রাজশাহী: রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বিগত পরিষদের মেয়াদে মহানগর এলাকায় প্রায় ১৫ কিলোমিটার ফুটপাত তৈরি করা হয়েছিলো। আগামীতে তা ৩০ কিলোমিটারে উন্নীত হওয়ার কথাও রয়েছে।
পথচারীদের নিরাপদ চলাচলের উদ্দেশে ফুটপাত তৈরি করা হলেও এগুলোর বেশিরভাগই ব্যবহার হচ্ছে মালামাল রাখার কাজে। ফলে দুর্ঘটনা এড়াতে কেউ যদি রাজশাহী মহানগরীর ফুটপাত ব্যবহার করতে চান, তবে সেটি পথচারীর জন্য হবে আরও ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ সেখানে হাঁটতে গিয়ে পড়ে যাওয়ার ভয় বেশি। আর পড়তে গিয়ে পায়ের সঙ্গে কিছু বেঁধে ক্ষতি হলে জরিমানার অর্থও গুণতে হবে।
রাজশাহী মহানগরীর ব্যস্ততম এলাকা আলুপট্টি, কুমারপাড়া, সাহেব বাজার, জিরোপয়েন্ট, মণিচত্বর, সোনাদীঘির মোড়, গণকপাড়া, লক্ষ্মীপুর, শিরোইল বাসটার্মিনালসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে দেখা গেছে সবখানে প্রায় একই অবস্থা। ফুটপাতে হাঁটার উপায় নেই। ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের দাপটে সাধারণ মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। ফুটপাথ ছেড়ে তারা রাস্তা দিয়েই হাঁটছেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেট থেকে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে তালাইমারি হয়ে আলুপট্টি পর্যন্ত ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের রাস্তার দু’পাশের ফুটপাত, আলুপট্টি থেকে মহানগর আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসের সামনে দিয়ে সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট হয়ে মনিচত্বর থেকে রাজশাহী কলেজ পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশের ফুটপাতে গড়ে ওঠেছে ভ্রাম্যমাণ বিভিন্ন দোকানও।
আবার মনিচত্বর থেকে বিভিন্ন বইয়ের দোকান হয়ে সোনাদীঘির মোড়ের সামনে দিয়ে নগর ভবনের মোড় পর্যন্ত, সাহেব বাজার থেকে গণকপাড়ার সামনে দিয়ে অলকার মোড়ের সামনে দিয়ে নিউ মাকের্ট পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশের ফুটপাতে অস্থায়ীভাবে গড়ে ওঠেছে বিভিন্ন দোকান। আর তালাইমারি শহীদ মিনার মোড় থেকে ভদ্রা স্মৃতি অম্লান মোড় হয়ে রেল স্টেশন ফুটপাতে গড়ে ওঠেছে হকারদের দোকান।
গৌরহাঙ্গা রেলগেট থেকে নগর ভবনের সামনে দিয়ে কাদিরগঞ্জের গ্রেটাররোড হয়ে বর্ণালী পর্যন্ত রাস্তার দুইপাশের ফুটপাতে ফার্নিচারের দোকানের আসবাবপত্রসহ অন্যান্য দোকানের জিনিসপত্র রাখা হয়েছে। মহানগরীর এসব ফুটপাতে চলতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের। দেখার কেউ নেই।
মহানগরীর পিএন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ফারহানা দিশার মা দিলারা জামান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতিদিন স্কুল থেকে মেয়েকে নেওয়ার জন্য সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট হয়ে আসতে হয়। কিন্তু দু’পাশের ফুটপাত থাকলেও হাঁটার উপায় নেই। বিভিন্ন শো-রুমের ফ্রিজ, ফ্যান, মোটরসাইকেল, সোফার ফোম ইত্যাদি মালামাল দিয়ে ফুটপাত সাজিয়ে রাখা হয়। প্রশাসন সব কিছু দেখেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তাদের অবৈধ কাজটি এখন বৈধ হয়ে গেছে।
ফুটপাত দিয়ে যদি পথচারীরা হাঁটতেই না পারে তাহলে তা রাখার প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র সিনিয়র সহকারী কমিশনার (সদর) ইফতে খায়ের আলম বলেন, ফুটপাতে মাঝে-মধ্যেই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা দোকান উচ্ছেদ করা হয়। ফুপাতের ওপর থেকে মালামাল সরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু দেখা যায়, অভিযান চালানোর ২/৪ দিন পর আবারও দখল শুরু হয়। এজন্য তাদের আভিযানও চলমান আছে।
প্রতিমাসেই পুলিশ অভিযান চালায়। আগামীতেও তা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান পুলিশের এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক জানান, গত মাসেই ফুটপাতগুলো উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু অভিযানের কয়েক দিন পরই তারা আবার বসছে। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনসচেতনতা তৈরি না হলে স্থায়ীভাবে এর সমাধান আসবে না। তবে ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে সিটি করপোরেশনের অভিযান প্রতিমাসেই চলবে বলেও জানান এ কর্মাকর্তাও।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৬
এসএস/ওএইচ/এমজেএফ