ্রুকেই যেনো নির্দেশ করে। আত্মসমর্পণের দলিলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সেই সময়ের পূর্বাঞ্চল কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমীর আবদুল্লাহ খান নিয়াজীর স্বাক্ষরের ছবি।  ছবি: হোসাইন মোহাম্মদ সাগরলড়াই, সংগ্রাম, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, অপারেশন, আন্তর্জাতিক সাড়া আর বিজয়ের ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে তৃতীয় অংশ। এটি শেষ হয়েছে বাঙালির বিজয় অর্জনের ছবির মধ্য দিয়ে। এ অংশে স্থান পেয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সেই সময়ের পূর্বাঞ্চল কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমীর আবদুল্লাহ খান নিয়াজী যে টেবিলে বসে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন, তার আদলে তৈরি একটি টেবিলও।

জাদুঘরে কথা হয় চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আবিদা ইমরোজের সঙ্গে। মায়ের হাত ধরে ঘুরে ঘুরে মনোযোগ দিয়ে সে দেখছিলো জাদুঘরের নিদর্শনগুলো। কথা হলে আবিদা বলে, জাদুঘরে এসে বেশ ভালো লাগছে। স্বাধীনতা সম্পর্কে জানতে পারছি অনেক কিছু। ভাষা আন্দোলনের ছবি।  ছবি: হোসাইন মোহাম্মদ সাগরজাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বলেন, জাদুঘরটি আরও সমৃদ্ধ করতে ভারত থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বেশকিছু নিদর্শন আনার প্রক্রিয়া চলছে। আশা করছি, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সেগুলো ঢাকায় আনা যাবে। এর মধ্যে থাকছে যুদ্ধ ট্যাংক, কামান, গোলা-বারুদ ও যুদ্ধের কাজে ব্যবহার করা নানান সামগ্রী।

শনি থেকে বুধবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে জাদুঘরটির দরজা। প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা। বন্ধ বৃহস্পতিবার ও সরকারি ছুটির দিনগুলোতে। শুক্র ও শনিবার স্বাধীনতা জাদুঘরের মিলনায়তনে বিনা টিকিটে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র দেখানো হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১২০১ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৮
এইচএমএস/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।